সিলেটে পুলিশের হাতে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড‘কনফিডেনশিয়াল’ তালিকা
- আপডেটের সময় : ০২:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
- / ৪৯৬ টাইম ভিউ
পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হিসেবে বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারীর একটি তালিকা রয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে। এ তালিকাকে দু’ভাগে ভাগও করা হয়েছে। অপরাধে ধরণ ভেদে ডজনখানেক ছিনতাইকারীকে শীর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। পৃথক আরো একটি তালিকা রয়েছে র্যাবে কাছেও।
পেশাদার ছিনতাইকারীদের পাশপাশি মাদকসেবীরাও নেমে পড়েছে ছিনতাই ও ঝাপটাবাজিতে। এসব ছিনতাইকারীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাইছে না আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী।
তাদের ভাষ্য মতে, নাম-পরিচয় প্রকাশ করলে ছিনতাইকারীরা সতর্ক হয়ে গা ঢাকা দিতে পারে। এতে তাদের গ্রেফতার কঠিন হয়ে পড়বে। সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর আম্বরখানায় এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এ ঘটনায় ৩ যুবককে গ্রেফতার করেছে।
এসএমপি’র একটি সুত্র জানায়, মহানগরীতে বিভিন্ন ছিনতাইয়ের ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদের একটি ‘কনফিডেনশিয়াল’ তালিকা রয়েছে। গেল জুন ও চলতি জুলাই মাসে নগরীর শীর্ষ ছিনতাইকারী মির্জা জনি আহমদ, আব্দুর রহমান, আসাদুজ্জামান যুবায়ের, পলাশ মিয়া, হাবিব হোসেন, কামরান আহমদ বাবু, পারভেজ আহমদ ভুট্টুকে গ্রেফতারের পাশাপাশি আরো ২৫ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া গত ২০ জুলাই নগরীর সারদা হলের সামনে ছিনতাইকারী মো. শাহিদুল ইসলাম (১৯), জুয়েল আহমদ (১৮), মো. সুমন আহমদ (১৯), জালাল আহমদ (১৮) কে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ১৯ জুলাই বাগবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাব্বির আহমদ (২৬), রাজ আহমদ ফয়সল (২০)। গত ১৮ জুলাই মো. রাজিব হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ১৬ জুলাই ভোর আকিনুর ইসলাম আকিন (১৯), নাঈম আহমদ (১৯), রনি পাল (২১), শফিকুল ইসলাম (২২) ও গত ৫ জুলাই রাত সাড়ে ১২টার দিকে আখালিয়াস্থ বিজিবি’র সীমান্তবর্তী ব্যাংকের সামনে দিয়া কুমারগাঁওস্থ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কর্মচারী মো. ছাইদুল ইসলাম ছিনতাইর শিকার হন। এ সময় তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে ছিনতাইকারীদের ধাওয়া দিয়ে ইমন হোসেন (২০), শহিদুল বারি (২৬) নামের দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে জনতা। এছাড়াও গত ৫ জুলাই রাতে জালাল উদ্দিন লিটন ও মো. রুবেল নামের দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেন।
পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ছিনতাইকারীদের ছবি ও দেখে বুঝা যায় এরা বয়সে নবীন। তাদের বয়স ১৬-১৭ কিংবা এর একটু উপরে। তাদের পোষাকে আছে বাহারী চমক। ভদ্র পোশাকে সুসজ্জিত থেকেই পরিকল্পনা মাফিক কিংবা টার্গেটের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে তারা। সাথে থাকে মোটর বাইক। ছিনতাই করার আগ পর্যন্ত ভিকটিম কল্পনাও করতে পারেন না এদের দ্বারা লুট হতে পারেন তিনি। ঝটিকা ছিনতাইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন হাউস থেকে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে তার ছিনতাই করছে।
এদিকে, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নগরীতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে একাধিক ছিনতাইকারী চক্র। ভোরবেলা কিংবা রাত গভীর হতে থাকলেই চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীরাই মূলত টার্গেট। মাঝরাতে কাজ শেষে কিংবা বিভিন্ন রাজধানী ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে চড়ে নগরবাসী স্টেশনে নেমে যখন বাসায় ফেরেন তখন রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা থাকে। অন্ধকার ও ফাঁকা রাস্তার সুযোগ নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকে ছিনতাইকারীরা। এ সময় প্রায়ই রিকসা বা সিএনজি অটোরিকশার গতিরোধ করে গাড়ীতে থাকা যাত্রীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে থাকা সব কিছু কেড়ে নেন।
শুধু ছিনতাই-ই নয়। ছিনতাইর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পকেটমারদের দৌরাত্ম্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের চোখ এড়িয়ে খুব সহজেই এরা ওইসব ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষদের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব কেড়ে নেয়।
পুলিশ বলছে, ছিনতাইয়ের মামলা করতে নগরবাসীর অনীহা থাকায় অপরাধী গ্রেফতারে ধীরগতি। অন্যদিকে, নগরবাসীর পাল্টা অভিযোগ, পুলিশের সাহায্য কিংবা থানায় গেলে তাদের সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
সুত্র জানায়, কুরবানীর পশুর হাটকে টার্গেট করে মহল্লার ছিঁচকে চোর থেকে শুরু করে শীর্ষ ছিনতাইকারী ও পেশাদার পকেটমারসহ বিভিন্ন চক্র নগরীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের বেশিরভাগই ওঠতি বয়সী কিশোর ও তরুণ। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না পুলিশ সদস্যরাও। তারা একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। ছিনতাইকালে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মানুষ হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না। তাদের ছুরিকাঘাতে অনেকে আহত হচ্ছেন।
ছিনতাইকারীরা সাধারণত এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় গিয়ে ছিনতাই করে। ছিনতাইয়ের পর নিজের এলাকায় চলে যায়। অনেক সময় বড় বড় ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনতাইকারীরা সিলেটের বাইরে আত্মগোপনে চলে যায়। নগরজুড়ে পুলিশের টহল টিম থাকলেও ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় পুলিশের উপস্থিতি খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এসব তথ্য জালালাবাদকে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বর্তমানে নগরীতে ছিনতাইয়ের জন্য সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকাগুলো হচ্ছে, শাহজালাল ব্রিজ, ক্বিনব্রিজ, কাজিরবাজার ব্রিজ, কদমতলী, বাস টার্মিনাল, রেল স্টোশন রোড, হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বর, তালতলা, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, মির্জাজাঙ্গাল, মেডিকেল রোড, বাগবাড়ি, মদিনা মার্কেট, সাগরদিঘির পার, সুবিদবাজার, আখালিয়া, আম্বরখানা, ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই, বালুচর, শাহী ঈদগাহ, নয়াসড়ক, মেন্দিবাগ, বটরতল, টিলাগড়, আলুরতল, উপশহর, শিবগঞ্জ, লালদিঘির পার, কামালগড়, সার্কিট হাউজ এলাকা, মহাজনপট্টি, সোবহানীঘাট।
ছিনতাইকারীরা এসব এলাকায় ছিনতাই শেষে নিরাপদ আশ্রয় স্থান হিসেবে বেছে নেয় সুরমা মার্কেট, কাস্টঘর, লালদিঘির পারস্থ হকার মার্কেটের ভেতর, সিটি মার্কেটের পুরাতন ভবণের ছাদসহ নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল। সেখানে বসে ভাগবাটোয়ারা করা হয় ছিনতাই করা টাকা ও জিনিসপত্র।
এদিকে, নগরীতে বেড়েছে অজ্ঞান ও ধাক্কা পার্টির সীমাহীন দৌরাত্ম্য। এসব চক্রের সদস্যরা শুধু পুরুষই নয়, অনেক নারীও রয়েছেন। পানি বা খাদ্যদ্রব্যের সাথে নেশাজাতীয়দ্রব্য মিশিয়ে অজ্ঞান করে লুটে নিচ্ছে নগদ টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। এদের হাত থেকে রেহাই মিলছেনা র্যাব সদস্যের পরিবারও। গত কয়েকদিন পূর্বে নগরীর নবাব রোডে এক র্যাব সদস্যের বাসায় এমনই একটি ঘটনা ঘটে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া ও কমিউনিটি সার্ভেস) জ্যোর্তিময় সরকার জালালাবাদকে বলেন, ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।