ঢাকা , বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
পর্তুগালে মানবিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন “সদিচ্ছা ফাউন্ডেশন” এর লোগো সম্বলিত টি শার্ট উন্মোচন যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে দূতাবাস রোম পর্তুগাল জাসাসের আলিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মিলানের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস পালিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা করেছে সম্মিলিত নাগরিক কমিটি ভেনিস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনফালকনে গরিঝিয়া শাখা ইতালির আয়োজনে বাংলাদেশের ৫৩ তম বিজয় দিবস উদযাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রোমে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রবাসীদের নিয়ে পঞ্চগ্রাম প্রবাসী উন্নয়ন ফোরামের ৭৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন সুয়েব এবং রুবিয়াত আফরিনা ১৮তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অ্যামাজন জঙ্গলে

হাকালুকির পরিবেশের বিষফোঁড়া ‘প্লাস্টিকের চাঁই’

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ৭১২ টাইম ভিউ

এস আলম সুমন, হাকালুকি থেকে ফিরে:প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওর মানুষ সৃষ্ট ও বিভিন্ন দূষণে এমনিতেই হাওরে পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। এর মাঝে অরক্ষিত হাকালুকিতে বিষফোঁড়া হয়ে দাড়িয়েছে চিংড়ি শিকারের জন্য ব্যবহৃত ‘প্লাস্টিকের চাঁই’। গত বছর দুয়েক ধরে ‘প্লাস্টিকের চাঁই’ এর অবাধ ব্যবহার বেড়েছে। এতে চরম হুমকির মুখে রয়েছে হাকালুকির পরিবেশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিকের চাঁই হওয়ায় এগুলো পঁচে না। অবাধে এসব চাঁই ব্যবহার ও চাইয়ে ব্যবহৃত মাছ শিকারের জন্য টোপ অন্যান্য জলচর প্রাণীসহ মাছের জন্যও ক্ষতিকর। মৎসজীবিরা ছোট মাছ ও চিংড়ি শিকারের জন্য প্লাস্টিকের চাঁই ব্যবহারের পর হাওরের যত্রতত্র ফেলে রেখে দেয়। প্লাস্টিকের চাঁই ব্যবহার রোধ না করা গেলে হাকালুকির পরিবেশ ও জীববৈচিত্র আরো ঝুঁকির মুখে পড়বে।
সরেজমিনে হাকালুকির গেলে দেখা যায়, হাকালুকির চকিয়া, নাগুয়া, গৌড়কুড়ি, ফুটবিল, হাওরবর্ণা, হিঙ্গাজি, টলার বিল ও বৈরাগীকুল, গোল্লা, বাঘদল, মেধাবিল, পালুয়া, চাঙ্গুয়া, লালুর বিল (জলাশয়) নামে ছোট বিলের পাশে ছড়িয়ে ছিটে রয়েছে প্লাস্টিকের চাঁই। জানা যায়, আগে শুধুমাত্র বাঁশের তৈরী চাঁই ব্যবহার করা হতো চিংড়ি ধরার জন্য। তবে একাধিকবার ব্যবহার ও কম খরচে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরী করা যায় ‘প্লাস্টিকের চাঁই’। এজন্য গত বছর দুয়েক ধরে অবাধে বৃদ্ধি পেয়েছে প্লাস্টিকের চাঁই। দেখতে গোলাকার বৈশিষ্টের হয় এ ‘প্লাস্টিকের চাঁই’। প্লাস্টিক মুড়িয়ে বাঁশের কঞ্চি ও তার দিয়ে এই চাঁই তৈরী করা হয়।
হাওরের মৎস্যজীবি মো. ছলুক মিয়া, বিধু চন্দ্র, সজল মালাকার ও রছিম মিয়া নামে জানান, প্লাস্টিকের চাঁই দিয়ে সহজে বেশি পরিমাণ চিংড়িসহ ছোট মাছ শিকার করা যায়। বর্ষায় পুরো হাওরজুড়ে ও শুকনো মৌসুমে হাওরের বিল এবং জলাশয়ে পানির নিচে সারিবদ্ধভাবে সুতো দিয়ে বেধে টোপ দেওয়া প্লাস্টিকের চাঁই রেখে দেওয়া হয়। পর এসব চাই তুলে এর ভিতর থেকে চিংড়ি ও ছোট মাছ বের করে সেগুলো এমনি ফেলে রেখে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মৎস্যজীবি জানান, শুকনো মৌসুমে ইজারাকৃত বিলের ইজারাদারদের নিষেধাজ্ঞার কারণে ও যেসব বিলে মাছ ধরা বন্ধ ওইসব বিলে লুকিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় চাঁই পানির নিচে সুতো দিয়ে বেধে রাখা হয়। পরদিন ভোরে সেগুলো পানি থেকে তুলা হয় ও চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়। ওই মৎস্যজীবি জানান, আগে বাঁশের তৈরী চাঁই দিয়ে চিংড়ি শিকার করা হতো। কিন্তু প্লাস্টিকের চাঁই দুই তিনবার ব্যবহার করা যায় ও কম খরচে সহজে তৈরী করা যায়। এজন্য চিংড়ি শিকারে প্লাাস্টিকের চাঁই ব্যবহার বেড়েছে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ বশির আহমদ বলেন, প্লাস্টিকতো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্লাস্টিকের চাঁই ব্যবহারের পর হাওরের যত্রতত্র ফেলে রাখায় হাকালুকির পরিবেশ ও জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়বে। এগুলো ব্যবহার রোধে স্থানীয় হাওরবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী।
তিনি আরো বলেন, প্লাস্টিক পঁচেনা। পানির নিচে ও জলাশয়ে ফেলে রাখা প্লাস্টিকের চাই থাকা মাছসহ জলচর বিভিন্ন প্রাণীর জন্য চরম ক্ষতিকর।
মৌলভীবাজার সদর মৎস্য অধিদপ্তর কার্যালয়ের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, হাকালুকিতে গত দুই বছর ধরে চিংড়ি শিকারের জন্য প্লাস্টিকের চাঁইয়ের ব্যবহার বেড়েছে। আমরা বিভিন্ন সময় পরিদর্শনে গেলে প্লাস্টিকের চাঁই হাওরে যত্রতত্র ফেলে রাখা অবস্থায় দেখতে পাই। মৎস্য আইনে চাঁই ব্যবহার নিষেধাজ্ঞার ব্যপারে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা না থাকায় ও কারা ব্যবহার করেন এসব চাঁই সেটা না জানায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনা। তবে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের চাঁই তৈরী রোধে ও এসব চাঁই ব্যবহারে নিরোৎসাহিত করতে হাওরের মৎস্যজীবিদের সচেতন করে আসছি। প্লাস্টিকের চাঁইয়ের ব্যবহার বন্ধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

পোস্ট শেয়ার করুন

হাকালুকির পরিবেশের বিষফোঁড়া ‘প্লাস্টিকের চাঁই’

আপডেটের সময় : ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০

এস আলম সুমন, হাকালুকি থেকে ফিরে:প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওর মানুষ সৃষ্ট ও বিভিন্ন দূষণে এমনিতেই হাওরে পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। এর মাঝে অরক্ষিত হাকালুকিতে বিষফোঁড়া হয়ে দাড়িয়েছে চিংড়ি শিকারের জন্য ব্যবহৃত ‘প্লাস্টিকের চাঁই’। গত বছর দুয়েক ধরে ‘প্লাস্টিকের চাঁই’ এর অবাধ ব্যবহার বেড়েছে। এতে চরম হুমকির মুখে রয়েছে হাকালুকির পরিবেশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিকের চাঁই হওয়ায় এগুলো পঁচে না। অবাধে এসব চাঁই ব্যবহার ও চাইয়ে ব্যবহৃত মাছ শিকারের জন্য টোপ অন্যান্য জলচর প্রাণীসহ মাছের জন্যও ক্ষতিকর। মৎসজীবিরা ছোট মাছ ও চিংড়ি শিকারের জন্য প্লাস্টিকের চাঁই ব্যবহারের পর হাওরের যত্রতত্র ফেলে রেখে দেয়। প্লাস্টিকের চাঁই ব্যবহার রোধ না করা গেলে হাকালুকির পরিবেশ ও জীববৈচিত্র আরো ঝুঁকির মুখে পড়বে।
সরেজমিনে হাকালুকির গেলে দেখা যায়, হাকালুকির চকিয়া, নাগুয়া, গৌড়কুড়ি, ফুটবিল, হাওরবর্ণা, হিঙ্গাজি, টলার বিল ও বৈরাগীকুল, গোল্লা, বাঘদল, মেধাবিল, পালুয়া, চাঙ্গুয়া, লালুর বিল (জলাশয়) নামে ছোট বিলের পাশে ছড়িয়ে ছিটে রয়েছে প্লাস্টিকের চাঁই। জানা যায়, আগে শুধুমাত্র বাঁশের তৈরী চাঁই ব্যবহার করা হতো চিংড়ি ধরার জন্য। তবে একাধিকবার ব্যবহার ও কম খরচে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরী করা যায় ‘প্লাস্টিকের চাঁই’। এজন্য গত বছর দুয়েক ধরে অবাধে বৃদ্ধি পেয়েছে প্লাস্টিকের চাঁই। দেখতে গোলাকার বৈশিষ্টের হয় এ ‘প্লাস্টিকের চাঁই’। প্লাস্টিক মুড়িয়ে বাঁশের কঞ্চি ও তার দিয়ে এই চাঁই তৈরী করা হয়।
হাওরের মৎস্যজীবি মো. ছলুক মিয়া, বিধু চন্দ্র, সজল মালাকার ও রছিম মিয়া নামে জানান, প্লাস্টিকের চাঁই দিয়ে সহজে বেশি পরিমাণ চিংড়িসহ ছোট মাছ শিকার করা যায়। বর্ষায় পুরো হাওরজুড়ে ও শুকনো মৌসুমে হাওরের বিল এবং জলাশয়ে পানির নিচে সারিবদ্ধভাবে সুতো দিয়ে বেধে টোপ দেওয়া প্লাস্টিকের চাঁই রেখে দেওয়া হয়। পর এসব চাই তুলে এর ভিতর থেকে চিংড়ি ও ছোট মাছ বের করে সেগুলো এমনি ফেলে রেখে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মৎস্যজীবি জানান, শুকনো মৌসুমে ইজারাকৃত বিলের ইজারাদারদের নিষেধাজ্ঞার কারণে ও যেসব বিলে মাছ ধরা বন্ধ ওইসব বিলে লুকিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় চাঁই পানির নিচে সুতো দিয়ে বেধে রাখা হয়। পরদিন ভোরে সেগুলো পানি থেকে তুলা হয় ও চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়। ওই মৎস্যজীবি জানান, আগে বাঁশের তৈরী চাঁই দিয়ে চিংড়ি শিকার করা হতো। কিন্তু প্লাস্টিকের চাঁই দুই তিনবার ব্যবহার করা যায় ও কম খরচে সহজে তৈরী করা যায়। এজন্য চিংড়ি শিকারে প্লাাস্টিকের চাঁই ব্যবহার বেড়েছে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ বশির আহমদ বলেন, প্লাস্টিকতো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্লাস্টিকের চাঁই ব্যবহারের পর হাওরের যত্রতত্র ফেলে রাখায় হাকালুকির পরিবেশ ও জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়বে। এগুলো ব্যবহার রোধে স্থানীয় হাওরবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী।
তিনি আরো বলেন, প্লাস্টিক পঁচেনা। পানির নিচে ও জলাশয়ে ফেলে রাখা প্লাস্টিকের চাই থাকা মাছসহ জলচর বিভিন্ন প্রাণীর জন্য চরম ক্ষতিকর।
মৌলভীবাজার সদর মৎস্য অধিদপ্তর কার্যালয়ের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, হাকালুকিতে গত দুই বছর ধরে চিংড়ি শিকারের জন্য প্লাস্টিকের চাঁইয়ের ব্যবহার বেড়েছে। আমরা বিভিন্ন সময় পরিদর্শনে গেলে প্লাস্টিকের চাঁই হাওরে যত্রতত্র ফেলে রাখা অবস্থায় দেখতে পাই। মৎস্য আইনে চাঁই ব্যবহার নিষেধাজ্ঞার ব্যপারে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা না থাকায় ও কারা ব্যবহার করেন এসব চাঁই সেটা না জানায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনা। তবে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের চাঁই তৈরী রোধে ও এসব চাঁই ব্যবহারে নিরোৎসাহিত করতে হাওরের মৎস্যজীবিদের সচেতন করে আসছি। প্লাস্টিকের চাঁইয়ের ব্যবহার বন্ধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।