আপডেট

x


পা বিচ্ছিন্ন সুন্দরবনে একটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার, পা নিয়েছে কে ?

সোমবার, ১৩ জুলাই ২০২০ | ১২:৫১ অপরাহ্ণ | 285 বার

পা বিচ্ছিন্ন সুন্দরবনে একটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার, পা নিয়েছে কে ?
পা বিচ্ছিন্ন সুন্দরবন থেকে একটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার

পেছনের দুই পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সুন্দরবন থেকে আরও একটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করা হলো। এ নিয়ে পাঁচ মাসের ব্যবধানে দুটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগের দাবি, কুমিরের কামড়ে মারা পড়েছে বাঘ দুটি। তবে বাঘ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি রহস্যজনক।

গত শুক্রবার সকালে খুলনায় সুন্দরবনের আন্ধারমানিক বন ফাঁড়ির কাছ থেকে বেঙ্গল টাইগারের মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। বাঘটির পেছনের দুই পা বিচ্ছিন্ন, সামনের একটি পায়ে পচন ধরেছিল। এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জের কাছ থেকে আরেকটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল বন বিভাগ। ওই বাঘটির এক পা বিচ্ছিন্ন ছিল। গত বছরের আগস্টে আরেকটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে সেটির গায়ে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না।



গতকাল রোববার মৃত বাঘটির ময়নাতদন্ত করেছে খুলনা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। বন বিভাগের ভাষ্য, বাঘটি কুমিরের আক্রমণে পা হারিয়েছে। আগের বাঘটির মৃত্যুর ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছিল বন বিভাগ। তবে বাঘ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুন্দরবনে একই কায়দায় পরপর দুটি বাঘ মারা যাওয়ার ঘটনা রহস্যজনক। তাঁদের ধারণা, বাঘটিকে ফাঁদ পেতে আটকে ফেলা হয়েছিল। ফাঁদ থেকে রক্ষা পেতে বাঘটি চেষ্টা চালালে তার দুই পা কেটে যায়।

বন বিভাগ বলছে, এক সপ্তাহ ধরে বাঘটি আন্ধারমানিক বন ফাঁড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। সেখানকার পুকুর থেকে পানি খাচ্ছিল। বন বিভাগের স্থানীয় কর্মীরা ভয়ে আর বের হননি। গত শুক্রবার দুপুরে বাঘ ঘোরাফেরার স্থানটিতে মাছি উড়তে দেখে বন ফাঁড়ির কর্মীরা সেখানে গিয়ে বাঘটিকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।

জানতে চাইলে বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘বাঘটি কুমিরের আক্রমণে মারা গেছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। এটি বেশ বয়স্ক বাঘ ছিল এবং দুর্বল থাকায় কুমিরের আক্রমণে পা হারায়।’ করোনার মধ্যেও বন বিভাগের কর্মীরা সুন্দরবনসহ দেশের সব কটি বন পাহারা দিচ্ছেন। ফলে বন্য প্রাণী শিকারিদের ফাঁদে প্রাণীটি মারা যাওয়ার আশঙ্কা নেই বলে মনে করেন মিহির কুমার দো।

তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজ বলেন, ‘পরপর দুটি বাঘ একইভাবে মারা যাওয়ার কারণে এবং বাঘ দুটির মৃতদেহ দেখে আমার মনে হয়েছে এটি ফাঁদে আটকা পড়েছিল। এর আগে সুন্দরবনে বিষটোপ দিয়ে ও গুলি করে শিকারিদের হাতে বাঘ মারা পড়েছে।’ ভারত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বাঘ ধরার ফাঁদের ব্যবহার বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার জাভা বাঘ ফাঁদ পাতা শিকারিদের কবলে পড়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের এখানে যদি ওই ফাঁদের ব্যবহার শুরু হয়, তাহলে তা হবে মারাত্মক ঘটনা। বন বিভাগের উচিত এ ব্যাপারে দ্রুত অনুসন্ধান করা।

গতকাল রোববার বন বিভাগের অনুরোধে খুলনা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দুজন ভেটেরিনারি চিকিৎসক ও একজন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আন্ধারমানিক বন ফাঁড়িতে গিয়ে বাঘটির মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেন। পরে সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী বাঘটির বয়স হয়েছিল ১৪ বছর। এটি লম্বায় প্রায় সাত ফুট ছিল। ময়নাতদন্তের পর বাঘটির চামড়া খুলে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এস এম আউয়াল হক বলেন, ‘বাঘটি শুক্রবার সকালের দিকে মারা গেছে। কুমিরের কামড়ে এটি মারা গেছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।’

বন্য প্রাণী পাচার ও হত্যা প্রতিরোধে কাজ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রাফিক। বাঘ হত্যা ও পাচারবিষয়ক ২০১৯ সালে প্রকাশিত ট্রাফিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৩৩টি বাঘ হত্যা করা হয়। বাঘ হত্যা বৃদ্ধির দিক থেকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের পরেই আছে বাংলাদেশের নাম।

বন বিভাগের জরিপ অনুযায়ী, ২০০৪ সালে সুন্দরবনে পায়ের ছাপ গুনে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০টি। ২০১৫ সালে পায়ের ছাপ, ক্যামেরায় ছবি তুলে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১০৫টি। গত বছর একই পদ্ধতিতে আরেকটি জরিপ করে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায়।

মন্তব্য করতে পারেন...

comments


deshdiganto.com © 2019 কপিরাইট এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত

design and development by : http://webnewsdesign.com