ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
গ্রিন সিলেট ট্রাভেলসের আয়োজনে বাংলাদেশে পর্তুগাল দূতাবাস/কনসুলেট চেয়ে খোলা চিঠি স্বৈরাচার সরকার পতনের পর যুক্তরাজ্যে ফিরছেন সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি পর্তুগাল শাখার উদ্যোগে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত! বন্যার্ত মানুষের ত্রান তহবিলের জন্যে ৬ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘোষণা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বেজা শাখার কর্মি সম্মেলন অনুষ্ঠিত বিমানের নতুন চেয়ারম্যান কুলাউড়ার আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও ২৪ কোটা আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা দোয়া মাহফিল পর্তুগালে রাজনগর প্রবাসী ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আত্মপ্রকাশ পর্তুগাল বিএনপি’র আয়োজনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বরণে দোয়া ও মাহফিল সম্পন্ন বিমূর্ত সব মুর্হুতরা, আমার মা’য়ের সাথের শেষ শনিবার – শাহারুল কিবরিয়া বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদে পর্তুগালে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা

পবিত্র কাবা থেকে বদরের প্রান্তরে…

ডা. সাঈদ এনাম
  • আপডেটের সময় : ১২:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
  • / ২১৭ টাইম ভিউ

পবিত্র কাবা থেকে বদরের প্রান্তরে…

“কোন বিশেষ মসজিদে বা ওলী’র মাজারে টাকা দিয়ে যদি ভাবেন এটি আপনার মনের আশা পূর্ণ করবে তাহলে আপনি নিশ্চিত শিরক করলেন আবু জাহেলের মতো!”

বিষয়টি কেমন আৎকে উঠার মতো না? হ্যা। অবশ্যই। তবে এটাই সত্যি। 

আবু জাহেল ও তৎকালীন কুরাইশ নেতারা আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মানতো। তারা আল্লাহর ইবাদত করতো। আল্লাহর পছন্দ অনুযায়ী সন্তানের নাম রাখতো। যেমন আব্দুল্লাহ যার অর্থ ‘আল্লাহর দাস’। তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে পছন্দের নাম।

তারা আল্লাহর ঘর কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ করতো। আবু জাহেলরা হজ্ব করতো, রোজা রাখতো এমন কি নামাজ ও পড়তো। যারা হজ্ব করতে আসতো তাদেরকে তারা বিনা মূল্যে আথিতেয়তা করতো সর্বোচ্চ দিয়ে। একে তারা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ মনে করতো।

শুধু তাই নয় তারা তাদের কেবল হালাল উপায়ে অর্জিত  আয় কাবা শরীফের রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহার করতো। 

কাবা ঘরকে তারা এতো শ্রদ্ধা করতো যে চুল পরিমান হারাম আয় তারা কাবা ঘরের জন্যে ব্যয় করতো না। কারন তারা বলতো, তারা মানতো এটি আল্লাহর ঘর। আল্লাহর ঘরে সুদ, ঘুষ, যেনা, ব্যভিচার, অবৈধ লুটপাটের, আয় ব্যয় করা যাবেনা। 

কাবা ঘরের প্রতি তাদের সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ এতোই দৃঢ়  ছিলো যে একবার হালাল অর্থের অভাবে কাবার একটি দেয়াল নির্মাণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অথচ তাদের কাছে তখন হাজার হাজার রাজ প্রাসাদ নির্মাণ করার অর্থ পড়ে ছিলো। কিন্তু তাদের ঐ যে একটি ‘আকিদা’ বা ‘শ্রদ্ধাবোধ’যে আমরা যতই খারাপ হই, কিন্তু আমরা আল্লাহর ঘরে হারাম টাকা লাগাবোনা।

বদর যুদ্ধে রওয়ানা দেওয়ার আগে আবু জাহেল ও মুক্কার সকল কুরাইশ নেতা কাবায় গিয়ে তার দেয়াল ধরে অজোর কান্নায় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছিলো, 

‘হে আল্লাহ আমরা যদি তোমার দ্বীনের উপর থাকি তাহলে মোহাম্মদের উপর আমাদের কে বিজয়ী করো আর নাহলে আমাদের ধ্বংস করে দাও’। 

এদিকে আল্লাহর রাসুল বদরের প্রান্তরে সারারাত আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে কেঁদেছিলেন, “হে আল্লাহ, তোমার দ্বীন কে তুমি রক্ষা করো”।

ইসলামের ইতিহাসের সত্য মিথ্যা নির্ধারণকারী প্রথম যুদ্ধে আবু জাহেলরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।

বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে আপন আত্মীয়দের। একদিকে মুশরিক অন্য দিকে এক আল্লাহতে বিশ্বাসী ঈমানদার। ছেলে লড়েছে মায়ের বিরুদ্ধে। যেমন আবু জাহেল ছিলো মুশরিক অপর দিকে তার মা হজরত আসমা ছিলেন মদিনায় হিজরতকারী মহিলা সাহাবী। (আবু জাহেলদের বিরোধিতা সইতে না পেরে তিনিও রাসুলের সাথে মদিনায় হিজরত করেন)। 

জামাই লড়েছেন শ্বশুরের সাথে। যেমন রাসুল সা. এর বড় মেয়ে জয়নাব (রা:) এর  জামাই ‘আবুল আস’ ছিলেন বদর যুদ্ধের কমান্ডার আবুজাহেলের সাথে একজন সম্মুখসারীর অস্ত্রধারী। আর রাসুল ছিলেন মুসলিম বাহিনীর  কমান্ডার। 

বদর যুদ্ধে আবুল আস যুদ্ধ বন্ধী হন। মুক্তিপণ হিসেবে জয়নাব রা: তার বিয়ের সময় রাসুল কতৃক দেয়া অনিন্দ্য সুন্দর মুল্যবান উপহার স্বর্নের ‘হার’  প্রেরণ করলে তা দেখে রাসুল সা: আবুল আস এর যুদ্ধবন্দীর বিষয়টি জানতে পারেন। তাঁর মন কেঁদে উঠে। এ তাঁরই দেয়া আদরের বড় মেয়েকে উপহার। এছাড়া আবুল৷ আস রাসুল সা এর ভাগ্না ও ছিলেন। ( উম্মাহাতুল মুমিনীন খাদিজা রা: এর ছোট বোনের ছেলে।) 

(রাসুল সা. এর বড় মেয়ে জয়নাব ছিলেন ঈমানদার কিন্তু তার স্বামী আবুল আস ছিলেন মুশরিক। মুশরিক আবু জাহেলদের নির্যাতনে রাসুল হিজরত করলেও তখন জয়নাব (রা:)তার স্বামীর সাথে মক্কায় রয়ে যান। জয়নাব (রা.) এবং  তার স্বামীর পারষ্পরিক ভালোবাসার প্রসংশা স্বয়ং রাসুল সা. করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, মুশরিকের সাথে সংসার করা যাবেনা এ বিধান তখনও নাজিল হয়নি।)

যা হোক বদর যুদ্ধে আরো লড়াই হয়েছে ছেলে বাবার। যেমন আবু উবাইদা তারা বাবা আব্দুল্লাহ ইবনুল জাররাহ। (আবু উবাইদা ইসলাম গ্রহণ করলেও তার বাবা ছিলেন মুশরিক)। ভাই লড়েছে ভাইয়ের সাথে, চাচা ভাতিজার সাথে, মামা ভাগ্নের সাথে আজন্ম বন্ধু লড়েছে আজন্ম বন্ধুর সাথে।

ইন্টারেস্টিং হলো উভয় পক্ষই কিন্তু আল্লাহ কে বিশ্বাস করতো মহান সৃষ্টিকর্তা হিসেবে কিন্তু তফাৎ ছিলো বেসিকে (Basic)। তা হলো আল্লাহর সাথে বা আল্লাহর ক্ষমতার সাথে অন্য কাউকে পরোক্ষভাবে শরীক করা। 

আবু জাহেলদের আকীদা ছিলো, আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা তবে তার সাথে আরো কিছু উপকারী ও সাহায্যকারী, আল্লাহর সান্নিধ্য পাইয়ে দেয়াকারী বা মাধ্যমকারী, ভাগ্য পরিবর্তনকারী, আছেন যাদের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া যায়। শুধু নৈকট্য নয় ভাগ্য ফিরানো যায়, বিপদে উপকারও পাওয়া যায়। 

তারা সে সমস্ত কাল্পনিক শক্তির, উপকারীর, ক্ষমতা অধিকারীর কিংবা ভাগ্য পরিবর্তনকারীর  মূর্তি বানিয়ে সাজিয়ে সাথে রাখতো নিজের ঘরে। তারা কাবা ঘরের রাখতো এবং আল্লাহর পাশাপাশি তাদেরকে সেজদা করতো। 

এটাই হলো ঈমানদার ও মুশরিকদের মধ্যে বেসিক ডিফ্রেন্স। 

আপনি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করতে পারবেন না। মানতে হবে তিনিই সকল ক্ষমতার উৎস। তিনি রাহমানুর রাহীম। ভালো বা মন্দ যা আসে তা তার পক্ষ থেকেই। একমাত্র তিনিই পারেন ক্ষমা করতে, ভাগ্য পরিবর্তন করতে, সুখ,দুখ,কষ্ট লাঘব করতে। 

এখন আপনি যদি ভাবেন আল্লাহ ক্ষমতাশালী তবে আরো কিছু আছে যেমন, তাবিজ, কবজ, মাজার, কবর,  অলী আওলিয়া, বুজুর্গ, দরবেশ বা পীর, তাদের কবর, ছবি, আপনাকে ও আপনার পরিবার’কে সুরক্ষা দিবে। 

কিউ যদি ভাবেন বিপদ আপদ, ভাগ্য পরিবর্তন , সন্তান লাভ, আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়া,সুদ, ঘুষ, জেনা, চুরি, ডাকাতি, লুট, হারাম উপার্জন, সহ সকল প্রকার কবীরা ও সাগীরা গুনাহ কবর, মাজার, পীর আউলিয়া, বুজুর্গ ব্যক্তি মাফ করিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখেন, তাহলে কিন্তু প্রকারান্তরে  সেই আবু জাহেলদের মতোই আকীদা হয়ে গেলো।  যারা আল্লাহর মানতো পাশাপাশি তার সঙ্গে শিরক ও করতো। 

পবিত্র কোরআনে সুরা মুমিনূল এ আল্লাহ বলেন,

“হে রাসূল! আপনি তাদের) জিজ্ঞাসা করুন, যদি তোমরা জানো তবে বল-পৃথিবী এবং এতে যারা আছে,তারা কার (সৃষ্টি)?”। 

“তারা বলবে: সবই আল্লাহর”। 

বলুন, “তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?”। 

আপনি (আবার) জিজ্ঞাসা করুন, “সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে?”। 

তারা বলবে: “(এগুলিও) আল্লাহর”।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিরক অমার্জনীয়। মুলত শিরকের জন্যেই হয়েছিলো সত্য মিথ্যা নির্ধারণকারী ইসলামের প্রথম যুদ্ধ, ‘বদর যুদ্ধ’। বদির যুদ্ধের  প্রাক্কালে আবু জাহেল ও হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) উভয় পক্ষই আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছেন। আর আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন  প্রকৃত সত্য পথ অবলম্বনকারীদের কেই সাহায্য করেছিলেন। 

আল্লাহ এক অদ্বিতীয়। তিনিই ক্ষমতাশালী। তাঁর কোন শরিক নাই। আর ঈমানদার মুসলিম হিসেবে এটি আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে।

আল্লাহ শিরককারীদের’কে কখনো ক্ষমা করবেন না। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তাকে তওবার মাধ্যমে মাফ করবেন।

সুরা নিসায় আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন”।

ডা. সাঈদ এনাম

সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি) 

সিলেট মেডিকেল কলেজ 

ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন 

পোস্ট শেয়ার করুন

পবিত্র কাবা থেকে বদরের প্রান্তরে…

আপডেটের সময় : ১২:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

পবিত্র কাবা থেকে বদরের প্রান্তরে…

“কোন বিশেষ মসজিদে বা ওলী’র মাজারে টাকা দিয়ে যদি ভাবেন এটি আপনার মনের আশা পূর্ণ করবে তাহলে আপনি নিশ্চিত শিরক করলেন আবু জাহেলের মতো!”

বিষয়টি কেমন আৎকে উঠার মতো না? হ্যা। অবশ্যই। তবে এটাই সত্যি। 

আবু জাহেল ও তৎকালীন কুরাইশ নেতারা আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মানতো। তারা আল্লাহর ইবাদত করতো। আল্লাহর পছন্দ অনুযায়ী সন্তানের নাম রাখতো। যেমন আব্দুল্লাহ যার অর্থ ‘আল্লাহর দাস’। তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে পছন্দের নাম।

তারা আল্লাহর ঘর কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ করতো। আবু জাহেলরা হজ্ব করতো, রোজা রাখতো এমন কি নামাজ ও পড়তো। যারা হজ্ব করতে আসতো তাদেরকে তারা বিনা মূল্যে আথিতেয়তা করতো সর্বোচ্চ দিয়ে। একে তারা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ মনে করতো।

শুধু তাই নয় তারা তাদের কেবল হালাল উপায়ে অর্জিত  আয় কাবা শরীফের রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহার করতো। 

কাবা ঘরকে তারা এতো শ্রদ্ধা করতো যে চুল পরিমান হারাম আয় তারা কাবা ঘরের জন্যে ব্যয় করতো না। কারন তারা বলতো, তারা মানতো এটি আল্লাহর ঘর। আল্লাহর ঘরে সুদ, ঘুষ, যেনা, ব্যভিচার, অবৈধ লুটপাটের, আয় ব্যয় করা যাবেনা। 

কাবা ঘরের প্রতি তাদের সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ এতোই দৃঢ়  ছিলো যে একবার হালাল অর্থের অভাবে কাবার একটি দেয়াল নির্মাণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অথচ তাদের কাছে তখন হাজার হাজার রাজ প্রাসাদ নির্মাণ করার অর্থ পড়ে ছিলো। কিন্তু তাদের ঐ যে একটি ‘আকিদা’ বা ‘শ্রদ্ধাবোধ’যে আমরা যতই খারাপ হই, কিন্তু আমরা আল্লাহর ঘরে হারাম টাকা লাগাবোনা।

বদর যুদ্ধে রওয়ানা দেওয়ার আগে আবু জাহেল ও মুক্কার সকল কুরাইশ নেতা কাবায় গিয়ে তার দেয়াল ধরে অজোর কান্নায় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছিলো, 

‘হে আল্লাহ আমরা যদি তোমার দ্বীনের উপর থাকি তাহলে মোহাম্মদের উপর আমাদের কে বিজয়ী করো আর নাহলে আমাদের ধ্বংস করে দাও’। 

এদিকে আল্লাহর রাসুল বদরের প্রান্তরে সারারাত আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে কেঁদেছিলেন, “হে আল্লাহ, তোমার দ্বীন কে তুমি রক্ষা করো”।

ইসলামের ইতিহাসের সত্য মিথ্যা নির্ধারণকারী প্রথম যুদ্ধে আবু জাহেলরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।

বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে আপন আত্মীয়দের। একদিকে মুশরিক অন্য দিকে এক আল্লাহতে বিশ্বাসী ঈমানদার। ছেলে লড়েছে মায়ের বিরুদ্ধে। যেমন আবু জাহেল ছিলো মুশরিক অপর দিকে তার মা হজরত আসমা ছিলেন মদিনায় হিজরতকারী মহিলা সাহাবী। (আবু জাহেলদের বিরোধিতা সইতে না পেরে তিনিও রাসুলের সাথে মদিনায় হিজরত করেন)। 

জামাই লড়েছেন শ্বশুরের সাথে। যেমন রাসুল সা. এর বড় মেয়ে জয়নাব (রা:) এর  জামাই ‘আবুল আস’ ছিলেন বদর যুদ্ধের কমান্ডার আবুজাহেলের সাথে একজন সম্মুখসারীর অস্ত্রধারী। আর রাসুল ছিলেন মুসলিম বাহিনীর  কমান্ডার। 

বদর যুদ্ধে আবুল আস যুদ্ধ বন্ধী হন। মুক্তিপণ হিসেবে জয়নাব রা: তার বিয়ের সময় রাসুল কতৃক দেয়া অনিন্দ্য সুন্দর মুল্যবান উপহার স্বর্নের ‘হার’  প্রেরণ করলে তা দেখে রাসুল সা: আবুল আস এর যুদ্ধবন্দীর বিষয়টি জানতে পারেন। তাঁর মন কেঁদে উঠে। এ তাঁরই দেয়া আদরের বড় মেয়েকে উপহার। এছাড়া আবুল৷ আস রাসুল সা এর ভাগ্না ও ছিলেন। ( উম্মাহাতুল মুমিনীন খাদিজা রা: এর ছোট বোনের ছেলে।) 

(রাসুল সা. এর বড় মেয়ে জয়নাব ছিলেন ঈমানদার কিন্তু তার স্বামী আবুল আস ছিলেন মুশরিক। মুশরিক আবু জাহেলদের নির্যাতনে রাসুল হিজরত করলেও তখন জয়নাব (রা:)তার স্বামীর সাথে মক্কায় রয়ে যান। জয়নাব (রা.) এবং  তার স্বামীর পারষ্পরিক ভালোবাসার প্রসংশা স্বয়ং রাসুল সা. করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, মুশরিকের সাথে সংসার করা যাবেনা এ বিধান তখনও নাজিল হয়নি।)

যা হোক বদর যুদ্ধে আরো লড়াই হয়েছে ছেলে বাবার। যেমন আবু উবাইদা তারা বাবা আব্দুল্লাহ ইবনুল জাররাহ। (আবু উবাইদা ইসলাম গ্রহণ করলেও তার বাবা ছিলেন মুশরিক)। ভাই লড়েছে ভাইয়ের সাথে, চাচা ভাতিজার সাথে, মামা ভাগ্নের সাথে আজন্ম বন্ধু লড়েছে আজন্ম বন্ধুর সাথে।

ইন্টারেস্টিং হলো উভয় পক্ষই কিন্তু আল্লাহ কে বিশ্বাস করতো মহান সৃষ্টিকর্তা হিসেবে কিন্তু তফাৎ ছিলো বেসিকে (Basic)। তা হলো আল্লাহর সাথে বা আল্লাহর ক্ষমতার সাথে অন্য কাউকে পরোক্ষভাবে শরীক করা। 

আবু জাহেলদের আকীদা ছিলো, আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা তবে তার সাথে আরো কিছু উপকারী ও সাহায্যকারী, আল্লাহর সান্নিধ্য পাইয়ে দেয়াকারী বা মাধ্যমকারী, ভাগ্য পরিবর্তনকারী, আছেন যাদের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া যায়। শুধু নৈকট্য নয় ভাগ্য ফিরানো যায়, বিপদে উপকারও পাওয়া যায়। 

তারা সে সমস্ত কাল্পনিক শক্তির, উপকারীর, ক্ষমতা অধিকারীর কিংবা ভাগ্য পরিবর্তনকারীর  মূর্তি বানিয়ে সাজিয়ে সাথে রাখতো নিজের ঘরে। তারা কাবা ঘরের রাখতো এবং আল্লাহর পাশাপাশি তাদেরকে সেজদা করতো। 

এটাই হলো ঈমানদার ও মুশরিকদের মধ্যে বেসিক ডিফ্রেন্স। 

আপনি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করতে পারবেন না। মানতে হবে তিনিই সকল ক্ষমতার উৎস। তিনি রাহমানুর রাহীম। ভালো বা মন্দ যা আসে তা তার পক্ষ থেকেই। একমাত্র তিনিই পারেন ক্ষমা করতে, ভাগ্য পরিবর্তন করতে, সুখ,দুখ,কষ্ট লাঘব করতে। 

এখন আপনি যদি ভাবেন আল্লাহ ক্ষমতাশালী তবে আরো কিছু আছে যেমন, তাবিজ, কবজ, মাজার, কবর,  অলী আওলিয়া, বুজুর্গ, দরবেশ বা পীর, তাদের কবর, ছবি, আপনাকে ও আপনার পরিবার’কে সুরক্ষা দিবে। 

কিউ যদি ভাবেন বিপদ আপদ, ভাগ্য পরিবর্তন , সন্তান লাভ, আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়া,সুদ, ঘুষ, জেনা, চুরি, ডাকাতি, লুট, হারাম উপার্জন, সহ সকল প্রকার কবীরা ও সাগীরা গুনাহ কবর, মাজার, পীর আউলিয়া, বুজুর্গ ব্যক্তি মাফ করিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখেন, তাহলে কিন্তু প্রকারান্তরে  সেই আবু জাহেলদের মতোই আকীদা হয়ে গেলো।  যারা আল্লাহর মানতো পাশাপাশি তার সঙ্গে শিরক ও করতো। 

পবিত্র কোরআনে সুরা মুমিনূল এ আল্লাহ বলেন,

“হে রাসূল! আপনি তাদের) জিজ্ঞাসা করুন, যদি তোমরা জানো তবে বল-পৃথিবী এবং এতে যারা আছে,তারা কার (সৃষ্টি)?”। 

“তারা বলবে: সবই আল্লাহর”। 

বলুন, “তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?”। 

আপনি (আবার) জিজ্ঞাসা করুন, “সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে?”। 

তারা বলবে: “(এগুলিও) আল্লাহর”।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিরক অমার্জনীয়। মুলত শিরকের জন্যেই হয়েছিলো সত্য মিথ্যা নির্ধারণকারী ইসলামের প্রথম যুদ্ধ, ‘বদর যুদ্ধ’। বদির যুদ্ধের  প্রাক্কালে আবু জাহেল ও হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) উভয় পক্ষই আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছেন। আর আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন  প্রকৃত সত্য পথ অবলম্বনকারীদের কেই সাহায্য করেছিলেন। 

আল্লাহ এক অদ্বিতীয়। তিনিই ক্ষমতাশালী। তাঁর কোন শরিক নাই। আর ঈমানদার মুসলিম হিসেবে এটি আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে।

আল্লাহ শিরককারীদের’কে কখনো ক্ষমা করবেন না। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তাকে তওবার মাধ্যমে মাফ করবেন।

সুরা নিসায় আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন”।

ডা. সাঈদ এনাম

সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি) 

সিলেট মেডিকেল কলেজ 

ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন