ঢাকা , শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতেবিভিন্ন চক্রান্তে লিপ্ত আ’লীগ গ্রিন সিলেট ট্রাভেলসের আয়োজনে বাংলাদেশে পর্তুগাল দূতাবাস/কনসুলেট চেয়ে খোলা চিঠি স্বৈরাচার সরকার পতনের পর যুক্তরাজ্যে ফিরছেন সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি পর্তুগাল শাখার উদ্যোগে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত! বন্যার্ত মানুষের ত্রান তহবিলের জন্যে ৬ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘোষণা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বেজা শাখার কর্মি সম্মেলন অনুষ্ঠিত বিমানের নতুন চেয়ারম্যান কুলাউড়ার আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও ২৪ কোটা আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা দোয়া মাহফিল পর্তুগালে রাজনগর প্রবাসী ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আত্মপ্রকাশ পর্তুগাল বিএনপি’র আয়োজনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বরণে দোয়া ও মাহফিল সম্পন্ন বিমূর্ত সব মুর্হুতরা, আমার মা’য়ের সাথের শেষ শনিবার – শাহারুল কিবরিয়া

শুধু সীমানা নির্ধারণেই সীমাবদ্ধ বালাগঞ্জ নৌবন্দর

বালাগঞ্জ প্রতিনিধি
  • আপডেটের সময় : ১১:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই ২০২০
  • / ৪৬০ টাইম ভিউ

কুশিয়ারা নদী একসময় আপন ঐশ্বর্যে ভরপুর ছিল। নদীতে ছোট-বড় ডলফিন, শুশুক, ইলিশসহ বহু প্রজাতির মাছ খেলা করত। উত্তাল স্রোতে চলত পাল তোলা নৌকা। লঞ্চ, স্টিমার ও জাহাজ চলত বছরজুড়ে। ঘাটে ঘাটে ছিল নৌকার ভিড়। ছিল কুলি-শ্রমিকদের কোলাহল। কুশিয়ারা নদীকে কেন্দ্র করে বালাগঞ্জ বাজার, শেরপুর ঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্চ বাজার ছিল সদা কর্মতৎপর সচল নৌবন্দর। বিস্তীর্ণ জনপদে কুশিয়ারা নদীর সেচের পানিতে হতো চাষাবাদ। অনেক পরিবারের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন ছিল এই কুশিয়ারা।
কিন্তু এখন এই নদীর দিকে তাকানো যায় না। দিন দিন যেন সংকীর্ণ হয়ে আসছে তার গতিপথ। অথৈ জলের পরিবর্তে কেবল কান্নার সুরই যেন ভেসে আসে কুশিয়ারার বুক থেকে। তাই তো বছরের অধিকাংশ সময় স্রোতহীন অবস্থায় থাকছে কুশিয়ারা। তাছাড়া বিগত কয়েকবছর যাবৎ নদীতে চর জেগে ওঠায় প্রভাবশালী মহল বিশেষ বালু ব্যবসায় মেতে উঠেছে। আর অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে নদীর পাড়ে দেখা দেয় ভয়াবহ ভাঙন।
এদিকে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বালাগঞ্জ এলাকায় নৌবন্দর স্থাপনের লক্ষ্যে সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের টিএ শাখার উপ-সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গত ২৮ জুন প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বালাগঞ্জে নৌবন্দরের তফসিলে পশ্চিমে হবিগঞ্জের আজমেরীগঞ্জ উপজেলা ও পূর্বে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে কোন স্থানে নৌবন্দর স্থাপন করা হবে কিংবা কবে নাগাদ এটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে তা উল্লেখ করা হয়নি। নৌবন্দরের সীমানা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জেনে না জেনে এ নিয়ে অনেকেই নানা মন্তব্য করতে দেখা গেছে। কেউ বলছেন নৌবন্দরের সীমানা নির্ধারণেই কী সীমাবন্ধ থাকবে? কেউ বলছেন নৌবন্দরের কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সীমানা নির্ধারণে অনেকেই ব্যক্তি বিশেষের কৃতিত্বকে তুলে ধরেছেন। অনেকেই আবার ব্যক্তি বিশেষের কৃতিত্বকে তুচ্ছ করেছেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যথেষ্ট বরাদ্দ থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে নৌবন্দর স্থাপনের একটি ধাপ এগোলো। ভবিষ্যতে এটি বাস্তবায়নের ঘোষণা এলে কাজ শুরু হবে।
বিগত দিনে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালাগঞ্জে নৌবন্দর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার আবেদন করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় ধাপে ধাপে নদী এলাকার তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের নিকট একটি চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮২২ সালে আসামে চা-শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে চালু করা হয় আসাম-কলকাতা নৌরুট। কলকাতা-করিমগঞ্জ ভায়া প্রায় ১২৮৫ কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত কুশিয়ারা নৌপথে ১৫টি গুরুত্বপুর্ণ ঘাটে স্টিমার ও জাহাজ নোঙর করত। এর মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ স্টিমার ঘাটে যাত্রা বিরতি ছিল অধিকতর। তৎকালীন সময়ে কুশিয়ারা নদী দিয়ে ৩টি গুরুত্বপুর্ণ সার্ভিস চালু ছিল। সেগুলো হলো ফেঞ্চুগঞ্চ-করিমগঞ্জ ডেইলি ফিডার সার্ভিস, ফেঞ্চুগঞ্জ-মৌলভীবাজার ভায়া মনু মুখ ফিডার সার্ভিস ও ফেঞ্চুগঞ্জ-মার্কুলী ফিডার সার্ভিস। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন লঞ্চ ও নৌ সার্ভিস তো ছিলই। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়া পর্যন্ত তা চালু ছিল

পোস্ট শেয়ার করুন

শুধু সীমানা নির্ধারণেই সীমাবদ্ধ বালাগঞ্জ নৌবন্দর

আপডেটের সময় : ১১:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই ২০২০

কুশিয়ারা নদী একসময় আপন ঐশ্বর্যে ভরপুর ছিল। নদীতে ছোট-বড় ডলফিন, শুশুক, ইলিশসহ বহু প্রজাতির মাছ খেলা করত। উত্তাল স্রোতে চলত পাল তোলা নৌকা। লঞ্চ, স্টিমার ও জাহাজ চলত বছরজুড়ে। ঘাটে ঘাটে ছিল নৌকার ভিড়। ছিল কুলি-শ্রমিকদের কোলাহল। কুশিয়ারা নদীকে কেন্দ্র করে বালাগঞ্জ বাজার, শেরপুর ঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্চ বাজার ছিল সদা কর্মতৎপর সচল নৌবন্দর। বিস্তীর্ণ জনপদে কুশিয়ারা নদীর সেচের পানিতে হতো চাষাবাদ। অনেক পরিবারের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন ছিল এই কুশিয়ারা।
কিন্তু এখন এই নদীর দিকে তাকানো যায় না। দিন দিন যেন সংকীর্ণ হয়ে আসছে তার গতিপথ। অথৈ জলের পরিবর্তে কেবল কান্নার সুরই যেন ভেসে আসে কুশিয়ারার বুক থেকে। তাই তো বছরের অধিকাংশ সময় স্রোতহীন অবস্থায় থাকছে কুশিয়ারা। তাছাড়া বিগত কয়েকবছর যাবৎ নদীতে চর জেগে ওঠায় প্রভাবশালী মহল বিশেষ বালু ব্যবসায় মেতে উঠেছে। আর অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে নদীর পাড়ে দেখা দেয় ভয়াবহ ভাঙন।
এদিকে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বালাগঞ্জ এলাকায় নৌবন্দর স্থাপনের লক্ষ্যে সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের টিএ শাখার উপ-সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গত ২৮ জুন প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বালাগঞ্জে নৌবন্দরের তফসিলে পশ্চিমে হবিগঞ্জের আজমেরীগঞ্জ উপজেলা ও পূর্বে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে কোন স্থানে নৌবন্দর স্থাপন করা হবে কিংবা কবে নাগাদ এটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে তা উল্লেখ করা হয়নি। নৌবন্দরের সীমানা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জেনে না জেনে এ নিয়ে অনেকেই নানা মন্তব্য করতে দেখা গেছে। কেউ বলছেন নৌবন্দরের সীমানা নির্ধারণেই কী সীমাবন্ধ থাকবে? কেউ বলছেন নৌবন্দরের কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সীমানা নির্ধারণে অনেকেই ব্যক্তি বিশেষের কৃতিত্বকে তুলে ধরেছেন। অনেকেই আবার ব্যক্তি বিশেষের কৃতিত্বকে তুচ্ছ করেছেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যথেষ্ট বরাদ্দ থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে নৌবন্দর স্থাপনের একটি ধাপ এগোলো। ভবিষ্যতে এটি বাস্তবায়নের ঘোষণা এলে কাজ শুরু হবে।
বিগত দিনে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালাগঞ্জে নৌবন্দর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার আবেদন করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় ধাপে ধাপে নদী এলাকার তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের নিকট একটি চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮২২ সালে আসামে চা-শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে চালু করা হয় আসাম-কলকাতা নৌরুট। কলকাতা-করিমগঞ্জ ভায়া প্রায় ১২৮৫ কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত কুশিয়ারা নৌপথে ১৫টি গুরুত্বপুর্ণ ঘাটে স্টিমার ও জাহাজ নোঙর করত। এর মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ স্টিমার ঘাটে যাত্রা বিরতি ছিল অধিকতর। তৎকালীন সময়ে কুশিয়ারা নদী দিয়ে ৩টি গুরুত্বপুর্ণ সার্ভিস চালু ছিল। সেগুলো হলো ফেঞ্চুগঞ্চ-করিমগঞ্জ ডেইলি ফিডার সার্ভিস, ফেঞ্চুগঞ্জ-মৌলভীবাজার ভায়া মনু মুখ ফিডার সার্ভিস ও ফেঞ্চুগঞ্জ-মার্কুলী ফিডার সার্ভিস। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন লঞ্চ ও নৌ সার্ভিস তো ছিলই। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়া পর্যন্ত তা চালু ছিল