পুলিশকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ কম দেয়ায় লাশ হলেন রায়হান
- আপডেটের সময় : ১১:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০২০
- / ৩৫৩ টাইম ভিউ
সিলেট নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করতেন রায়হান আহমেদ। কাজ শেষে প্রতিদিন সময় মতো বাড়ি ফিরলেও শনিবার রাতে ফিরতে দেরি করেন। পরে রাত ১০টায় রায়হানের মোবাইলে ফোন দেন মা ও স্ত্রী। কিন্তু মোবাইল বন্ধ পান।
হঠাৎ ভোর ৪টা ২৩ মিনিটের দিকে মায়ের মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে রায়হান জানান, পুলিশ তাকে ধরে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে এসেছে। এখন তার কাছে ১০ হাজার টাকা ঘুষ চাচ্ছে। টাকা দিলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেবে।
এ কথা শুনে রায়হানের মা তার চাচাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠান। রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ রোববার ফজরের সময় টাকা নিয়ে ভাতিজা রায়হানকে ছাড়িয়ে আনতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যান।
এ সময় সাদা পোশাকে ফাঁড়িতে থাকা এক পুলিশ সদস্য বলেন, আপনার ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা। আপনি পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে এলেন কেন? চলে যান, রায়হান এখন ঘুমাচ্ছে এবং যে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও ফাঁড়িতে নেই। আপনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল ৯টার দিকে আসেন। এলেই তাকে নিয়ে যেতে পারবেন। তাকে আমরা কোর্টে চালান করবো না।
এ কথা শুনে রায়হানের চাচা বাসায় চলে যান। পরে সকাল ৯টার দিকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ফের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান।
ফাঁড়িতে যাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় সকাল ৭টার দিকে রায়হানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ খবরে হাবিবুল্লাহ উদ্বিগ্ন হয়ে তাৎক্ষণিক ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন রায়হানের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহত রায়হান আহমেদ সিলেট নগরীর আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার হবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি নগরীর রিকাবীবাজার এলাকায় একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করতেন।
নিহতের পরিবারের দাবি, রায়হানকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঘটনার তদন্ত করে দেখা যাবে। এর আগে, ছিনতাই করে পালানোর সময় গণধোলাই খেয়ে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, পুলিশ যেখানে গণপিটুনির কথা বলছে, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজে এমন কোনো চিত্র পাওয়া যায়নি। এছাড়া স্থানীয়দের কথায় এমন ঘটনার সত্যতাও মেলেনি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কলোনি নগরীর কাষ্টঘর এলাকা। পুলিশের দাবি অনুযায়ী গণপিটুনির ঘটনা জানার জন্য শনিবার রাত ১২টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এখানকার সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ওই এলাকার কোথাও কোনো গণপিটুনির দৃশ্য দেখা যায়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ সব সময় এ এলাকায় ঘুরঘুর করে। তবে শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত এ এলাকায় গণপিটুনি কিংবা কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি এলাকাবাসীর।
কাষ্টঘরের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী বলেন, প্রায় রাতেই এ এলাকায় মাদকসেবীদের চেঁচামেচি শোনা যায়। পুলিশের বাঁশির শব্দও শোনা যায়। তবে শনিবার রাতে বা রোববার ভোরে এমন কিছুই শুনিনি। গণপিটুনির ঘটনা ঘটলে তো অন্তত কিছু শোরগোল, চিৎকার শোনা যেতো। তাও শোনা যায়নি।
পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমেদ হত্যার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।
এসএমপির এডিসি (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার জানান, রায়হানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। এরইমধ্যে এ ঘটনায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।#