ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদে পর্তুগালে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা প্রিয়জনদের মানসিক রোগ যদি আপনজন বুঝতে না পারেন আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছে পর্তুগাল আওয়ামীলীগ যেকোনো প্রচেষ্টা এককভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়: দুদক সচিব শ্রীমঙ্গলে দুটি চোরাই মোটরসাইকেল সহ মিল্টন কুমার আটক পর্তুগালের অভিবাসন আইনে ব্যাপক পরিবর্তন পর্তুগাল বিএনপি আহবায়ক কমিটির জুমে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয় এমপি আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার ঘটনায় আটক তিনজন , এতে বাংলাদেশী মানুষ জড়িত:স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ ইরান দুতাবাসে রাইসির শোক বইয়ে মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর

প্রয়াত অধ্যক্ষ ইউসুফ আলীকে নিয়ে অধ্যাপক ফরিদা বেগমের স্মৃতিচারণ

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : ০৬:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৮৬৯ টাইম ভিউ

প্রয়াত অধ্যক্ষ ইউসুফ আলীকে নিয়ে অধ্যাপক ফরিদা বেগমের স্মৃতিচারণ 

তখন সবেমাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে, সিলেট মহিলা কলেজের চাকরি ছেড়ে ১৯৭২ সালের ২১ অগাস্ট আমি যোগ দিলাম সদ্য প্রতিষ্ঠিত কুলাউড়া কলেজের বাংলা বিভাগে, কলেজের প্রথম মহিলা শিক্ষক হিসেবে।
থাকার জন্য বাসা নিলাম এনসি স্কুল মাঠের পাশে। সাথে আমার ছোট ভাই ফারুক। রাতে যখন ট্রেন যেত, মনে হত বাসা বুঝি এই মাত্র ভেঙ্গে পড়বে। ১১ দিনের মাথায় বাসা বদলে চলে গেলাম কুলাউড়ার চেনা মুখ, দক্ষিণ বাজারের বদই মিয়া সাহেবের বাসায়। দক্ষিণ বাজারের ভেতর দিয়ে গিয়ে সামনেই বাসা। সেখানেই প্রথম প্রতিবেশী হিসেবে পেলাম কুলাউড়া কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ জনাব ইউসুফ আলীকে। বদই মিয়া সাহেবের ছোট ভাই আমির উদ্দিন সাহেবের বাসায় থাকতেন উনি।
স্বাধীনতার পরপর তখন দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুবই রুগ্ন। প্রায় সবারই ঘরে অভাব অনটন। আমরাও এর বাইরে ছিলাম না। কলেজের বেতনের টাকায় কোনরকমে তখন সংসার চলে যায়। বিলাসিতা দূরে থাক, প্রয়োজন মেটানোই তখন দায়। আমি কুলাউড়ায় নতুন। ভাইকে সাথে নিয়ে থাকছি। সেই কঠিন সময়ে প্রায় ৪ বছরের মত পাশাপাশি বাসায় থেকেছি জনাব ইউসুফ আলীর পরিবার আর আমি।
জনাব ইউসুফ আলী সাহেবের ছোট বোন তৈয়বুন নেছা (তৈবুন) সারাদিন রাত আমার সাথেই থাকত। আমার বোনের মতই আমার ঘরে সবসময় থেকেছে তৈবুন। আমারও ভালো সময় কাটত তার সান্নিধ্যে। বলা যায় ভাবী আর তৈবুন থাকায় কথা বলার মত লোকের কোন অভাব হয়নি আমার, কখনো একা লাগেনি তাই।প্রিন্সিপাল সাহেব, এই নামেই কুলাউড়ায় পরিচিত জনাব ইউসুফ আলী। তো প্রিন্সিপাল সাহেবের ৩ ছেলে আর ২ মেয়ে তখন ছোট, ওরা আমাকে ডাকত পিসি বলে। ওরাও সবসময় আমার ঘরে আসত। বলা যায়, প্রিন্সিপাল সাহেবের পরিবারের সদস্যদের কারণে নিজের পরিবার থেকে দূরে থেকেও পারিবারিক আবহ পেয়েছি কুলাউড়া জীবনের প্রথম দিকে। পরবর্তীতে আমার বড় মেয়ের জন্মের পর আমি বাসা পালটে চলে যাই থানার পিছনে মালবাবুর বাসায়।
ইংরেজি সাহিত্যে আগ্রহ থাকায় প্রিন্সিপাল সাহেব আর আমার স্বামী ইংরেজির সহঃ অধ্যাপক মরহুম মতিউর রহমান এর মাঝে জমত বেশ। সপ্তাহান্তে মৌলভীবাজার থেকে বাসায় এলে দুজনের আড্ডা জমত।
যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে কষ্টের সময়গুলো পাশাপাশি বাসায় থেকে কাটানোর স্মৃতিগুলোই আমার কাছে বেশি উজ্জ্বল। হয়ত কষ্টের স্মৃতি মানুষের মনে থাকে বেশি, তাই। সেই সময়ে ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে কম দামে নিত্যপন্যের সরবরাহে কলেজ শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ থাকত। কলেজে সরকারের তরফে কাপড়ও দেয়া হয়েছে আমাদের। এসব নিয়ে কত স্মৃতি, কোনটা বলি আর কোনটা বাদ দেই ?!?
পরবর্তীতে আমি কলেজের পাশে আর প্রিন্সিপাল সাহেব লস্করপুরে বাসা বানানোয় আমরা প্রতিবেশিই থেকে গেছি। প্রিন্সিপাল সাহেব প্রতিদিন আমার বাসার সামনে দিয়েই হেটে যেতেন কলেজে। অবসর নেয়ার পরে ছাত্রদের শেখানোর আগ্রহ থেকে আমার বাসায় একটি রুমে আমার ছোট ছেলে ও তার সহপাঠীদের পড়াতেন, বানিজ্যিক কোন লাভ তাতে ছিলো না।
১৯৮১ ব্যাচের ছাত্ররা যখন প্রিন্সিপাল সাহেবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে অনুরোধ জানালো, প্রথমে ভেবেছি ভালো কত কিছু লিখব। কিন্তু লিখতে বসে সেই কষ্টের সময়ের প্রতিবেশী প্রিন্সিপাল সাহেবকেই মনে পড়ছে বেশি। আমি তাই সহকর্মী ইউসুফ আলী নয়, আমার প্রতিবেশী ইউসুফ আলী সাহেবের কথাই মনে করলাম।

অধ্যাপক ফরিদা বেগম
প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান
কুলাউড়া সরকারি ( ডিগ্রি) কলেজ

পোস্ট শেয়ার করুন

প্রয়াত অধ্যক্ষ ইউসুফ আলীকে নিয়ে অধ্যাপক ফরিদা বেগমের স্মৃতিচারণ

আপডেটের সময় : ০৬:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রয়াত অধ্যক্ষ ইউসুফ আলীকে নিয়ে অধ্যাপক ফরিদা বেগমের স্মৃতিচারণ 

তখন সবেমাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে, সিলেট মহিলা কলেজের চাকরি ছেড়ে ১৯৭২ সালের ২১ অগাস্ট আমি যোগ দিলাম সদ্য প্রতিষ্ঠিত কুলাউড়া কলেজের বাংলা বিভাগে, কলেজের প্রথম মহিলা শিক্ষক হিসেবে।
থাকার জন্য বাসা নিলাম এনসি স্কুল মাঠের পাশে। সাথে আমার ছোট ভাই ফারুক। রাতে যখন ট্রেন যেত, মনে হত বাসা বুঝি এই মাত্র ভেঙ্গে পড়বে। ১১ দিনের মাথায় বাসা বদলে চলে গেলাম কুলাউড়ার চেনা মুখ, দক্ষিণ বাজারের বদই মিয়া সাহেবের বাসায়। দক্ষিণ বাজারের ভেতর দিয়ে গিয়ে সামনেই বাসা। সেখানেই প্রথম প্রতিবেশী হিসেবে পেলাম কুলাউড়া কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ জনাব ইউসুফ আলীকে। বদই মিয়া সাহেবের ছোট ভাই আমির উদ্দিন সাহেবের বাসায় থাকতেন উনি।
স্বাধীনতার পরপর তখন দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুবই রুগ্ন। প্রায় সবারই ঘরে অভাব অনটন। আমরাও এর বাইরে ছিলাম না। কলেজের বেতনের টাকায় কোনরকমে তখন সংসার চলে যায়। বিলাসিতা দূরে থাক, প্রয়োজন মেটানোই তখন দায়। আমি কুলাউড়ায় নতুন। ভাইকে সাথে নিয়ে থাকছি। সেই কঠিন সময়ে প্রায় ৪ বছরের মত পাশাপাশি বাসায় থেকেছি জনাব ইউসুফ আলীর পরিবার আর আমি।
জনাব ইউসুফ আলী সাহেবের ছোট বোন তৈয়বুন নেছা (তৈবুন) সারাদিন রাত আমার সাথেই থাকত। আমার বোনের মতই আমার ঘরে সবসময় থেকেছে তৈবুন। আমারও ভালো সময় কাটত তার সান্নিধ্যে। বলা যায় ভাবী আর তৈবুন থাকায় কথা বলার মত লোকের কোন অভাব হয়নি আমার, কখনো একা লাগেনি তাই।প্রিন্সিপাল সাহেব, এই নামেই কুলাউড়ায় পরিচিত জনাব ইউসুফ আলী। তো প্রিন্সিপাল সাহেবের ৩ ছেলে আর ২ মেয়ে তখন ছোট, ওরা আমাকে ডাকত পিসি বলে। ওরাও সবসময় আমার ঘরে আসত। বলা যায়, প্রিন্সিপাল সাহেবের পরিবারের সদস্যদের কারণে নিজের পরিবার থেকে দূরে থেকেও পারিবারিক আবহ পেয়েছি কুলাউড়া জীবনের প্রথম দিকে। পরবর্তীতে আমার বড় মেয়ের জন্মের পর আমি বাসা পালটে চলে যাই থানার পিছনে মালবাবুর বাসায়।
ইংরেজি সাহিত্যে আগ্রহ থাকায় প্রিন্সিপাল সাহেব আর আমার স্বামী ইংরেজির সহঃ অধ্যাপক মরহুম মতিউর রহমান এর মাঝে জমত বেশ। সপ্তাহান্তে মৌলভীবাজার থেকে বাসায় এলে দুজনের আড্ডা জমত।
যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে কষ্টের সময়গুলো পাশাপাশি বাসায় থেকে কাটানোর স্মৃতিগুলোই আমার কাছে বেশি উজ্জ্বল। হয়ত কষ্টের স্মৃতি মানুষের মনে থাকে বেশি, তাই। সেই সময়ে ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে কম দামে নিত্যপন্যের সরবরাহে কলেজ শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ থাকত। কলেজে সরকারের তরফে কাপড়ও দেয়া হয়েছে আমাদের। এসব নিয়ে কত স্মৃতি, কোনটা বলি আর কোনটা বাদ দেই ?!?
পরবর্তীতে আমি কলেজের পাশে আর প্রিন্সিপাল সাহেব লস্করপুরে বাসা বানানোয় আমরা প্রতিবেশিই থেকে গেছি। প্রিন্সিপাল সাহেব প্রতিদিন আমার বাসার সামনে দিয়েই হেটে যেতেন কলেজে। অবসর নেয়ার পরে ছাত্রদের শেখানোর আগ্রহ থেকে আমার বাসায় একটি রুমে আমার ছোট ছেলে ও তার সহপাঠীদের পড়াতেন, বানিজ্যিক কোন লাভ তাতে ছিলো না।
১৯৮১ ব্যাচের ছাত্ররা যখন প্রিন্সিপাল সাহেবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে অনুরোধ জানালো, প্রথমে ভেবেছি ভালো কত কিছু লিখব। কিন্তু লিখতে বসে সেই কষ্টের সময়ের প্রতিবেশী প্রিন্সিপাল সাহেবকেই মনে পড়ছে বেশি। আমি তাই সহকর্মী ইউসুফ আলী নয়, আমার প্রতিবেশী ইউসুফ আলী সাহেবের কথাই মনে করলাম।

অধ্যাপক ফরিদা বেগম
প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান
কুলাউড়া সরকারি ( ডিগ্রি) কলেজ