ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদে পর্তুগালে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা প্রিয়জনদের মানসিক রোগ যদি আপনজন বুঝতে না পারেন আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছে পর্তুগাল আওয়ামীলীগ যেকোনো প্রচেষ্টা এককভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়: দুদক সচিব শ্রীমঙ্গলে দুটি চোরাই মোটরসাইকেল সহ মিল্টন কুমার আটক পর্তুগালের অভিবাসন আইনে ব্যাপক পরিবর্তন পর্তুগাল বিএনপি আহবায়ক কমিটির জুমে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয় এমপি আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার ঘটনায় আটক তিনজন , এতে বাংলাদেশী মানুষ জড়িত:স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ ইরান দুতাবাসে রাইসির শোক বইয়ে মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর

বিমানের টিকিট ব্লক করে কালোবাজারে বিক্রি

দেশদিগন্ত নিউজঃ
  • আপডেটের সময় : ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০১৯
  • / ৫৩৬ টাইম ভিউ

বিমানের টিকিট ব্লক করে কালোবাজারে বিক্রির মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি চক্র কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছে।
বিমান মন্ত্রণালয় অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছে চক্রটি এ প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার নেতৃত্বে ছিলেন বিমানের পরিচালক (মাকেটিং অ্যান্ড সেলস) আশরাফুল আলম। অপরদিকে তার সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা হলেন সাবেক জেনারেল ম্যানেজার আতিকুর রহমান চিশতী, লন্ডনের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম, জিএম আরিফুর রহমান, হংকংয়ের কান্ট্রি ম্যানেজার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, কার্গো শাখার মাহফুজুর রহমান, জেটি খান, আবদুল্লাহ, মার্কেটিং শাখার মুসফিক বাবু, জিয়া, জাহিদ বিশ্বাস, এনায়েত হোসেন প্রমুখ।
সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত এক সভায় টিকিট দুর্নীতির ভয়াবহ তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। একপর্যায়ে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ও সচিব মহিবুল হকের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত আশরাফুল আলম টিকিট দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করেন।
বুধবার আশরাফকে ওএসডি করে এমডির দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। সভায় ১১ দফা সিদ্ধান্ত নিয়ে বলা হয়েছে, শিগগিরই এ চক্রের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিমানের পরবর্তী বোর্ড সভায় আলোচনা হবে। একই সঙ্গে যেসব ট্রাভেল এজেন্ট ও সিন্ডিকেট সদস্য সিট ব্লকের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের চিহ্নিত করার জন্য সিটা থেকে এক বছরের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তদন্তপূর্বক পরবর্তী বোর্ড সভায় উপস্থাপনের জন্য বিমান এমডি’কে নির্দেশ দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী যুগান্তরকে বলেন, বিমানের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে অনিয়ম আর অস্বচ্ছতা। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিমান সম্পর্কে একটি নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। সম্প্রতি বিমানের রিজার্ভেশন এবং টিকিট বিক্রি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে বিমান সচিব মহিবুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
২৪ মার্চ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের টিকিট বিক্রি ব্যবস্থাপনার নানামুখী অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় কার্যবিবরণীতে বিস্তর তথ্য তুলে ধরা হয়। দুর্নীতির ১০টি ধাপ উল্লেখ করে বিমান সচিব সভায় বলেন, বিমানের রিজার্ভেশন বা টিকিট বিক্রি কার্যক্রম সম্পূর্ণ অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বাস্তবে সামান্য কিছু টিকিট অনলাইনে সচল রেখে বাকি টিকিট ব্লক করে রাখা হয়। অথচ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা দিলে টিকিট পাওয়া যায়। এভাবে টিকিট বিক্রি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। অনেক সময় অনেক সিট খালি রেখে বিমান যাত্রা করে। দীর্ঘদিনের এমন অভিযোগ সামনে নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও মন্ত্রণালয় ব্যাপক অনুসন্ধানে নামে। এর ভিত্তিতে টিকিট দুর্নীতির বহু প্রমাণিত তথ্য বেরিয়ে আসে।
এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, প্রতিদিন বিমানের বিভিন্ন ফ্লাইটে প্রায় ৮ হাজার টিকিট থাকে। এর মধ্যে চক্রটি টার্গেট অনুযায়ী সর্বনিু দামের কয়েকশ’ টিকিট ব্লক করে রাখে। যেগুলো বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে বেশি মূল্যে বিক্রি করে। এভাবে তারা প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পকেটস্থ করে।
সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, অনলাইনে টিকিট বিক্রির জন্য বিমান ২০১৩ সালে ‘জেপ ওয়েস’ নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু তাদের সফটওয়্যারের মাধ্যমে মাত্র ৫ শতাংশ টিকিটি বিক্রি করা হয়। অথচ এ সামান্য টিকিট বিক্রির জন্য প্রতিমাসে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ২৭ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া তাদের সফটওয়্যার আপডেট বাবদ এ পর্যন্ত ১২ লাখ ২০ হাজার ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। সঠিকভাবে তদন্ত হলে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। তাদের সফটওয়্যারের মাধ্যমে কেবল ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা যায়। এছাড়া বিক্রি করা টিকিট পরিবর্তন কিংবা তারিখ সংশোধন করা যায় না। তাদের অদক্ষতার কারণে এসআইটিএ’র মাধ্যমে কিছুদিন টিকিট বিক্রি করা হয়। ফলে বিমানের ৬-৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয়।
জেপ ওয়েস থেকে যাত্রীদের খুদে বার্তা দেয়ার কথা থাকলেও তারা দেয় না। কিন্তু এজন্য প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের টাকা পায়। চুক্তিবদ্ধ এ কোম্পানির কাছে বিমানের এ যাবৎকালের সব ডাটা সংরক্ষিত আছে। কিন্তু এসব তথ্য পেতে হলে তাদের ৫০ হাজার ডলার দিতে হয়। অনুসন্ধান টিম মনে করে, ইচ্ছাকৃতভাবে অসম চুক্তি করায় এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
বলা হয়েছে, কিছু সংখ্যক ট্রাভেল এজেন্ট বিমানের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিয়মবহির্ভূত টিকিট বুকিং দিয়ে অর্থ ভাগাভাগি করে। মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের মাধ্যমে অযাচিতভাবে টিকিট ব্লক করে রাখে। কিছু কর্মচারী তাদের কাছে থাকা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে বিমানের লন্ডন ও মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটগুলোয় সিট ব্লক করে থাকে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব টিকিট ব্লক করে সাদিয়া ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে বিক্রি করা হয়। এছাড়া রয়েল, স্টার, ভার্সেটাইল, ভিক্টোরি নামে কতিপয় ট্রাভেল এজেন্সিও বিমানের টিকিট নিয়ে এ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তারাও এ সিন্ডকেটকে প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দেয়। অভিযোগ আছে, এসব ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে নামে-বেনামে মালিকানা রয়েছে এই সিন্ডিকেট সদস্যদের।
সভায় জানানো হয়, দুর্নীতি ঠেকাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এখন থেকে বিমানের সব টিকিট অনলাইনে উন্মুক্ত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। জেলা পর্যায়ে অনলাইন টিকিট বুকিং ভালোভাবে সচল করাসহ বিশেষ অ্যাপ খোলা হবে। অপরদিকে বিমানের টিকিট বুকিং দেয়ার জন্য গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) কোম্পানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তা-ও বিমানের স্বার্থবিরোধী।

পোস্ট শেয়ার করুন

বিমানের টিকিট ব্লক করে কালোবাজারে বিক্রি

আপডেটের সময় : ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০১৯

বিমানের টিকিট ব্লক করে কালোবাজারে বিক্রির মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি চক্র কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছে।
বিমান মন্ত্রণালয় অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছে চক্রটি এ প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার নেতৃত্বে ছিলেন বিমানের পরিচালক (মাকেটিং অ্যান্ড সেলস) আশরাফুল আলম। অপরদিকে তার সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা হলেন সাবেক জেনারেল ম্যানেজার আতিকুর রহমান চিশতী, লন্ডনের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম, জিএম আরিফুর রহমান, হংকংয়ের কান্ট্রি ম্যানেজার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, কার্গো শাখার মাহফুজুর রহমান, জেটি খান, আবদুল্লাহ, মার্কেটিং শাখার মুসফিক বাবু, জিয়া, জাহিদ বিশ্বাস, এনায়েত হোসেন প্রমুখ।
সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত এক সভায় টিকিট দুর্নীতির ভয়াবহ তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। একপর্যায়ে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ও সচিব মহিবুল হকের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত আশরাফুল আলম টিকিট দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করেন।
বুধবার আশরাফকে ওএসডি করে এমডির দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। সভায় ১১ দফা সিদ্ধান্ত নিয়ে বলা হয়েছে, শিগগিরই এ চক্রের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিমানের পরবর্তী বোর্ড সভায় আলোচনা হবে। একই সঙ্গে যেসব ট্রাভেল এজেন্ট ও সিন্ডিকেট সদস্য সিট ব্লকের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের চিহ্নিত করার জন্য সিটা থেকে এক বছরের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তদন্তপূর্বক পরবর্তী বোর্ড সভায় উপস্থাপনের জন্য বিমান এমডি’কে নির্দেশ দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী যুগান্তরকে বলেন, বিমানের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে অনিয়ম আর অস্বচ্ছতা। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিমান সম্পর্কে একটি নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। সম্প্রতি বিমানের রিজার্ভেশন এবং টিকিট বিক্রি ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে বিমান সচিব মহিবুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
২৪ মার্চ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের টিকিট বিক্রি ব্যবস্থাপনার নানামুখী অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় কার্যবিবরণীতে বিস্তর তথ্য তুলে ধরা হয়। দুর্নীতির ১০টি ধাপ উল্লেখ করে বিমান সচিব সভায় বলেন, বিমানের রিজার্ভেশন বা টিকিট বিক্রি কার্যক্রম সম্পূর্ণ অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বাস্তবে সামান্য কিছু টিকিট অনলাইনে সচল রেখে বাকি টিকিট ব্লক করে রাখা হয়। অথচ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা দিলে টিকিট পাওয়া যায়। এভাবে টিকিট বিক্রি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। অনেক সময় অনেক সিট খালি রেখে বিমান যাত্রা করে। দীর্ঘদিনের এমন অভিযোগ সামনে নিয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও মন্ত্রণালয় ব্যাপক অনুসন্ধানে নামে। এর ভিত্তিতে টিকিট দুর্নীতির বহু প্রমাণিত তথ্য বেরিয়ে আসে।
এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, প্রতিদিন বিমানের বিভিন্ন ফ্লাইটে প্রায় ৮ হাজার টিকিট থাকে। এর মধ্যে চক্রটি টার্গেট অনুযায়ী সর্বনিু দামের কয়েকশ’ টিকিট ব্লক করে রাখে। যেগুলো বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে বেশি মূল্যে বিক্রি করে। এভাবে তারা প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পকেটস্থ করে।
সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, অনলাইনে টিকিট বিক্রির জন্য বিমান ২০১৩ সালে ‘জেপ ওয়েস’ নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু তাদের সফটওয়্যারের মাধ্যমে মাত্র ৫ শতাংশ টিকিটি বিক্রি করা হয়। অথচ এ সামান্য টিকিট বিক্রির জন্য প্রতিমাসে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ২৭ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া তাদের সফটওয়্যার আপডেট বাবদ এ পর্যন্ত ১২ লাখ ২০ হাজার ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। সঠিকভাবে তদন্ত হলে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। তাদের সফটওয়্যারের মাধ্যমে কেবল ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা যায়। এছাড়া বিক্রি করা টিকিট পরিবর্তন কিংবা তারিখ সংশোধন করা যায় না। তাদের অদক্ষতার কারণে এসআইটিএ’র মাধ্যমে কিছুদিন টিকিট বিক্রি করা হয়। ফলে বিমানের ৬-৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয়।
জেপ ওয়েস থেকে যাত্রীদের খুদে বার্তা দেয়ার কথা থাকলেও তারা দেয় না। কিন্তু এজন্য প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের টাকা পায়। চুক্তিবদ্ধ এ কোম্পানির কাছে বিমানের এ যাবৎকালের সব ডাটা সংরক্ষিত আছে। কিন্তু এসব তথ্য পেতে হলে তাদের ৫০ হাজার ডলার দিতে হয়। অনুসন্ধান টিম মনে করে, ইচ্ছাকৃতভাবে অসম চুক্তি করায় এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
বলা হয়েছে, কিছু সংখ্যক ট্রাভেল এজেন্ট বিমানের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিয়মবহির্ভূত টিকিট বুকিং দিয়ে অর্থ ভাগাভাগি করে। মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের মাধ্যমে অযাচিতভাবে টিকিট ব্লক করে রাখে। কিছু কর্মচারী তাদের কাছে থাকা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে বিমানের লন্ডন ও মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটগুলোয় সিট ব্লক করে থাকে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব টিকিট ব্লক করে সাদিয়া ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে বিক্রি করা হয়। এছাড়া রয়েল, স্টার, ভার্সেটাইল, ভিক্টোরি নামে কতিপয় ট্রাভেল এজেন্সিও বিমানের টিকিট নিয়ে এ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তারাও এ সিন্ডকেটকে প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দেয়। অভিযোগ আছে, এসব ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে নামে-বেনামে মালিকানা রয়েছে এই সিন্ডিকেট সদস্যদের।
সভায় জানানো হয়, দুর্নীতি ঠেকাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এখন থেকে বিমানের সব টিকিট অনলাইনে উন্মুক্ত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। জেলা পর্যায়ে অনলাইন টিকিট বুকিং ভালোভাবে সচল করাসহ বিশেষ অ্যাপ খোলা হবে। অপরদিকে বিমানের টিকিট বুকিং দেয়ার জন্য গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) কোম্পানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তা-ও বিমানের স্বার্থবিরোধী।