রূপগঞ্জে রকেট লঞ্চার-গ্রেনেড-রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার
- আপডেটের সময় : ১১:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুন ২০১৭
- / ১৬১০ টাইম ভিউ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ৫ নং সেক্টরের একটি লেক থেকে ৬২টি চাইনিজ এসএমজি রাইফেল, ৫টি ৭.৬২ পিস্তল, ২টি রকেট লাঞ্চার, ৪৯টি মটারসেল, ২টি ওয়ারলেস, ১৫২৭ পিস গুলি, ৬০টি ম্যাকজিন, ৪৯টি গ্রেনেড ও ৪৯টি ডেটোনেটর উদ্ধার করা হয়।
অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে এক পর্যায়ে বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিচালক (আইজিপি) শহিদুল হক বলেন, একটি চক্র নাশকতার লক্ষ্যে এসব অস্ত্র গোলাবারুদ মজুদ রেখেছিল বলে ধারনা করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে চক্রটিকে আটকের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বাগলা এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে শরীফ মিয়ার বাড়িতে বড় ধরনের অবৈধ অস্ত্র রয়েছে বলে পুলিশের কাছে সংবাদ আসে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ শরীফ মিয়ার বাড়িতে থেকে একটি এলএমজি রাইফেল উদ্ধার করে। তবে শরীফ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এরপর পরের দিন বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া এলাকা থেকে শরীফ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
শরীফ মিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র ওসি মাহমুদুল ইসলাম ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার পুর্বাচল উপশহরের ৫নং নম্বর গুতিয়াবো আগারপাড়া এলাকার বালুচর থেকে প্রথমে দুটি এসএমজি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করা হয়।
পরে দ্বিতীয় দফায় ভুইয়া বাড়ি ব্রিজ সংলগ্ন লেকের পানি থেকে পর্যায়ক্রমে ৬২টি চায়না এসএমজি, ৫টি ৭.৬২ পিস্তল, ২টি রকেট লাঞ্চার, ৪৯টি মর্টারশেল, ২টি ওয়ারলেস, ১৫২৭ পিছ গুলি, ৬০টি সাময়িকী, ৪৯টি গ্রেনেড ও ৪৯টি ডেটোনেটর উদ্ধার করে।
ঘটনাস্থলের চার দিক অতিরিক্ত র্যাব ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। অভিযান পরিচালনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়।
এদিকে, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন পুর্বাচল উপশহরের আশ-পাশে বসবাসরত এলাকাবাসী। এ ধরনের অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুর্বাচল উপ-শহর এলাকাটি এক সময় জনবহুল এলাকা ছিল। রাজধানীর অতি কাছের এ এলাকাটিতে হাজার হাজার মানুষের বসবাস ছিলো। পুর্বাচল উপশহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক পুরো এলাকাটিকে অধিগ্রহণ করে নেয়। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। বর্তমানে পুরো পুর্বাচল উপশহরটি ফাঁকা ও নির্জন অবস্থায় রয়েছে। অপরাধীরা নিরাপদ স্থান হিসেবে পুর্বাচল উপশহরকে বেঁচে নিয়েছে। এখানে প্রায় সময়ই লাশ উদ্ধারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে থাকে। বিশেষ করে ৫নং সেক্টরের লেকটি একেবারেই নির্জন ও দুর্গম জায়গা। হয়তো নিরাপদ ভেবে অপরাধীরা এখানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ রেখেছে।
পূর্বাচল উপশহরের আদিবাসি গুতিয়াব এলাকার মাজহারুল ইসলাম জানান, এই এলাকা লোকজন না থাকায় নিরব পড়ে থাকে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন দামী গাড়ি করে অচেনা লোকজন যাতায়াত করে থাকে। ফলে এই এলাকায় নানা অপরাধ ঘটে থাকে।
স্থানীয়দের দাবী এই এলাকার দিন-দুপুরে কালো গ্লাস ব্যবহারকারী দামি গাড়ির আনাগোনা থাকে। ফলে কে বা কারা এখানে নিত্য নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। ফলে নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।
জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, খালে আরও অস্ত্র থাকতে পারে। এ জন্য খালে সেচে অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকলে তা উদ্ধার করা হবে।
দুপুর ২টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মাহমুদুল ইসলাম বলেন, এসবের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং দেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়ন রক্ষা করা হবে।