ভাগ্যবান কুয়েত প্রবাসী এমপি দম্পতি, সংসদের ইতিহাসে প্রবাসীর রেকর্ড
- আপডেটের সময় : ১১:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ মার্চ ২০১৯
- / ১৮১৭ টাইম ভিউ
শেখ নিজামুর রহমান টিপু : দীর্ঘ প্রবাসজীবন কাটিয়ে মাত্র দের বছর আগে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হোন তিনি। হ্যা এর আগে কুয়েতে দির্ঘ ৫/৬ বছর ধরে আওয়ামীলগের রাজনীতিতে খুবই সক্রিয় এবং কাজ করে গেছেন, যদিও আওয়ামীদের সুবিদাবাদীরা উনার বিরোধিতা করে আসছিলো । তবে তা সত্য দেশে অপরিচিত একজন ,কি রাজনৈতিক অঙ্গন, কি এলাকা- কোথাও তেমন পরিচিতি ছিল না উনার। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেও তা প্রতিক পান নি, সিন্ধান্ত নেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রার্থী হবেন, প্রসাশনিক কর্মকর্তারা উনা সাহস যোগিয়েছিলেন প্রার্থী হওয়ার জন্য।এবং যে কোনো কৌশলে হোক আওয়ামীলীগের সমর্থিত মহাজোট জাতীয়পাটির প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান কে বসিয়ে দিবেন , যেমন ভাবনা থেমনি কাজ । মহাজোটের প্রার্থী গেলেন আর উনি হয়ে গেলেন আপেল প্রতিকে আওয়মালীগের প্রার্থী এবং এমপি নির্বাচিত হয়ে গেলেনও তিনি। তাঁর স্ত্রীও সংরক্ষিত (নারী) স্বতন্ত্র আসনে এমপি হতে যাচ্ছেন। এই ভাগ্যবান দম্পতি হলেন কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল ও সেলিনা ইসলাম। রাজনীতিতে এসেই তারা বাজিমাত করলেন। যদিও সেলিনা ইসলামের রাজনৈতিক কোনো অতিত নেই, তবে কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের পারিবারিক রাজনৈতিক অতিত আছে ।উনি পাঁচ বছর আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন যে করেই হোক, যেভাবে হোক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন , এবং আওয়ামীলীগের প্রার্থীতা পাওয়ার জন্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রভাবশালী সদস্য বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী দিপু মনি সহ কয়েকজন গোপালগন্জের নেতাদের কুয়েতে এনে শোডাউনও করেছিলেন । একাদশ জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র ও সংরক্ষিত (নারী) স্বতন্ত্র এমপি হয়ে সর্বত্র আলোচিত এই প্রবাসী দম্পতি। দেশ বিদেশের বুদ্ধিজিবীরা যদিও বলেছেন ২৯ তারিখ রাতে ও ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উনার স্বামী কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদর আংশিক) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আপেল প্রতীক) হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। একই সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্র এমপিদের পক্ষ থেকে এমপি নির্বাচিত হতে হলেন তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম। মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমানের রহস্যজনক উধাওয়ের পর আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন শহীদ ইসলাম পাপুল। কুয়েত প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল দেরবছর আগে তাঁর নিজ গ্রাম লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে যাওয়া আসা শুরু করেন । এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কে সাথে নিয়ে দান-অনুদান দিয়ে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। এমন কি উনার উপজেলায় আওয়ামলীগের অংগসংগঠনকে যতগুলো মোটর সাইকেল দিয়েছেন লীগের কাজ করার জন্য , বাংলাদেশের আর কোথাও কোনো নেতা তা করতে পারেন নি এখন পর্যন্ত । তিনি নিজেকে মানবতার সেবায় সম্পৃক্ত করাসহ রায়পুরবাসীর উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি নিজ সম্পদের শতকরা ২৫ ভাগ ব্যয় করার ঘোষণা দেন। এতে কৌতূহল সৃষ্টি হবে জনমনে তা স্বাভাবিক তিনি না পারলেও তাঁর স্ত্রী ও কন্যাসন্তানরা মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকবেন বলে বক্তিতায় নিয়মিতই বলেছেন প্রবাসে এবং দেশেও । শহীদ-সেলিনা ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে স্থানীয় হাজার হাজার গরিব অসহায় মানুষের সেবায় নিজে ও পরিবারকে সম্পৃক্ত করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নৌকার প্রচারণায় মাঠে নামেন পাপুল। দলীয় নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। পাপুল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে মনোনয়ন পেতে বিভিন্নভাবে লবিং করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কেনেন। এ আসনে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির তৎকালীন সংসদ সদস্য জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ নোমানকে আবারও মহাজোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর প্রায় সবাই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে মহাজোট প্রার্থীকে জয়ের ব্যাপারে স্থানীয় দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজে নেতা-কর্মীদের শপথ করান। সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন পাপুলের কাছ থেকে সরে যান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক সপ্তাহখানেক আগে রহস্যজনক কারণে উধাও হয়ে যান মহাজোট প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান। জনশ্রুতি রয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করে নোমান আত্মগোপনে গিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এ নিয়ে ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পরোক্ষ সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী পাপুল। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আপেল প্রতীকের শহীদ ইসলাম পাপুল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৪ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর। সংরক্ষিত (নারী) আসনে স্বতন্ত্র এমপিদের গ্রুপ থেকে শহীদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এ কোটায় তাঁরও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার। সেলিনার পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায়। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। পাপুল-সেলিনা দম্পতি এমপি নির্বাচিত হওয়ায় তাঁদের সৌভাগ্যবান মনে করছেন সবাই। তাদের শুভাকাক্সক্ষীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আবার মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকে। কেউ বলছেন, অনন্য এক ইতিহাস গড়লেন এ দম্পতি। কেউ বলছেন, টাকা দিয়ে সৌভাগ্য কিনেছেন তারা। কিন্তু কথা হলো সবাই তো টাকা দিয়েও তা পারেনি । যদি ভাগ্য ডেকে নিয়ে আসে তা যেভাবেই হোক আসবেই, তাই কৌশল – শ্রম আর অর্থই পৌছে দিয়েছে গন্তব্যই ।আমরা চাই আগামীতে যেনো প্রবাসীদের সাফল্য যেনো সবসময়ই এমনই হয় ।