যুক্তরাষ্ট্রের ভাসমান ট্রেনের আবিষ্কারক বাংলাদেশি বিজ্ঞানী
- আপডেটের সময় : ১০:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০১৯
- / ৪৯১ টাইম ভিউ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশি পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আতাউল করিম। তিনি দ্রুতগামী ভাসমান ট্রেন আবিষ্কার করেছেন।
ড. করিমের পূর্বপুরুষরা ভারতের আসাম ও মেঘালয় থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন। তার মা এদেশে এসেছিলেন বিয়ের পর। ছেলের গৃহশিক্ষক ছিলেন তিনিই। প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষার জন্য ড. করিম সাতমা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েন।
১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে অংশ নিয়ে ৩৯,৮৬৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে।১৯৭৬ সালে বিএসসি (সম্মান) পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলে যান। ভর্তি হন সেখানকার আলবামা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৭৮ সালে পদার্থবিদ্যায় এবং ১৯৭৯ সালে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
এরও আগে তিনি (১৯৯০-১৯৯৮) ওহিও রাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ডাইটনের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ইলেক্ট্রো-অপটিকস বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৫ সাল থেকে টেকনিক্যাল কমিটি অব ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইলেক্ট্রনিক্স, টেকনোলজি অ্যান্ড অটোমেশনের (আইইটিএ) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিবছর গবেষণা জার্নালে প্রকাশের জন্য লেখা এক ডজনেরও বেশি নিবন্ধ পর্যালোচনা করেন তিনি।
গবেষণা ও লেখালেখি: ড. আতাউল করিমের গবেষণার পরিধি ব্যাপক ও বিশাল। এরমধ্যে রয়েছে- অপটিক্যাল কম্পিউটিং, প্যাটার্ন/টার্গেট রিকগনিশন, নাইট ভিশন, বিভিন্ন প্রকার ডিসপ্লে, ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল সিস্টেমস, সেন্সরস প্রভৃতি।তার গবেষণামূলক কাজের পৃষ্ঠপোষক মার্কিন বিমান বাহিনী, মার্কিন নৌ গবেষণা কেন্দ্র, ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন, মার্কিন মহাশূন্য গবেষণা কেন্দ্র (নাসা), যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ, ওহিও অ্যারোস্পেস ইনস্টিটিউট, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স ও রাইট প্যাটারসন এয়ার ফোর্স বেস।
ছাত্রজীবনেই তিনি ৫৭ জন এমএস বা পিএইচডি শিক্ষার্থীর রিসার্চ মেন্টর বা গবেষণা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। লেখালেখিতেও যথেষ্ট সফল তিনি। অপটিকস অ্যান্ড ল্যাসার টেকনোলজি ম্যাগাজিনের নর্থ আমেরিকান সম্পাদক তিনি। এছাড়াও তিনি আইইই ট্রানজেকশনস অ্যান্ড এডুকেশনের সহযোগী সম্পাদক, মাইক্রোওয়েভ অ্যান্ড অপটিক্যাল টেকনোলজি লেটারস এবং ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব মডেলিং অ্যান্ড সিমুলেশনের সম্পাদনা পরিষদের সাথে জড়িত।
২৪টি বিশেষ সাময়িকীর অতিথি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি লিখেছেন ১৮টি পাঠ্য ও রেফারেন্স বই, সাড়ে তিনশ’রও বেশি গবেষণাপত্র, সাতটি বইয়ের অধ্যায়, দশটি গ্রন্থ পর্যালোচনা, অসংখ্য টেকনিক্যাল রিপোর্ট, সম্পাদকীয় প্রভৃতি। তার লেখা বই বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়।তিনি ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারস (আইইইই), দ্য অপটিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকা, দ্য সোসাইটি অব ফটো-ইনস্ট্রুমেন্টেশন ইঞ্জিনিয়ার্স (এসপিআইই), ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্স ইন ইউনাইটেড কিংডম ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের নির্বাচিত ফেলো এবং ইউনিভার্সিটি অব আলবামার সম্মানিত ইঞ্জিনিয়ারিং ফেলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুততম ভাসমান ট্রেন চলাচল প্রযুক্তি বাস্তবায়নে ড. আতাউল করিমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
পুরস্কার ও সম্মাননা: বিজ্ঞানের জগতে বিশাল অবদানের জন্য অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ড. করিম। এরমধ্যে ১৯৯৮ সালে আউটস্ট্যান্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৪ সালে আউটস্ট্যান্ডিং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯১ সালে অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ড ইন স্কলারশিপ, ১৯৯০ সালে নাসা টেক ব্রিফ অ্যাওয়ার্ড ও আপ অ্যান্ড কামার্স এডুকেশন অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৮ সালে এনসিআর স্টাকেহোল্ডার অ্যাওয়ার্ড প্রভৃতি।তিনি ‘আমেরিকান ম্যান অ্যান্ড ওম্যান ইন সায়েন্স’, ‘হু’জ হু ইন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’, ‘হু’জ হু ইন আমেরিকা’, ‘আউটস্ট্যান্ডিং পিপল ইন টুয়েন্টিন্থ সেঞ্চুরি’, ‘ডিকশনারি ইন ইন্টারন্যাশনাল বায়োগ্রাফি’ এবং ‘টু থাউজেন্ড আউটস্ট্যান্ডিং সায়েন্টিস্টস’র তালিকাভুক্ত। বাংলাদেশের বিজ্ঞান লেখক মোহাম্মদ কায়কোবাদের ‘মেধাবী মানুষের গল্প’ বইয়ে আতাউল করিমের কৃতিত্বের কথা উল্লেখ আছে।
পারিবারিক জীবন: আতাউল করিম ১৯৭৭ সালে একসময়ের সহপাঠী সেতারাকে বিয়ে করেন। সেতারা করিম পেশায় একজন বায়োকেমিস্ট। তারা ভার্জিনিয়া রাজ্যের ভার্জিনিয়া বিচে থাকেন। তারা এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক-জননী। ছেলের নাম লুৎফি এবং মেয়ের নাম লামিয়া ও আলিয়া।একজন বিজ্ঞানী হিসেবে ড. আতাউল করিমের অবস্থান আমাদের কাছে স্পষ্ট। ভবিষ্যতে যদি নোবেল পুরস্কারও জিতে যান, তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, তার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম জীবনে বড় হওয়ার অনেক অনুপ্রেরণা পাবে। তবে আজ পর্যন্ত এদেশে ড. করিমকে কোন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হয়নি। আশা করি সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।