যেভাবে জবাই করবেন কুরবানির জন্তু | দেশদিগন্ত
- আপডেটের সময় : ০৮:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ জুন ২০২৩
- / ৬১৩ টাইম ভিউ
ঈদুল আযহা উপলক্ষে অনেকেই মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কুরবানি করবেন। আমরা অনেকেই কুরবানির পবিত্র জন্তু জবাই করার ক্ষেত্রে পশুকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলি, এদিকে আমরা খেয়ালে গাফিলতি করি। হাজার হাজার টাকা দিয়ে কুরবানির জন্তু খরিদ করি। কিন্তু কয়েক শত টাকায় একটি ধারাল ছুরি ক্রয় করতে বড় ক্লান্ত হই। যার কারণে আমরা কুরবানির পশু জবাই করতে গিয়ে এই পবিত্র জন্তুটিকে অনেক কষ্ট দেই, যা মোটেই কাম্য নয়।
হাদীস শরীফে এসেছে: যখন তােমরা পশু যবাই করবে , তখন তার উপর রহম করাে। [এর পদ্ধতি হল: তােমরা ছুরিকে ভালভাবে ধার দেয়া বা জবাইয়ে ধারাল ছুরি ব্যবহার করা যাতে জবাইয়ের সময় পশুর কষ্ট কম হয়।]
আজ আপনাদের সামনে কুরবানির পবিত্র জন্তু জবাই সংক্লান্ত কিছু মাসআলা ইসলামী শরীয়া’হর আলােকে পেশ করবাে, ইনশাআল্লাহ।
এই নিয়মাবলির আলোকে আপনারা সবাই শরীয়ত সম্মতভাবে কুরবানির পশুটি জবাই করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে আশা রাখি।
★ ১০ জিলহজ্ব ঈদের নামাজ আদায়ের পর থেকে ১২ জিলহজ্ব পর্যন্ত মোট তিন দিন কুরবানি করা জায়িজ। রাত্রে কুরবানি করা মাকরুহ, তবে যদি রাতে কুরবানি করলে কোন ভুল হওয়ার সম্ভবনা না থাকে অর্থাৎ আলোর পূর্ণ ব্যবস্হা থাকে তাহলে রাতে কুরবানি করা জায়িয আছে,তবুও অনুত্তম। [ফাতাওয়ায়ে শামি, পৃ.৩২০ খণ্ড.৬ এইচ,এম,সাইদ]
★ আপন কুরবানির পশু নিজ হাতেই কুরবানি করা মুস্তাহাব।
★ কুরবানি-দাতা যদি নিজে কুরবানি করতে না জানেন, তাহলে কুরবানি-দাতা নিজে উপস্থিত থেকে অন্য কোনো মুসলমান ব্যক্তির দ্বারা কুরবানি করানাে উত্তম।
# যার উপর কুরবানি ওয়াজিব, তার পক্ষ হতে অন্যজন কুরবানি করলে তার অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।
অনুপস্থিত বা প্রবাসি ব্যক্তির ওয়াজিব কুরবানি অন্য কেহ তার পক্ষ হতে আদায় করলে জন্তু জবাই করার পূর্বে তার অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।
এমনকি যদি কোন ব্যক্তি উপস্থিত কাহারও ওয়াজিব কুরবানি বা দেশে অবস্থানরত কাহার ওয়াজিব কুরবানি তার অনুমতি না নিয়ে আদায় করে, তাহলে ঐ ওয়াজিব কুরবানি আদায় হবে না।
[ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, পৃ.৩৪৮,খণ্ড.৫, মাক,আশরাফিয়া]
# একজন আরেকজনের নফল কুরবানি করার জন্য অনুমতি নেওয়া জরুরী নয়।
অনুমতি ছাড়াও অন্যের নামে নফল কুরবানি করা জায়িয আছে। (সুনানে আবি দাউদ,পৃ.৩৮৫,মাক,ইসলামিয়া]
♦ আলেম বা ইমাম সাহেবকে দিয়ে কুরবানির জন্তু জবাই করানাে জায়েজ আছে, কিন্তু জবাইকারিকে বিনিময় হিসাবে জবাইকৃত জন্তুর চামড়া বা গােশত দেওয়া জায়িজ নয়। তবে হ্যাঁ, তাকে পারিশ্রমিক দেওয়া উত্তম,[কিছু টাকা দিতে পারেন]
তবে তা কুরবানির গােশত বা চামড়ার মাধ্যমে পারিশ্রমিক দেওয়া বৈধ নয়। [ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া,পৃ.৩৪৮ খণ্ড.৫ মাক,আশরাফিয়া]
♦ মহিলারা যদি কুরবানি করতে ভয় পায়, বা তাদের হাত না চলে, তাহলে বিশেষ প্রয়ােজন ছাড়া তাদেরকে কুরবানির পশু জবাইর কাজে তাদের না দেওয়াই উত্তম।
♦ কুরবানির একটি জন্তু অন্যটির সামনে জবাই করবেন না, এটা মারাত্মক অমানবিকতা ও শরিয়ত অসমর্থিত কাজ।
♦ যবাই করার পূর্বে জন্তুকে ভালভাবে ঘাস, পানি ইত্যাদি খাওয়াবেন এবং ছুরি ভালভাবে ধার দিয়ে নেবেন। ভােঁতা ছুরি দ্বারা জবাই করা মাকরুহ।
♦ অগ্নিপূজক দ্বারা কুরবানির জন্তু জবাই করানাে জায়িজ নয়, এবং উক্ত কুরবানির গােশত হালাল নয়।
♦ জবাই করার সময় জন্তুকে যথাসম্বব সহজভাবেই জবাই করবে। অধিক কষ্ট দেওয়া থেকে জন্তুকে সাধ্যানুসারে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
♦ হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় নবী সা. বলেন:
‘আজকের দিন আমাদের প্রথম কাজ হলো ঈদের নামাজ আদায় করা। তারপর কুরবানি করা।
[বুখারি শরীফ, পৃ. ১৩১ খণ্ড ০১, মা. মুহাম্মদিয়া]
সুতরাং কেউ যদি ঈদের নামাজের পূর্বে জবাই করে নেয়, তাহলে সে নিজের জন্য জবাই করল,[ তার কুরবানি শুদ্ধ হবে না] নামাজের পর তার ওপর পুনরায় একটি কুরবানি করা ওয়াজিব।
♦ মুসলিম শরীফের হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ঈদের নামাজের পূর্বে জবাই করল, সে নিজের জন্যই জবাই করল। [তার কুরবানি আদায় হবে না।] আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পরে জবাই করল, সে তার কুরবানিকে পূর্ণ করল এবং মুসলমানদের সুন্নাহটি পূর্ণরূপে আদায় করলো।
♦ কুরবানির পশুকে কিবলামুখি করে শোয়াবেন। একান্ত অসুবিধা ব্যতীত এর উল্টো করবেন না।
♦ কুরবানির জন্তুকে যখন পশ্চিমমূখি করে শুয়ানাে হয়, তখন নিম্নোক্ত দু’আটি পড়া মুস্তাহাব:
انى وجهت وجهى للذى فطر السموات والارض حنيفا وما انا من المشركين، ان صلاتى ونسكى و محياى ومماتى لله رب العلمين، لا شريك له وبذلك امرت و انا اول المسلمين، اللهم منك و لك!
♦ তারপর بسم الله الله أكبر বলে জবাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে এই দুআ পড়বেন:
الهم تقبل منى كم تقبلت من حبيبك محمد و خليلك ابراهيم عليهما الصلاة و السلام.
যদি অন্যের পক্ষ থেকে কুরবানি করা হয় তাহলে ‘মিন্নী’ শব্দের স্থলে ‘মিন’ পরে অমুক অমুক ব্যক্তির নাম [যেমন: মিন আব্দুল কাদির,আব্দুর রহিম ইত্যাদি] নাম বলে নিবেন।
♦ পশু জবাইয়ের সময় চারটি রগ কাটা জরুরী: খাদ্যনালী,শ্বাসনালী, এবং শ্বাসনালীর উভয় পাশের দু’টি মােটা রগ।
♦ উপরোক্ত চারটি রগের মধ্যে যদি তিনটি রগ কেটে যায়, তাহলে কুরবানি জায়েয হয়ে যাবে। এর কম হলে কুরবানি শুদ্ধ হবে না।
[রদ্দুল মুহতার আলাদ্ দুররিল মুখতার, পৃ.৪২৪,খণ্ড.৯ মাক,দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ]
# কুরবানির পশুর গলা একেবারে পৃথক করা মাকরুহ।
★ জবাই করার পর জন্তু একেবারে শান্ত [মরে যাওয়া] হওয়ার পূর্বে চামরায় চাঁকু লাগানো মাকরুহ। [তাতারখানিয়া, পৃ.৩৯৭ খণ্ড.১৭ মাক: যাকারিয়া]
# জবাই কাজ পূর্ণ সম্পাদনের পর জন্তুর চামড়াটি নিজে ব্যবহার করতে পারবে অথবা গরিবকে বা [মাদরাসার] এতিমখানায় সদকা করে দিবেন, তা বিক্রি করে দিলে মূল্য সদকা করা আবশ্যক। [হিন্দিয়া,পৃ.৩৪৮ খণ্ড.৫ মাক.আশরাফিয়া]
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সহি-শুদ্ধরূপে কুরবানির পশু জবাই করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের কুরবানি ও সমস্ত আ’মাল কবুল করুন। আমিন।
লেখক: মুফতি আহমদ রাফি জাকির
মুফতি ও মুহাদ্দিস:
জামেয়া আবুহুরায়রা রা. আল-ইসলামিয়া এয়ারপোর্ট,সিলেট।