৭০ হাজার কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিল পাঁচ বছরে
- আপডেটের সময় : ০১:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অগাস্ট ২০১৭
- / ১৮০১ টাইম ভিউ
দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে রাখতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য পুনঃতফসিল ও অবলোপন করে খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে গত পাঁচ বছরেই ৭০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে শুধু ২০১৬ সালেই পুনঃতফসিল করা হয়েছে ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। ঋণ পুনঃতফসিলের সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছেন বস্ত্র ও পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট-২০১৬ পর্যালোচনায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
খেলাপি ঋণকে দেখা হয় দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় সমস্যা হিসেবে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো ১১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে আদায় অযোগ্য হয়ে পড়ায় আরো প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। সবমিলে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণের এ ঝুঁকি থেকে বেরিয়ে আসতে বড় ঋণের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে ব্যাংকগুলোকে ছোট ঋণের দিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। গতকাল ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশকালে তিনি বলেন, ঋণ আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনতে হবে। টেকসই ব্যাংকিং গঠনে সিস্টেম্যাটিক ঝুঁকির কারণ হতে পারে এমন আগ্রাসী বিনিয়োগ থেকে ব্যাংকগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ শ্রেণীর গ্রাহকদের সুবিধা দিতে বছরের পর বছর ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়া হচ্ছে বলে মনে করেন ব্যাংকিং খাত-সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় কোনো ঋণ সর্বোচ্চ তিন দফায় পুনঃতফসিলের কথা উল্লেখ থাকলেও ১০-১৫ বারও এ সুবিধা পাচ্ছেন কোনো কোনো গ্রাহক।
ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চায় ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে রাখতে। ব্যাংকগুলোও চায় খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে যেকোনো উপায়ে অর্থ আদায় করতে। এজন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক কিছুটা নমনীয় থাকে।
এর আগে বিচ্ছিন্ন নীতিমালা থাকলেও ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পুনঃতফসিলের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের সার্কুলার আকারে তা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরবর্তীতে দুই দফায় সার্কুলার জারি করে ওই নীতিমালারও কিছু শর্ত শিথিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নীতিমালার সুবিধা নিয়ে ২০১২ সালে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে ব্যাংকগুলো। এর পরের বছর থেকে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনঃতফসিলের গতি। ২০১৩ সালেই ১৮ হাজার ২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পান খেলাপি গ্রাহকরা। এরপর ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৩৫০ কোটি ও ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো।
ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা সবচেয়ে বেশি নিচ্ছেন বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এ সময় পুনঃতফসিল করা ঋণের ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ এ খাতের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ২২ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে শিল্পের চলতি মূলধনি খাতে। পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ আমদানি-ফতানি খাতের। এছাড়া জাহাজ নির্মাণ ও ভাঙা শিল্প, পরিবহন ও যোগাযোগ খাত এবং ভোক্তাঋণের ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ পুনঃতফসিল করা হচ্ছে বৃহৎ শিল্পের। গত পাঁচ বছরে এ খাতের ২৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে, যা মোট পুনঃতফসিলের ৪২ শতাংশ। একই সময়ে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ২৫ শতাংশ মাঝারি শিল্পের।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ৫১ শতাংশই করেছে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো। বাকি ৪৮ শতাংশ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত আটটি ব্যাংক। পুনঃতফসিলকৃত ঋণের মাত্র ১ শতাংশ করেছে বিদেশী ব্যাংকগুলো। সূত্র: বণিক বার্তা