ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
কুলাউড়া বিএনপির দীর্ঘ যুগ পর কোন্দলের অবসান। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার আবু জাহেলদের ব্যার্থ গুপ্ত হত্যা পরিকল্পনার মধ্যে দিয়েই যেভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরত জীবনের শুরু হয় তারেক রহমানের উপস্থাপিত ৩১ দফা’র লিফলেট বিতরন করলো পর্তুগাল সেচ্চাসেবক দল ইতালির তরিনোতে জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ব্রাম্মণবাড়ীয়া জেলা সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হলে আমরা সারা দুনিয়া জ্বালিয়ে দেব,মিলানের সেমিনারে বললেন পিনাকী ভট্রাচার্য পর্তুগাল জাসাস’র নবগঠিত কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতেবিভিন্ন চক্রান্তে লিপ্ত আ’লীগ গ্রিন সিলেট ট্রাভেলসের আয়োজনে বাংলাদেশে পর্তুগাল দূতাবাস/কনসুলেট চেয়ে খোলা চিঠি স্বৈরাচার সরকার পতনের পর যুক্তরাজ্যে ফিরছেন সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি পর্তুগাল শাখার উদ্যোগে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত! বন্যার্ত মানুষের ত্রান তহবিলের জন্যে ৬ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘোষণা

সৌদি আরবে প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহী হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠেছেন মাশায়েল আল-জালুদ নামের এক নারী

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : ১১:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ৭৬৮ টাইম ভিউ

দেশদিগন্ত ডেস্ক:- সম্প্রতি সৌদি আরবে প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহী হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠেছেন মাশায়েল আল-জালুদ নামের এক নারী। কট্টোর রক্ষণশীল এই দেশটিতে নারীদের জন্য আবায়া বা বোরকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেয়া এই আইন ভেঙ্গে যে পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তা পরেই বেড়িয়ে আসেন সাহসী ওই নারী। এরপরই তার আবায়াহীন বেশকিছু ছবি ভাইরাল হয়ে যায় ইন্টারনেট দুনিয়ায়।

বৃটিশ গণমাধ্যম মেট্রো ওই নারীকে বিদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, দেশটিতে এখন অনেক নারীই প্রচলিত প্রথা ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। তারা বলছেন, আমি কী পরবো না পরবো সেটি চাপিয়ে দেয়ার অধিকার অন্য কারো নেই। তারা এখন দেশটির ধর্মীয় কট্টোরপন্থীদের দ্বারা হুমকির শিকার হচ্ছেন কিন্তু এটি এখন স্পষ্ট যে ধীরে ধীরে হলেও সৌদি আরবে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এর জন্য দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানেরও বেশ অবদান রয়েছে।

গত বছর সিবিএসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, সৌদি আরবে পোশাক নিয়ে প্রচলিত আইন শিথিল করবেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, এই ধরনের বাধ্যবাধকতা ইসলামে নেই। তবে এ নিয়ে দেশটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আইন পাশ হয়নি। তবুও এখন সেখানে অনেককেই দেখা যাচ্ছে যারা তাদের আবায়া বাসায় ফেলে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার বোরকার আধুনিক সংস্করন পরতে শুরু করেছেন। অন্ধকার কালো রঙ ছেড়ে কেউ রঙ্গিন আবায়া পরছেন।
৩৩ বছর বয়সী মাশায়েল আল-জালুদও আবায়া ছেড়ে সাধারণ পোশাকেই যাতায়াত শুরু করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি রাজধানী রিয়াদের একটি শপিং মলে তার আবায়াহীন কিছু ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায় উঁচু জুতা, সম্পূর্ন খোলা চুল ও পাশ্চাত্য ধাঁচের দৃষ্টিনন্দন পোশাকে দোকানে দোকানে ঘুরছেন তিনি। তাকে দেখে আশেপাশের সবাই মনে করেছিলেন তিনি হয়ত বড় কোনো তারকা হবেন। কিন্তু বাস্তবে জানা যায়, তিনি আসলে একজন সাধারণ সৌদি নারী। রিয়াদেই একটি প্রতিষ্ঠানে মানব সম্পদ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।

গত জুলাইতে তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করেন টুইটারে। এতে তিনি জানান, সৌদি আরবে পোশাক নিয়ে কোনো স্পষ্ট আইন নেই। আমি হয়ত ঝুঁকিতে আছি। ধর্মীয় কট্টোরপন্থিরা আমাকে হুমকি দিচ্ছে কারণ আমি আবায়া পরছি না। কিন্তু এটি কোনো ধর্মীয় বিষয় নয়। কারণ তা হলে সৌদি নারীরা দেশের বাইরে গেলে আবায়া ছুড়ে ফেলতো না।
তবে শুধু মাশায়েলই নয় এখন অনেক সৌদি নারীই আবায়া ছাড়া বাইরে বেরুতে শুরু করেছেন। এরমধ্যে একজন হচ্ছেন মানাহেল আল-ওতাইবি। ২৫ বছর বয়স্ক এই যুবতি বলেন, গত ৪ মাস ধরে আমি রিয়াদে কোনো ধরণের আবায়া ছাড়াই আছি। আমি আমার মত করে স্বাধীনভাবে বাচতে চাই। আমাকে কেউ এমন কিছুতে জোর করতে পারে না যেটা আমি চাই না।

সৌদি আরব যে অঞ্চলে অবস্থিত সেখানে কয়েক হাজার বছর থেকেই আবায়ার প্রচলন ছিলো। কিন্তু এটি বাধ্যতামূলক হয় মাত্র কয়েক দশক পূর্বে। সেখানে যারা অমুসলিম রয়েছেন তাদের জন্যও এটি বাধ্যতামূলক। দেশটির ধর্মীয় পুলিশ এই পোশাকের বিধান নিয়ে অনেককেই হেনস্থা করে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবায়া না পরা নারীদের রাস্তাঘাটে ব্যাপক উত্যোক্তের শিকার হতে হয়। তবে দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দেশের এমন অবস্থায় নারা দিতে চাচ্ছেন। কট্টোরপন্থাকে ঝেরে ফেলে উদার রাষ্ট্র হিসেবে আÍপ্রকাশের জন্য সৌদি আরবের অনেক বিষয়কেই সংস্কার করেছেন তিনি। দেশটিতে তিনি সিনেমা নিয়ে এসেছেন, একইসঙ্গে নির্মান করছেন সিনেমা হলও। নারী-পুরুষের জন্য একইসঙ্গে কনসার্টের আয়োজন করছেন এবং নারীদের অধিকতর স্বাধীনতা অনুমোদন করেছেন। দেশটিতে এখন বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীদের কনসার্ট হচ্ছে।

তারপরেও এখনো সেখানে জীবন নারীদের জন্য সহজ নয়। যারা প্রচলিত প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছেন তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সামনে পড়তে হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সৌদি নারীরা প্রতিবাদও জানাতে শুরু করেছেন। দেশটির নারীরা দিন দিন নিজেদের অধিকার ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে সচেষ্ট হয়ে উঠছেন। ফলে সেখানে থাকা পুরুষ অভিবাবকত্ব আইনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিল হতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে সৌদি আরবে বইতে শুরু করেছে পরিবর্তনের হাওয়া।

পোস্ট শেয়ার করুন

সৌদি আরবে প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহী হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠেছেন মাশায়েল আল-জালুদ নামের এক নারী

আপডেটের সময় : ১১:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দেশদিগন্ত ডেস্ক:- সম্প্রতি সৌদি আরবে প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহী হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠেছেন মাশায়েল আল-জালুদ নামের এক নারী। কট্টোর রক্ষণশীল এই দেশটিতে নারীদের জন্য আবায়া বা বোরকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেয়া এই আইন ভেঙ্গে যে পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তা পরেই বেড়িয়ে আসেন সাহসী ওই নারী। এরপরই তার আবায়াহীন বেশকিছু ছবি ভাইরাল হয়ে যায় ইন্টারনেট দুনিয়ায়।

বৃটিশ গণমাধ্যম মেট্রো ওই নারীকে বিদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, দেশটিতে এখন অনেক নারীই প্রচলিত প্রথা ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। তারা বলছেন, আমি কী পরবো না পরবো সেটি চাপিয়ে দেয়ার অধিকার অন্য কারো নেই। তারা এখন দেশটির ধর্মীয় কট্টোরপন্থীদের দ্বারা হুমকির শিকার হচ্ছেন কিন্তু এটি এখন স্পষ্ট যে ধীরে ধীরে হলেও সৌদি আরবে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এর জন্য দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানেরও বেশ অবদান রয়েছে।

গত বছর সিবিএসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, সৌদি আরবে পোশাক নিয়ে প্রচলিত আইন শিথিল করবেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, এই ধরনের বাধ্যবাধকতা ইসলামে নেই। তবে এ নিয়ে দেশটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আইন পাশ হয়নি। তবুও এখন সেখানে অনেককেই দেখা যাচ্ছে যারা তাদের আবায়া বাসায় ফেলে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার বোরকার আধুনিক সংস্করন পরতে শুরু করেছেন। অন্ধকার কালো রঙ ছেড়ে কেউ রঙ্গিন আবায়া পরছেন।
৩৩ বছর বয়সী মাশায়েল আল-জালুদও আবায়া ছেড়ে সাধারণ পোশাকেই যাতায়াত শুরু করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি রাজধানী রিয়াদের একটি শপিং মলে তার আবায়াহীন কিছু ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায় উঁচু জুতা, সম্পূর্ন খোলা চুল ও পাশ্চাত্য ধাঁচের দৃষ্টিনন্দন পোশাকে দোকানে দোকানে ঘুরছেন তিনি। তাকে দেখে আশেপাশের সবাই মনে করেছিলেন তিনি হয়ত বড় কোনো তারকা হবেন। কিন্তু বাস্তবে জানা যায়, তিনি আসলে একজন সাধারণ সৌদি নারী। রিয়াদেই একটি প্রতিষ্ঠানে মানব সম্পদ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।

গত জুলাইতে তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করেন টুইটারে। এতে তিনি জানান, সৌদি আরবে পোশাক নিয়ে কোনো স্পষ্ট আইন নেই। আমি হয়ত ঝুঁকিতে আছি। ধর্মীয় কট্টোরপন্থিরা আমাকে হুমকি দিচ্ছে কারণ আমি আবায়া পরছি না। কিন্তু এটি কোনো ধর্মীয় বিষয় নয়। কারণ তা হলে সৌদি নারীরা দেশের বাইরে গেলে আবায়া ছুড়ে ফেলতো না।
তবে শুধু মাশায়েলই নয় এখন অনেক সৌদি নারীই আবায়া ছাড়া বাইরে বেরুতে শুরু করেছেন। এরমধ্যে একজন হচ্ছেন মানাহেল আল-ওতাইবি। ২৫ বছর বয়স্ক এই যুবতি বলেন, গত ৪ মাস ধরে আমি রিয়াদে কোনো ধরণের আবায়া ছাড়াই আছি। আমি আমার মত করে স্বাধীনভাবে বাচতে চাই। আমাকে কেউ এমন কিছুতে জোর করতে পারে না যেটা আমি চাই না।

সৌদি আরব যে অঞ্চলে অবস্থিত সেখানে কয়েক হাজার বছর থেকেই আবায়ার প্রচলন ছিলো। কিন্তু এটি বাধ্যতামূলক হয় মাত্র কয়েক দশক পূর্বে। সেখানে যারা অমুসলিম রয়েছেন তাদের জন্যও এটি বাধ্যতামূলক। দেশটির ধর্মীয় পুলিশ এই পোশাকের বিধান নিয়ে অনেককেই হেনস্থা করে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবায়া না পরা নারীদের রাস্তাঘাটে ব্যাপক উত্যোক্তের শিকার হতে হয়। তবে দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান দেশের এমন অবস্থায় নারা দিতে চাচ্ছেন। কট্টোরপন্থাকে ঝেরে ফেলে উদার রাষ্ট্র হিসেবে আÍপ্রকাশের জন্য সৌদি আরবের অনেক বিষয়কেই সংস্কার করেছেন তিনি। দেশটিতে তিনি সিনেমা নিয়ে এসেছেন, একইসঙ্গে নির্মান করছেন সিনেমা হলও। নারী-পুরুষের জন্য একইসঙ্গে কনসার্টের আয়োজন করছেন এবং নারীদের অধিকতর স্বাধীনতা অনুমোদন করেছেন। দেশটিতে এখন বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীদের কনসার্ট হচ্ছে।

তারপরেও এখনো সেখানে জীবন নারীদের জন্য সহজ নয়। যারা প্রচলিত প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছেন তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সামনে পড়তে হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সৌদি নারীরা প্রতিবাদও জানাতে শুরু করেছেন। দেশটির নারীরা দিন দিন নিজেদের অধিকার ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে সচেষ্ট হয়ে উঠছেন। ফলে সেখানে থাকা পুরুষ অভিবাবকত্ব আইনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিল হতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে সৌদি আরবে বইতে শুরু করেছে পরিবর্তনের হাওয়া।