অপমান সইতে না পেরে প্রতিবন্ধী যুবকের আত্মহত্যা
- আপডেটের সময় : ১১:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০১৯
- / ৮৮১ টাইম ভিউ
গ্রাম্য আদালতে সালিশ বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের রায়ে এক অসহায় প্রতিবন্ধী পরিবারকে চোর সাজিয়ে জরিমানা ও মারধর করার অপমান সইতে না পেরে ইছরাইল আলী (২৮) নামে এক প্রতিবন্ধী যুবক আত্মহত্যা করেছে।
এ ঘটনায় প্রতিবন্ধী যুবকের পিতা আছদ আলী আজ মঙ্গলবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে ৩ জনের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
থানার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া পৌরসভার মধ্যমনসুর গ্রামের আছদ আলীর পুত্র প্রতিবন্ধী ইছরাইল আলী পৌর শহরের মনসুর সাইনবোর্ড এলাকায় চায়ের দোকানের ব্যবসা করতেন। একই এলাকার সামছুল ইসলাম চৌধুরী পাবেলের পরিবারের সাথে ইছরাইল আলী ও তার পিতা আছদ আলীর ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় সামছুল ইসলাম কোথাও বেড়াতে যেতে তার বাসার চাবি ইছরাইল আলী বা আছদ আলীর কাছে রেখে যেতেন। এরই ধারাবাহিকতায় এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে সামছুল ইসলাম তার বাসার চাবি ইছরাইলের কাছে দিয়ে অন্যত্র বেড়াতে যান। ইছরাইল আলী রাতে তার পিতা আছদ আলীর কাছে সামছুল ইসলামের বাসার চাবি দিয়ে জানায় ওই বাসায় ঘুমাবার জন্য সামছুল ইসলাম বলে গেছেন। আছদ আলী রাতে সামছুল ইসলাম এর বাসায় ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখতে পান ঘরের সমস্ত রুমে কাপড়-চোপড় এলোমেলো ও ড্রয়ারের কাচের গ্লাস ভাঙা। রান্নাঘরের কাঠের দরজা ভাঙা। হতভম্ব আছদ আলী আশপাশের লোকজন ও বাসার মালিক সামছুল ইসলামকে জানান।
সামছুল ইসলাম বাসায় এসে চুরি হয়েছে দেখে আছদ আলী ও তার ছেলে ইছরাইল চুরি করেছে বলে গালিগালাজ করে তাদের আত্মীয় কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালামকে জানায়। চেয়ারম্যানের নির্দেশে আছদ আলী তার প্রতিবন্ধী পুত্র ইছরাইল আলী ও ছোট ছেলে রায়হান আলীকে অভিযুক্ত করে কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর কাছে বিচার প্রার্থী হোন সামছুল ইসলাম।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে এপ্রিলের ২৫ তারিখ চেয়ারম্যান ছালাম এর অফিস কক্ষে সালিশ বৈঠক বসে। বৈঠকে চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা পিতা-পুত্রকে চোর আখ্যায়িত করে এক সপ্তাহের মধ্যে সামছুল ইসলামকে ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার রায় দেন। সময় মতো টাকা পরিশোধ না করায় চেয়ারম্যান ছালাম আবারো নোটিশ দিয়ে গত রবিবার আছদ আলী ও তার ছেলেদের ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নেন। কেন টাকা পরিশোধ করেনি জানতে চাইলে আছদ আলী ও তার ছেলেরা চেয়ারম্যানকে বলেন, আমরা খুবই গরিব মানুষ। আমরা ৭০ হাজার টাকা কই পাবো। তাছাড়া আমরাতো চুরি করিনি।
এ কথা শুনে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালাম রেগে যান। তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে প্রতিবন্ধী (বাম হাত চিরতরে অকেজো) ইছরাইলকে বেদম প্রহার, কিল, ঘুষি দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। চেয়ারম্যান ছালাম তার আগের দেওয়া রায় ৭০ হাজার টাকা কমিয়ে ৩৫ হাজার টাকা দেওয়ার রায় দিয়ে সাদা কাগজে পিতা পুত্রদের স্বাক্ষর রেখে তাদের বিদায় করেন। অপমানে জর্জরিত প্রতিবন্ধী ইছরাইল আলী ওই দিনই সন্ধ্যার পরে বিষপান করলে তাকে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় সোমবার সকাল ৮টায় ইছরাইল মৃত্যুবরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় জয়পাশায় হযরত কামালশাহ (রহ.) এর মাজারের পাশে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
নিহত ইছরাইল আলীর বড় ভাই ইয়াসিন আলী কালের কণ্ঠকে জানান, সোমবার সকাল ৮টায় আমার ভাই মারা যাওয়ার আগে চেয়ারম্যান ছালাম ও নজরুল ৬০ কিলোমিটার দূরে ওসমানী হাসপাতালে দেখতে গেলেও শহরে তার জানাযার নামাজে তারা কেউ আসেনি।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ছালাম মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেন। কিন্তু তিনি ৩৫ হাজার জরিমানা করার কথা স্বীকার করেছেন।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইয়ারদৌস হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, নিহত যুবকের পিতা আছদ আলী আত্মহত্যার প্ররোচনা করার অপরাধে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সালাম, বাসার মালিক সামছুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। মামলা নং-০৭। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।