শুধুমাত্র ফুটবলকে মনেপ্রাণে ধারণ করে কুলাউড়ার ফুটবলের তারকা শেখ আলী আজন
- আপডেটের সময় : ১২:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / ৫৮১ টাইম ভিউ
শুধুমাত্র ফুটবলকে মনেপ্রাণে ধারণ করে কুলাউড়ার ফুটবলের তারকা শেখ আলী আজন
সন্দেহাতীতভাবে এই পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার নাম ফুটবল। পৃথিবীর এমন কোন দেশ নাই যেখানে ফুটবল খেলা হয়না। জনপ্রিয় এই খেলাটির দর্শক সংখ্যা ৫০০ কোটির উপরে। পুরো খেলাটি কেন্দ্রীভুত হয় একটা মাত্র বলকে কেন্দ্র করে। এই বলের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং ক্যারিশমা দেখিয়ে অনেক ফুটবলার তারকা খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই তালিকায় আমাদের কুলাউড়ায় রয়েছেন খলিলুর রহমান, গিয়াস উদ্দিন মান্না, আব্দুল মুকিত মিকি, অাবুল খয়ের ফয়সাল, কাবুল পাল, আব্দুস সালাম সহ আরো ডজন খানেক ফুটবলার। কিন্তু ফুটবল না খেলেও শুধু মাত্র ফুটবলকে ভালোবেসে, মনে প্রাণে ধারণ করে, নিঃস্বার্থ ভাবে ফুটবলের জন্য শ্রম কিংবা মেধা দিয়ে, দিনের পর দিন মাঠে পড়ে থেকে তারকা খ্যাতি পেয়েছেন এই ধরণের লোক কুলাউড়াতে শুধু একজনই আছেন যার নাম শেখ মো. আলী আজন।
জয়পাশা, কুলাউড়ার ফুটবল ইতিহাসের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত একটি নাম। অনেক খ্যাতিম্যান ফুটবলার এবং সংগঠকের জন্ম দিয়েছে ফুটবল উম্মাদনায় এগিয়ে থাকা কুলাউড়ার অন্যতম এই জনপদটি। যেকোন টুর্নামেন্টে জয়পাশার অংশগ্রহণ এই টুর্নামেন্টের জৌলুস এবং আকর্ষণ অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। কুলাউড়ার ফুটবলের এই উর্বর জায়গাতে ১৯৬৭ সালের ২০ জুলাই প্রয়াত শেখ রাশিদ উল্লাহ এবং জবেতুন বিবি দম্পত্তির ঘরে জন্ম হয়েছিলো কুলাউড়ার ফুটবলের অন্যতম সেরা এবং জনপ্রিয় সংগঠক শেখ আলী আজনের।
নব্বই দশকের শেষের দিকে আমরা যখন কলেজে পড়তাম, বিকেলে এনসি স্কুল মাঠের মাইকে ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা “শেখ আলী আজন ” এই নামটা এতো বেশী শুনতাম যে একসময় বিরক্তি চলে আসতো। আজ পরিণত বয়সে বুঝি কেন বার বার মাইকে উনার নাম ভাসতো। কল্যাণ সমিতির টুর্নামেন্ট হবে, মাঠ ঠিক করতে হবে কোদাল হাতে প্রস্তুত শেখ আলী আজন, লাইন টানার জন্য প্রস্তুত আলী আজন, রেফারী লাইন্সম্যানের তালিকা করতে হবে প্রস্তুত আলী আজন, খেলার পূর্বে বৃষ্টির জন্য মাঠ খেলার অনুপোযুক্ত সংস্কার করার কাজে সামনের ব্যক্তি শেখ আলী আজন, খেলা শেষে মঞ্চে পুরষ্কার বিতরণ চলছে আর আলী আজন মাঠ থেকে ফ্ল্যাগ সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত। মোট কথা খেলা শুরুর পূর্বে সবার আগে মাঠে উপস্থিত হবেন এবং খেলা শেষে সবার পরে মাঠ থেকে প্রস্থান করেন যে ব্যক্তি তার নাম শেখ আলী আজন।
ফুটবলের প্রতি আলী আজনের আসক্তি জয়পাশার একসময়ের কৃতি ফুটবলার উনার চাচা শেখ হেকিম উল্লাহকে দেখে। কুলাউড়ার জনপ্রিয় সংগঠন জয়পাশা যুব সংস্থার সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন আলী আজন। তরুণ বয়সে ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্রের একজন অন্ধ ভক্ত ছিলেন এবং এই ভক্তির কারণে ১৯৮৮ সালে সাবেক এমপি এম এম শাহীনের ভাই নাহিদুর রবকে সাথে নিয়ে কুলাউড়ায় গঠন করেন জুনিয়র আবাহনী ক্রীড়া চক্র সমর্থন গোষ্টী । এক ঝাঁক তরুণ এবং মেধাবী ফুটবলারদের নিয়ে গঠিত এই সংগঠন কুলাউড়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই ক্লাবের ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মনসুরের মাসুম চৌধুরী যিনি বর্তমানে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা, সালাহউদ্দিন লাভলু বর্তমানে প্রাইম ব্যাংক বড়লেখা শাখার ম্যানেজার, অস্টেলিয়া প্রবাসী বাবু(উত্তরবাজার ) মামুন বক্স, প্রয়াত আজমল আলী শামীম, ঠিকাদার মুহিবুর রহমান কোকিল,চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন কমরু, ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন, বদরুল, আমেরিকা প্রবাসী আব্দুল কাদির মোমিন,, শওকত, ফয়ছল সহ আরো অনেক কিশোররা । আলী আজনের হাতে গড়া এই সংগঠনের খেলোয়াড়রা বর্তমানে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
১৯৯৪ সাল থেকে শুরু করে ২০২০, এই ছাব্বিশ বছর ধরে শেখ আলী আজন কুলাউড়ার মাঠের ফুটবলের সাথে সম্পৃক্ত এবং এখনো অপরিহার্য ব্যক্তিত্ব, কখনো খেলা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবার কখনো শুধু সাধারণ সদস্য হয়ে। কুলাউড়ার ফুটবলের ইতিহাস থেকে এই ধরনের একজন ফুটবলপ্রেমী মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
কুলাউড়া থেকে ভালো ফুটবলার উঠে না আসার কারণ হিসেবে তিনি অর্থনৈতিক দৈন্যতাকেই দায়ী করেন। বর্তমানে যারা ফুটবল খেলছেন তাদের বেশীরভাগই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। খেলার পাশাপাশি তাদেরকে পরিবারের বোঝাও টানতে হয় যে কারণে ফুটবলে তারা পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারেনা বলে শেখ আলী আজন মনে করেন। আর অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল পরিবারের ছেলেরা ফুটবল খেলতে তেমন একটা আগ্রহী নয়।
আমাদের বর্তমান সমাজের অনেক সংগঠকই আছেন যারা শুধুমাত্র নিজের প্রচার প্রচারণার জন্য খেলাধুলায় সম্পৃক্ত হোন। কিন্তু ফুটবলকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে মনের টানে ফুটবল খেলায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এধরণের মানুষ তেমন একটা চোখে পড়েনা। শেখ আলী আজন এই ধরনেরই একজন সংগঠক যিনি সবসময় নিজেকে প্রচারবিমুখ রেখে কুলাউড়ার ফুটবলের উন্নয়নে নীরবে মরার আগ পর্যন্ত কাজ করে যেতে চান। কুলাউড়ার মতো একটা মফস্বল অঞ্চলের ফুটবলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আমাদের আরো কয়েকজন আলী আজনের প্রয়োজন।