আপডেট

x


পেঁয়াজ পাতার কেজিও ১৫০ টাকা!

রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৯ | ২:১৮ অপরাহ্ণ | 682 বার

পেঁয়াজ পাতার কেজিও ১৫০ টাকা!

পেঁয়াজ নয়, পেঁয়াজ পাতা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। পরিমাণে কম কিনলে দাম আরও বেশি। বাজার দমাতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের গাছ আগাম তুলে বিক্রি করছেন কৃষকরা। এতেও বাজার থামাতে পারেননি।

জাতীয় দৈনিক সমকালের আজকের সংখ্যায় প্রকাশিত সাংবাদিক মিরাজ শামস-এর করা একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে পেঁয়াজের কেজি এখনও ২৫০ টাকা। এই উচ্চমূল্যের কারণে বাজারে আসা নতুন পেঁয়াজ পাতার চাহিদা বেশি। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় পাতারও অযৌক্তিক দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও কৃষকরা বিক্রি করছেন ৫০ টাকা কেজিতে।



গতকাল শনিবার রাজধানীসহ দেশের বাজারে পেঁয়াজ গড়ে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। তিন দিন ধরে টানা দর বৃদ্ধি পেয়েছে কেজিতে ১০০ টাকা। উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আমদানি ও বাজার মনিটর চললেও দাম কামানো যায়নি। তবে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধিতে এখন বাজার থেকে পেঁয়াজ কেনা কিছুটা কমিয়েছেন ক্রেতারা। বিক্রি ধরে রাখতে খুচরায় এখন হালিতেও বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, অতিরিক্ত দামের কারণে এখন ক্রেতারা আর কেজিতে কিনছেন না। বাজারে এই অস্বাভাবিক দাম থাকায় আগাম পেঁয়াজ পাতা তুলেছেন কৃষকরা।

গতকাল মিরপুরের ২নং বাজারে ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের কাছে পেঁয়াজের দাম জিজ্ঞেস করেন এক ক্রেতা। দোকানি প্রতি কেজি দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ ২৬০ টাকা এবং দেশি কিং পেঁয়াজ ২৫০ টাকা দাম চান। এখন কেন এত বেশি লাভ করতে চাইছেন- এমন প্রশ্নে দোকানি বলেন, আমাদের লাভটাই দেখলেন! আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা যে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা লাভে বিক্রি করছেন, তা দেখছে না কেউ।

ব্যবসায়ীদের নানা পর্যায়ে অতি লাভের কারণে পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার হাঁড়ি বসানো নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানালেন উত্তর পীরেরবাগ বাজারের ক্রেতা নাজমা বেগম। তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করায় পরিবারের সদস্যরা ঠিকমতো খেতে পারছে না। এ কারণে গতকাল বাজারে পেঁয়াজ পাতা দেখে কেনার ইচ্ছা নিয়ে দরদাম করি। দোকানি এক কেজি পাতা ১৫০ টাকা এবং ২৫০ গ্রামের এক আঁটি ৫০ টাকা চাইলেন। এই দরে পেঁয়াজ পাতা কিনলে অন্য পণ্য কেনা সম্ভব হবে না। না কিনেই ফিরে যাই।’

রাজধানীর পাইকারি আড়ত কারওয়ান বাজারে শুক্রবার রাতে পেঁয়াজের পাতা ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। আর মিরপুর ১নং পাইকারি আড়তে ছিল ১০০ টাকা। এই পেঁয়াজ পাতা এক হাত বদলে খুচরায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাম বাড়িয়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায় আগাম পেঁয়াজ পাতা তুলছেন কৃষকরা। এই পাতা ৫০ টাকা কেজিতে কিনে রাজধানীর বাজারে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের আড়তদার ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন বলেন, ‘আড়তে কেজিতে এক টাকা আড়তদারি পাচ্ছেন। কিন্তু পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। বাজারে অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগ নিয়ে এই পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন তারা।’

গতকাল রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ খুচরায় ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, আমদানি করা তুরস্ক ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা ও চীনের বড় পেঁয়াজ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে বাজারে এক কেজি পেঁয়াজের দামে মিলছে ছয় কেজি চাল। তাই বাজার করতে গিয়ে পেঁয়াজ কিনতে বিভ্রান্তিতে আছেন অনেকেই। নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে অনেকেই পেঁয়াজ কেনা ছেড়ে দিয়েছেন। এমনকি মধ্যবিত্তরাও কমিয়ে দিয়েছেন পেঁয়াজ কেনা। এর পরও কমেনি পেঁয়াজের দাম।

কারওয়ান বাজার আড়তের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. কালাম শেখ বলেন, ‘গতকালের মতোই প্রতি কেজি দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ ২৩০ টাকা ও হাইব্রিড কিং ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২২০ টাকা এবং চীন ও মিসরের পেঁয়াজ ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘দাম বৃদ্ধির অস্থিরতায় অনেক পাইকার আমদানি পেঁয়াজ ২৪০ টাকা কেজি দরে কিনে এখন দাম কমার ভয়ে ২৩০ টাকায় ছেড়ে দিচ্ছেন।’ শ্যামবাজারের পাইকারি আড়তেও পেঁয়াজের দাম একই অবস্থায় রয়েছে বলে জানান পপুলার বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী রতন সাহা। তিনি বলেন, ‘টিসিবির মাধ্যমে সরকার বিক্রি বাড়ালে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর বাজারে বিক্রি অব্যাহত রেখেছে টিসিবি। সীমিত পরিসরে হওয়ায় তা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে বাজারের চেয়ে পাঁচগুণ কমে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনতে সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। গতকাল খামারবাড়ি, খিলগাঁও, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির ট্রাকের সামনে পেঁয়াজ কিনতে রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি করেছেন ক্রেতারা। টিসিবির ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনে হাঁপাতে হাঁপাতে ফিরেছেন পূর্ব রাজাবাজারের বাসিন্দা খাদিজা বেগম। তিনি বলেন, ‘বাজার থেকে ২৫০ টাকায় পেঁয়াজ কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই সকাল ৭টা থেকে অপেক্ষা করে লাইন ধরে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম খামারবাড়ির সামনে। দুপুর ১টায় আসে টিসিবির ট্রাক। আসার পরই লাইন ভেঙে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েন ট্রাকের ওপর। তখন বিক্রি শুরু না হলেও এক দফা চলে ধাক্কাধাক্কি। অনেক নারী বিব্রত হয়ে না কিনে ফিরেও গেছেন। এরপর বিক্রি শুরু হলে তখন লাইনে দাঁড়ালেও স্থির থাকা যায়নি। ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত এক কেজি পেঁয়াজ কেনা সম্ভব হয়েছে। এই দিয়ে সপ্তাহ পার করব।’

পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগেভাগে পেঁয়াজ চাষ করছেন কৃষকরা। মানিকগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগাম পেঁয়াজ পাতা আসছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, পেঁয়াজ পাতা (কন্দ পেঁয়াজ) কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। সেখানকার স্থানীয় বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাতা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ প্রতিনিধিও একই দরে বিক্রির কথা জানান। ঝিনাইদহের শৈলকূপা প্রতিনিধি জানান, দেশি পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী রেজাউল বিশ্বাস গতকাল প্রতি মণ পেঁয়াজ আট থেকে সাড়ে আট হাজার টাকায় কিনে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেছেন।

মন্তব্য করতে পারেন...

comments


deshdiganto.com © 2019 কপিরাইট এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত

design and development by : http://webnewsdesign.com