সোনালি চালের পথিকৃৎ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
- আপডেটের সময় : ০৫:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৯
- / ৮৯২ টাইম ভিউ
বিটা ক্যারোটিন বা প্রো-ভিটামিনে সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইসকে (সোনালি চাল) বলা হয় এই শতাব্দীর সবচেয়ে বিস্ময়কর আবিষ্কার। এবার এই বিস্ময়কর আবিষ্কারের পথিকৃৎ হতে চলেছে বাংলাদেশ। বিশ্বে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে সোনালি চালের চাষ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্ল্যাক-হোয়াইট ধানসহ আরো কয়েকটি জাতের ধান নিয়েও কাজ করছে সরকার। আগামী দু-এক বছরের মধ্যে নতুন আরো কয়েকটি ধান অবমুক্ত করতে পারবে সরকার। তবে সোনালি ধানের অবমুক্তি এবং বাণিজ্যিক চাষের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিশ্বে পথিকৃৎ হতে যাচ্ছে। কারণ বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করলেও এখনো কোনো দেশ এই ধান চাষের ক্ষেত্রে সাহস দেখাতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অতিরিক্ত সচিব) কমলারঞ্জন দাশ বলেন, এই ধানের স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের পর পাইলট প্রকল্প আকারে এটি চাষ করা হবে। আমাদের দেশের জন্য এটি কতটা উপযোগী এবং কতটা লাভজনক মূল্যায়ন করা হবে। এরপর এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষের ঘোষণা আসতে পারে সরকারের পক্ষ থেকে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করছি আগামী বছরের মধ্যেই সোনালি ধান নিয়ে সরকারের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই বিশেষ ধান বিতরণের ঘোষণা আসতে পারে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিতরণ করা হতে পারে এই বিশেষ ভিটামিন সমৃদ্ধ সোনালি ধান। ২০১৫ সালে বোরো মৌসুমে গোল্ডেন রাইসের পরীক্ষামূলক চাষ শুরুর জন্য সরকার অনুমতি দেয়। এরপর থেকে এই বিশেষ ধান নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৭ সালে এই বিশেষ ধান চাষের প্রস্তাব করে। বর্তমানে এই প্রস্তাবনাসহ পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে পরিবেশের ওপর এই ধানের প্রভাব এবং ভিটামিন সংক্রান্ত বিষয়গুলোও।
বিষয়টির ওপর বর্তমানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরকে। মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্সের পর এ বিষয়ের পরবর্তী অগ্রগতি হবে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ এই ধান বাণিজ্যিকভাবে চাষের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন ১৯৯৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ব্রিটিশ প্রাণরসায়নবিদ এবং আণবিক জীববিজ্ঞানী স্যার রিচার্ড জন রবার্টস।
তিনি সোনালি ধানের চাষে বাংলাদেশের মনোভাব নিয়ে কথা বলেছিলেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তখন কৃষিমন্ত্রী সোনালি ধান প্রযুক্তি বাণিজ্যিকীকরণের বিষয়টি তাকে অবহিত করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধানে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন বা প্রো-ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। যা খেলে রাতকানাসহ ভিটামিন-এ-এর অভাব দূর হবে এবং অপুষ্টি মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই চাল হতে পারে যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বাংলাদেশের শতকরা ২১ ভাগ শিশু ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত কারণে অন্ধত্বের শিকার হচ্ছে প্রতি বছর। আশা করা হচ্ছে, সোনালি চাল ভিটামিন-এ-এর চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে নিউইয়র্কের রকফেলার ফাউন্ডেশন প্রথম এই বিশেষ চাল সম্পর্কে বিশ্বকে জানায়।
এরপর ১৯৯০ সালে পিটার এম ব্রামলে নামে একজন ব্রিটিশ বায়োকেমিস্ট এই ধানের জিন আবিষ্কার করেন।
২০০০ সালে সায়েন্স ম্যাগাজিন এই ধানের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও বিস্তারিত প্রকাশ করে। সুইজারল্যান্ডের ‘সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ইগো পোট্রাইকুস’ এবং জার্মানির ফ্রাবার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পেটার বেইয়ার নেতৃত্বে একদল গবেষক সর্বপ্রথম বিস্তারিতভাবে এই সোনালি ধানের সঙ্গে বিশ্ববাসীকে বিস্তারিত পরিচয় করিয়ে দেন।
বিজ্ঞান সাময়িকীর সেই নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বিটা-ক্যারোটিন তৈরির পরিক্রমা জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ধানের এন্ডোস্পার্মে প্রবেশ করানো হয়। আর এই বিটা ক্যারোটিন থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন ‘এ’।