বন্যায় ফসলহানি হলেও খাদ্য ঘাটতি হবে না :প্রধানমন্ত্রী
- আপডেটের সময় : ০১:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭
- / ১৩৫০ টাইম ভিউ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চলতি দেশ ঘন ঘন বন্যার কবলে পড়ছে, তবুও খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। হাওরে বন্যায় অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া আরেকটি বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানটা এমন জায়গায় প্রতিনিয়তই এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বাঁচতে হয়। তবে বন্যায় ফসলহানি হলেও খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে না দেশ। এজন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদ রয়েছে। আরো মজুদ রাখার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে নগদ মূল্যে চাল আমদানি শুরু করেছি।
গতকাল রবিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২১ ও ১৪২২ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশের কৃষিখাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার প্রতিবছর এই পুরস্কার প্রদান করে আসছে। ১০টি শ্রেণিতে ৫টি স্বর্ণ, ৯টি রৌপ্য এবং ১৮টি ব্রঞ্জ পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিজয়ীরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রঞ্জ নির্মিত পদক, নগদ অর্থের চেক এবং সনদপত্র গ্রহণ করেন। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মইনুদ্দিন আব্দুল্লাহ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
সারাদেশে সরকারি, বেসরকারি, মিল মালিক, কৃষক পর্যায় মিলিয়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও সংকট এড়াতে খাদ্য আমদানি করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা নগদ টাকায় খাদ্য নিয়ে আসছি। পাশাপাশি খাদ্য আমদানির ওপর যে কর ছিল সেটাও কমিয়ে এনেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে যাতে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সরকার সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে কৃষিজ উপকরণ যাতে রপ্তানি করা যায়, কৃষকদের সেদিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, চাষাবাদে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে হবে। কৃষি ও পণ্য উত্পাদন প্রক্রিয়ায় সরকার গবেষণায় গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব এড়িয়ে কীভাবে উত্পাদনে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়, সেদিকে সতর্ক নজর রাখছে সরকার। দেশের নির্দিষ্ট এলাকায়, আবহাওয়া ও মাটির ধরন অনুযায়ী ফসল উত্পাদনের পরিকল্পনা নিতে কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ষড় ঋতুর বাংলাদেশে সুস্থ থাকার জন্য মৌসুমী ফলমূল খাবার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে মৌসুমে যেসব ফলমূল পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে প্রত্যেক ঋতুতেই দেশজ নতুন যেসব ফল রয়েছে সেসব খেলে সে সময়কার বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হয়, সেসব রোগ ব্যাধির জন্য প্রতিরোধক শক্তি এসব ফলমূলে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তাঁর সরকার প্রস্তুত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই জলবায়ু পরিবর্তনের কোন প্রভাব আমাদের দেশে যেন না পড়তে পারে, দেশের মানুষের জীবন যেন কোন রকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে ।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা, গতিশীল নেতৃত্বের কারণে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের অনেক দেশ অনুসরণ করছে। তিনি বলেন, কৃষি এদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, শুধু কৃষিক্ষেত্রে নয়, দেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। সম্প্রতিকালে আমরা যে সংকট মোকাবিলা করতে যাচ্ছি, এটা প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ সচেতন সিনিয়র মন্ত্রীরা জানেন, সেটা হলো পৃথিবীতে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই উষ্ণতাজনিত কারণে কৃষিসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে একটা প্রকট চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তবে এতে ভীত হওয়ার কোন কারণ নেই।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বিশ্ব জলবায়ু নিয়ে যখন আমরা কথা বলি, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেন, ভিক্ষা চাইবেন না, নিজেদের অধিকার ও দাবি সেটা তাদের বোঝাতে হবে। সমুদ্রের জলসীমা এক মিটার বাড়লে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ভূমি তলিয়ে যেতে পারে, এটা যেমন সত্য, এর উত্তরে আমরা বলি, আমরা যতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হব, তারাও তার চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এ কথা শুনতে তারা অভ্যস্ত ছিল না।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সব মন্ত্রণালয় জলবায়ুকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, রামপাল নিয়ে যারা কথাবার্তা বলেছেন, আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল, অনেক জ্ঞানী মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি তাদের বলেছি, আপনারা যারা বাংলাদেশের নাগরিক, আমরাও বাংলাদেশের নাগরিক, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের নাগরিক। এমন কোনো পদক্ষেপ কেন গ্রহণ করা হবে না যাতে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি হয়।
তিনি বলেন, কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা সর্বজনস্বীকৃত। কৃষি বলতে আমরা শুধু ধান, পাট, ভুট্টা ও গমের কথা শুনেছি। কিন্তু কৃষি এই দুই তিনটি আইটেমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ফল-ফলাদি, ফুল কিনা এখন হচ্ছে। বাঙালিরা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আম গাছ এনে ফল ফলাচ্ছে। আমি এমন আম কিনে নিয়েছি। তিনি বলেন, সারা বছর যদি মেলার আয়োজন করা যায়, তাহলে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রধানমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রীর পরিশ্রমের ফসল।
নিজের নির্বাচনী এলাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে যখন আমি পিরোজপুরে যখন যাই, তখন এই জেলাটা ছিল খাদ্যে অসম্পূর্ণ। কিন্তু আজকে এই পিরোজপুর খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় আছেন। শেখ হাসিনা যে পরিশ্রম করেন তা চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে সক্ষম হবেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘তোমার পরিশ্রমকে আমি বৃথা যেতে দেব না।’
অনুষ্ঠানে মন্ত্রীপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিক এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।