সন্ত্রাস করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিন: শেখ হাসিনা
- আপডেটের সময় : ০৫:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮
- / ১৪৬০ টাইম ভিউ
দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্ক: নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ প্রতিরোধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোটের দিনে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে এলে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে বলেছেন তিনি। প্রচারের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ঢাকায় সুধা সদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, যশোর, পাবনা, পঞ্চগড়ে এবং অডিও কনফারেন্সে গোপাগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
ভিডিও কনফারেন্সের শুরুতেই তিনি কুমিল্লার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা নিরাপদে থাকবেন। কারণ ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াত মিলে ১ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে এবং ৪৪১ জন আহত হয়েছে। “আওয়ামী লীগের ১৭০টা অফিস-বাড়িঘর তারা ভাংচুর করেছে, ৫৪টা স্থানে বোমা হামলা করেছে। পেট্রোল বোমা হামলাও চালানো হয়েছে। ৬৮টি স্থাপনা ও যানবাহনে তারা হামলা করেছে। পুলিশের ওপরও তারা হামলা করেছে।” তিনি বলেন, “বিএনপি-জামায়াত জোটের এই চরিত্রটা বদলাতে হবে। কারণ এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মানুষ কখনো পছন্দ করে না। কখনো পছন্দ করবে না। “সারা বাংলাদেশের সকলকে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। এই ধরনের সন্ত্রাসী কাজ যদি কেউ করতে আসে, তাহলে সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার হাতে তাদের তুলে দিতে হবে।” সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে আওয়ামী লীগের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও আহ্বান জানান দলের সভানেত্রী। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়। এই নির্বাচনটাও শান্তিপূর্ণ হবে। অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবং সবার অংশগ্রহণে এই নির্বাচন অর্থবহ হবে।”
স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিজয়ী হওয়া আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আশা করি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বাংলার জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার একটি বিজয় নিয়ে আসবে। আমি বিশ্বাস করি, জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে এবং আমরা আবার বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করব।”
গত দশ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন, দারিদ্র্যের হার কমানো, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সারাদেশে ডিজিটাল সুবিধা বিস্তৃত করা, প্রতিটি উপজেলায় সরকারি স্কুল স্থাপন, মিনি স্টেডিয়াম করাসহ নানা উন্নয়নের চিত্র এ সময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
আগামীতে ক্ষমতায় এলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া ও দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার ঘোষণা দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় এবং তার সুফলটা মানুষ পায়।” তিনি বলেন, “আমি জানি, বিএনপি-জামায়াতের চরিত্রটাই হল সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অস্ত্র চোরাকারবারী- নানা অপকর্মে এরা লিপ্ত থাকে। ২০১৩,২০১৪ ও ২০১৫ তে এরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। মসজিদে আগুন দিয়েছে, কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে। এরা করেনি এমন কোনো কাজ নেই। “তারা ধ্বংস করতে জানে। তারা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে, বাংলাভাই সৃষ্টি করেছে। এরা শুধু মানুষের ক্ষতি করতে পারে। কাজেই এই ধরনের জঙ্গি-সন্ত্রাসী, যারা দেশের সম্পদ লুটপাট করে, দেশের সম্পদ পাচার করে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে- এরা বাংলাদেশের মানুষকে কিছু দিতে পারবে না।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় জঙ্গি দমনে সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে জঙ্গি-সন্ত্রাস, মাদক দূর করে মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা দিতে চাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে সেটা অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই।”
ভিডিও কনফারেন্সে যশোরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চান।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে আর কোনোদিন জঙ্গিবাদ,সস্ত্রাস দেখতে চাই না। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
“আমরা শান্তি চাই, আমরা চাই আমাদের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া শিখে ভবিষ্যতে এই দেশকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এ কারণে আমরা ইশতেহার উৎসর্গ করেছি তরুণদের। কারণ তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি- এটা আমরা বিশ্বাস করি। কাজেই তরুণদের ভোট আমরা পাব।”
আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তার সরকার সব জায়গায় নারীদের সুযোগ করে দিয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা নিজ নিজ এলাকায় নৌকার পক্ষে গণসংযোগ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “একটা কথা মনে রাখবেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাস করে। কাজেই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ যেন না হয়, সেজন্য প্রত্যেককে নিরাপদে চলতে হবে। সুন্দর পরিবেশ যেন বজায় থাকে সেদিকে দেখতে হবে। প্রত্যেকটা কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে যেন ওরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে।”
বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “ওদের চরিত্র বদলায় নাই। ওরা সন্ত্রাস জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে, মানিলন্ডারিং করে, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা করে, আইভি রহমানসহ ২২জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, এরা অস্ত্র চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত।
“আন্তর্জাতিক তদন্তেও বেরিয়ে এসেছে খালেদা জিয়া আর তার ছেলেরা যে মানিলন্ডারিংয়ের সাথে জড়িত, সন্ত্রাসের সাথে জড়িত, এরা যে দুর্নীতির সাথে জড়িত- সমস্ত আজকে প্রমাণিত।”
ভিডিও কনফারেন্সে পাবনায় নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাইব সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যেন জয়ী হতে পারি সেই ব্যবস্থা করবেন।
“আরেকটা অনুরোধ করব, আপনারা জানেন নির্বাচনের আগে সংলাপ করেছিলাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে। আমরা চাই প্রত্যেকটা দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুক। কারণ, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা তাদের রাজনৈতিক অধিকার।
“সেখানে কোনো রকম বাধা দেওয়া বা কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যেন না হয়। প্রত্যেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কাকে ভোট দেবে।”
পঞ্চগড়ে ভিডিও কনফারেন্সে নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “পঞ্চগড়ে চা বাগান ছিল না। সেটা আমরা করে দিয়েছি। এই অঞ্চলের উন্নয়নে পরিকল্পনা হাতে রয়েছে। আমরা চাই পঞ্চগড় যেমন আগের নির্বাচনে আমাদের জয়যুক্ত করেছিল, এবারও আমাদের জয়ী করবে।”
নিজের নির্বাচনী আসন টুঙ্গীপাড়ার নেতাকর্মীদের সঙ্গেও অডিও কনফারেন্সে যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
তিনি বলেন, “আমি বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছি। আজকে টুঙ্গীপাড়াবাসী তারাই আমাকে স্নেহ দিয়ে, আমাকে সমর্থন দিয়ে আমাকে শক্তি জোগাচ্ছেন, সাহস জোগাচ্ছেন। আমি কৃতজ্ঞ আপনাদের প্রতি। আমার নির্বাচনে আমার কোনো চিন্তা করতে হয় না, সেই দায়িত্বটা আপনারা নিয়েছেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি ৩০০ সিটের নির্বাচন দেখাশোনা করি, আমি বলব ২৯৯টা আমি দেখি, বাকি একটা আপনারা দেখেন। এ জন্য আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আজকে বাবা মা ভাই হারিয়েও আমি পেয়েছি টুঙ্গীপাড়া কোটালিপাড়ায় লাখো মা বোন। আমি তাদের স্নেহ ভালবাসা পেয়েছি, মাতৃস্নেহ পেয়েছি। আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।”
সারাদেশে নৌকা যেন জয়ী হয়, সেজন্য নিজের জন্মস্থানের মানুষের কাছে দোয়া চান বঙ্গবন্ধূকন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমরা ইনশাল্লাহ জাতির পিতার আদর্শে বাংলাদেশ গড়ে তুলব। শিগগিরই এসে আবার জনসভা করে যাব।”