সুলতান মনসুরের পদত্যাগ চাইলেন সাবেক এমপি এম এম শাহীন
- আপডেটের সময় : ০২:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০
- / ১০১০ টাইম ভিউ
দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্ক: সমস্ত পৃথিবী এখন এক অস্বাভাবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। অদৃশ্য এমনই এক ভয়ংকর মরন ব্যাধি শত্রু যে,ছোট-বড়,ধনী-দরিদ্র,ধর্ম-বর্ণ কোন কিছুই মানে না,আমাদেরকে ক্রমেই গ্রাস করে ফেলছে। আমরা এমনই এক কঠিন অন্ধকার সময়ের মুখাপেক্ষী।
এই মরণব্যাধি অনেক প্রাণ কেড়ে নিয়েছে,জানিনা আর কত প্রাণ নিতে পারে?
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে যে মহাদুর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে ,তা যুদ্ধের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাই এখনই সময় আমাদের প্রকৃত মানবিকতা প্রকাশের।
এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রবাসী কমিউনিটি ও দেশেবৃত্তবানরা সাহায্যের হাত এগিয়ে দিতে মোটেও কৃপণতা করেননি।
বাংলাদেশী প্রবাসীদের সেবার পাশাপাশি বাংলাদেশে বৃত্তবানরা যে যা পারছে তা নিয়েই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দরিদ্র ও অসহায় – বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে ।এই করুন অবস্হায় ব্যাক্তির সাথে সংসদ সদস্য সুলতান মনসুরের কপোতকথন নিয়ে সোস্যাল মিডিয়া ঝড় উঠলে নিরব ছিলেন সুলতান মনসুর । তা নিয়েই দেরিতে হলেও স্টেটাস দিলেন এম এম শাহীন তা হুবুহ তুলে ধরা হলো
সুলতান মনসুরের সাম্প্রতিক ফোনালাপ এবং কিছু কথা-
সম্প্রতি মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের ফোনালাপের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল ফাঁস হওয়া ৩ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ওই অডিওতে কুলাউড়ার পূর্ব প্রতাবীর মুহিন আহমদ নামের এক যুবকের সঙ্গে সুলতান মনসুরের অশ্লীল কথোপকথন শুনে আমরা যুগপৎ বিস্মিত ও হতবাক। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার দিকে চোখ রাখার বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ করা সত্যিই কঠিন। তার পরও দেশ-বিদেশে আলোড়িত সুলতান মনসুরের ওই অডিও রেকর্ড সম্পর্কে দু-চার কথা না লিখে নিজেকেও নিবৃত রাখতে পারলাম না। কারণ করোনা দুর্যোগে কাজকর্ম হারিয়ে একান্ত নিরুপায় হয়ে ওই যুবক তারই এলাকার এমপি সুলতান মনসুরের কাছে ত্রাণসাহায্য চেয়ে ফোন করে যে অপদস্থ, অপমানিত, লাঞ্ছিত হয়েছেন, তা এই সভ্য সমাজে কল্পনার অতীত। ত্রাণের আশ্বাস দূরে থাক, উল্টো ওই যুবককে হাওরে ডুব দিয়ে মরা কিংবা তাদের বোনকে বিয়ে করার মতো নোংরা, অকথ্য, অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে যেভাবে নাজেহাল করেছেন, তা শুনলে যে কারো গা শিউরে উঠবে। শুধু তা-ই নয়, করোনার ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে সুলতান মনসুরের কাছে ওই যুবক জানতে চান তিনি এলাকায় আসবেন কি না। জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে তাকে শ্লেষাত্মক ভাষায় বলেন, ‘তোমাদের ঘরে গিয়ে আমি রান্না করে দেব নাকি?’ তার পরও নিঃস্ব ও অসহায় মুহিন এমপির কাছে সাহায্যের অনুরোধ জানালে তিনি বলেন, প্রতি ওয়ার্ডেই তো সাহায্য যাচ্ছে। মুহিন বলেন, ওসব ত্রাণ তো মেম্বার-চেয়ারম্যানরা দিচ্ছেন। জবাবে সুলতান রেগে গিয়ে বলেন, ‘মেম্বার-চেয়ারম্যানরা দিচ্ছে মানে, তা মক্কা শরিফ থেকে এসেছে নাকি? তারা কি তাদের বাবার ঘর থেকে দিচ্ছে? নাকি তোমার বাবার ঘর থেকে দিচ্ছ।’ সর্বশেষ ওই যুবককে টাউট, বাটপার বলে গালি দিয়ে, গলায় কলসি বেঁধে ভুকশিমইল হাওরে(হাকালুকি) গিয়ে ডুব দে’ বলে ধমক দিয়ে ফোন রেখে দেন।
করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় সারা বিশ্ববাসী যখন দিশেহারা, বিশ্বের বাঘা বাঘা চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা যখন এর প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে গলদঘর্ম, শত্রু-মিত্র ভুলে সবাই যখন একমাত্র করোনাকে পরাস্ত করতে ঐক্যবদ্ধ, সরকার-প্রশাসন ও চিকিৎসক-জনপ্রতিনিধিরা যখন মৃত্যুকে উপেক্ষা করে নিজ নিজ দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে মরিয়া; এমন ভয়ানক সংকটকালে বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদের একজন সদস্যের তারই ভোটারের সাথে এমন রুচিহীন ও বিকৃত আচরণ সত্যিই লজ্জাজনক ও সম্মানহানিকর। আমি মনে করি, সুলতান মনসুরের এই অশ্লীল কথাবার্তা কেবল মুহিনকেই ব্যথিত করেনি, ব্যথিত করেছে পুরো কুলাউড়াবাসী তথা গোটা দেশবাসীকে। আর সম্মানহানি হয়েছে মহান জাতীয় সংসদ ও দেশের সকল সংসদ সদস্যের। পাশাপাশি প্রশ্ন ওঠে, সুলতান মনসুরের মতো মানুষের সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা নিয়েও।
সুলতান মনসুর কোন প্রক্রিয়ায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, সেই প্রশ্ন আমি সারা বিশ্বের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে উত্থাপন করতে চাই না। গত নির্বাচনের পূর্বাপরের নানা ঘটনা নিয়ে অনেকের জিজ্ঞাসা, কৌতূহল কিংবা হাজারো প্রশ্নের জবাব রয়েছে আমার নিকট, যা ভবিষ্যতে প্রকাশ করব। আমি শুধু বলতে চাই, তিনি যেভাবেই নির্বাচিত হোন না কেন এখন তিনি কুলাউড়াবাসীর জনপ্রতিনিধি। এলাকাবাসী তাদের সুখ-দুঃখের কথা সর্বাগ্রে তাকেই অবহিত করবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কুলাউড়া উপজেলা, পৌরসভা, সকল ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে এই মহাদুর্যোগের সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আর সুলতান মনসুর এই ক্রান্তিকালে জনগণের কাছে না থেকে ঢাকায় আলিশান বাড়িতে বসে আরাম-আয়েশ করছেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার প্রায় দেড় বছরে যিনি মাত্র ৬ বার কুলাউড়ায় গিয়েছেন, তার কাছ থেকে এলাকাবাসী আর কীই-বা আশা করতে পারে। বেশির ভাগ মানুষ তার কাছে সেই প্রত্যাশা করেও না। কিন্তু এই মহাদুর্যোগের কালেও মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো তাদেরকে অপমান করার অধিকার তাকে কে দিল? কুলাউড়ার প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বার, পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলর ও উপজেলার মেয়র-কাউন্সিলররা এই দুর্যোগ মোকাবিলায় রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছেন। অথচ ওই চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তাদের বাবার ঘর থেকে ত্রাণ দিচ্ছেন কি না ঢাকায় বসে এই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তাদেরও সুলতান মনসুর চরমভাবে অপমান করলেন। এ ব্যাপারে আমার প্রশ্ন, সুলতান মনসুর কি তার বাবার ঘর থেকে এলাকার উন্নয়ন বা দুস্থ মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করেন? আর যাদের ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়ে আজ তিনি ‘রাজা’ বনেছেন, সেই ভোটারদের টাউট-বাটপার আখ্যা দিয়ে প্রকারান্তরে তিনি ভোটারদের সম্মানকে চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত করেছেন। ক্ষমতা পেয়ে সুলতান মনসুররা এ কথা ভুলে যান যে তাদের কাছে অতি নগণ্য ওই ভোটাররাও প্রতি ৫ বছর পর একদিনের জন্য ‘রাজা’ হন। সেদিন ওই ‘রাজা’রাই নির্ধারণ করেন সুলতান মনসুরদের মতো অকৃতজ্ঞ নেতাদের ভাগ্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ফোনালাপের ওই অডিও রেকর্ডের বিষয়ে সুলতান মনসুর কোনো বিবৃতি কিংবা প্রতিবাদ জানাননি। তাই সবাই ধরে নিয়েছেন ওই কথোপকথনের ঘটনা শতভাগ সত্য। কারণ দীর্ঘদিন রাজনীতি করতে করতে কিংবা বয়সের ভারে ক্লান্ত হয়ে অথবা ভবিষ্যতে আর নির্বাচন না করার মানসিকতা থেকে তিনি এমন আবোলতাবোল বকতে পারেন বলে আমার ধারণা। আবার ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে সম্পূর্ণ সজ্ঞানেও তিনি এমনটা করতে পারেন। তাই আমি মনে করি, এ ঘটনার সকল দায়ভার স্বীকার করে তার উচিত জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর তা যদি না করেন, তাহলে তার উচিত এই মহাগুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক পদ থেকে অবিলম্বে পদত্যাগ করা।