ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদে পর্তুগালে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা প্রিয়জনদের মানসিক রোগ যদি আপনজন বুঝতে না পারেন আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছে পর্তুগাল আওয়ামীলীগ যেকোনো প্রচেষ্টা এককভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়: দুদক সচিব শ্রীমঙ্গলে দুটি চোরাই মোটরসাইকেল সহ মিল্টন কুমার আটক পর্তুগালের অভিবাসন আইনে ব্যাপক পরিবর্তন পর্তুগাল বিএনপি আহবায়ক কমিটির জুমে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয় এমপি আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার ঘটনায় আটক তিনজন , এতে বাংলাদেশী মানুষ জড়িত:স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ ইরান দুতাবাসে রাইসির শোক বইয়ে মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া

অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেটের সময় : ০২:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৭
  • / ১৩২৯ টাইম ভিউ

গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে তিন মাস পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে এমিরেটাস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীর ঢল নামে। তাকে একনজর দেখতে রাজধানী ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন। খালেদা জিয়া বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর পুরো রাজপথে সৃষ্টি হয় জনস্রোত। নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। গাড়ির ভেতরে তাকে রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে দেখা যায়।
খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে নামার পর গাড়িতে চড়ে সরাসরি গুলশানে তার বাসার উদ্দেশে রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন তার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা আখতার। রাস্তায় অপেক্ষমাণ নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে গুলশানের বাসায় পৌঁছতে তার আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। রাত ঠিক ৮টায় তিনি বাসায় পৌঁছেন। এরপর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দলীয় নেতাকর্মীদের বিদায় জানান। বাসায় পৌঁছার পর সেখানে তার ছোট ভাইয়ের বউ কানিজ ফাতেমা, উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি ভালো আছি দোয়া করো।’

আজ বৃহস্পতিবার জামিনের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এ যাবেন খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এদিকে বিমানবন্দরে আসতে নেতাকর্মীদের পদে পদে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। ১৫ জুলাই চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করেন। তার ফেরা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নানা মন্তব্য করলেও সবকিছু মিথ্যা প্রমাণিত করে চেয়ারপারসন চিকিৎসা শেষে যথাসময়ে দেশে ফিরেছেন বলে জানান বিএনপি নেতারা।
এর আগে নির্ধারিত সময় বিকাল ৫টা ৭ মিনিটে বিমানবন্দরে নামেন খালেদা জিয়া। আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিমানবন্দর থেকে ৫টা ২৫ মিনিটে বাসার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। এর আগে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন খালেদা জিয়া। সেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী তাকে বিদায় জানান। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, দলের ঐক্য বড় বিষয়। দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। মুরব্বিদের সম্মান দিতে হবে। তরুণদের প্রাধান্য দিতে হবে। অবশ্যই সিনিয়রদেরও প্রয়োজন আছে। সিনিয়র নেতাদের বলব, তরুণদের কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন। এখানে যারা ছাত্র আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। রাজনীতি না করলেও দেশে গিয়ে ভোট  দেবেন।
হিথরো বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে আসা যুক্তরাজ্য নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে মিটিং করতে পারিনি। আপ্যায়ন করতে চেয়েছেন, আমি অংশ নিতে পারিনি। আমি এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য। মঙ্গলবারও ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। আপনারা যারা প্রবাসে আছেন, তারা দেশে ভোটার হতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোটার হতে পারবেন।’
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়া আরও বলেন, আল্লায় বাঁচিয়ে রাখলে, ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ আপনাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করব। মিটিং করব। ভালোভাবে যেন  দেশে  পৌঁছাতে পারি, দোয়া করবেন। আপনাদের ভাইয়ার (তারেক রহমান) সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, তার প্রতি খেয়াল রাখবেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তাকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম। ভিআইপি লাউঞ্জে সিনিয়র নেতাদের পুলিশ ঢুকতে না দেয়ায় তারা বিমানবন্দর মসজিদের কাছের সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে খালেদাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল মান্নান, মীর নাছির, খন্দকার মাহবুব হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস কাদের চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, মো. শাহজাহান, আহমেদ আজম খান, রুহুল আলম চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, লুৎফর রহমান খান আজাদ, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিলকিস জাহান শিরিন, সানাউল্লাহ মিয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, সাইফুল আলম নীরব, খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করিম বাদরু, এসএম জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম নয়ন, মাহবুবুল হাসান পিংকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, হেলাল খান, শায়রুল কবির খান, শাহরিয়ার ইসলাম, শামসুদ্দিন দিদার, মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল বাছিত আঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসার প্রমুখ। এছাড়া রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশালের সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন, ঢাকা জেলার সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাহউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, গাজীপুরের নেতা হাসান উদ্দিন সরকার, সিলেটের সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম তাদের সমর্থকদের নিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়ান। তাদের হাতের ব্যানারে খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ অভিহিত করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও অভ্যর্থনা জানান। এদিকে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে পুলিশ। বিমানবন্দরের ভেতরে আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য ছিল, বাইরেও মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। বিমানবন্দরের সামনে দুটি জলকামান, প্রিজন ভ্যানও ছিল। এছাড়া বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ও মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে নামার আগে পুলিশ নেতাকর্মীদের সেখানে প্রবেশে বাধা দেন। এ সময় মৃদু ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তবে খালেদা জিয়া বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নমনীয় দেখা যায়।
বিমানবন্দরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের সড়কের পাশে দাঁড়াতে বাধা দিয়েছে। মওদুদ বলেন, ‘আমাদের নেত্রী দেশে ফিরবেন বলে দলের নেতাকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে। অথচ পুলিশ নানাভাবে তাদের বাধা দিচ্ছে। পুলিশ সড়কে গণপরিবহনও বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে আমাদের কর্মী-সমর্থকরা না আসতে পারে।’ মির্জা আব্বাস বলেন, বাধা সত্ত্বেও মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি প্রমাণ করে বিএনপির চেয়ারপারসনের জনপ্রিয়তার ধারেকাছেও কেউ নেই।
এদিকে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে দুপুরের পর থেকে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নেন দলটির নেতাকর্মীরা। আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। অনেক জায়গায় গণপরিবহনও বন্ধ করে দেয়া হয়। পুলিশের বাধা এড়াতে নানা কৌশলে তারা বিমানবন্দরে আসেন। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পথচারীদের মতো বিমানবন্দরে আসেন। পুরান ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের আশপাশের নেতাকর্মীরা কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে বিমানবন্দর এলাকায় পৌঁছেন। সাড়ে ৪টার দিকে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে রাস্তার পাশে মানবপ্রাচীর তৈরি করেন তারা। বিএনপি চেয়ারপারসনকে একনজর দেখতে সাধারণ জনতাও অংশ নেন বিএনপির এ অভ্যর্থনায়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিমানবন্দর মোড় ঘোরার পরই নেতাকর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাস্তায় নেমে পড়ে। খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি নেতাকর্মীরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেন। গাড়িবহরের সামনে কয়েকশ’ মোটরসাইকেল নিয়ে স্কর্ট দেন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। গাড়িবহরের সামনে-পেছনে জনতার ঢল নামে। গাড়ির ভেতর থেকে খালেদা জিয়া উপস্থিত নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান। নেতাকর্মীদের বাঁধভাঙা উপস্থিতিতে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। খিলক্ষেতের কাছে পৌঁছার পর গাড়ির ভেতরে তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়। নেতাকর্মীদের হাতে ব্যানারে খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ লেখাসহ নানা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি খালেদা গর্ব মোদের আলাদা’ এ রকম নানা স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। ‘দশ টাকা চাল দে নইলে গদি ছেড়ে দে’ সরকারবিরোধী এরকম বিভিন্ন স্লোগানও দেয়া হয়। ছাত্রদল ঢাকা মহানগর (পশ্চিম) শাখার নেতাকর্মীরা নজর কাড়ে। তাদের সবার পরনে ছিল সাদা রঙের টি-শার্ট। টি-শার্টের পেছনে লেখা ‘দুর্নীতি-দুঃশাসন হবে শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’। খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করতে আগেই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে খিলক্ষেতে অবস্থান নেন। তার পাশেই অবস্থান নেন মহিলা দলের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়াকে তারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদীসহ রাজধানীর আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে পৌঁছেন। গাজীপুর থেকে জেলা  বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সোহরাব হোসেন ট্রাকে করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে বিমানবন্দর গোলচত্ব¡র এলাকায় অবস্থান নেন।
এদিকে রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আজকে বিমানবন্দরের বাইরে লাখ লাখ মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে তাদের প্রাণের অন্তস্তল থেকে সংবর্ধনা জানিয়েছে। এই সংবর্ধনা নজিরবিহীন। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনগণ দেশনেত্রীকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, দেশনেত্রী  খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। আমরা সব সময় প্রত্যাশা করি দেশের মানুষ যেভাবে তাকে ভালোবাসেন, গণতন্ত্রের জন্য তিনি যেভাবে সংগ্রাম করছেন, সেই সংগ্রামকে আমরা যেন অব্যাহত রাখতে পারি এবং বিজয় অর্জন করতে পারি- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করছি, তিনি কাল (বৃহস্পতিবার) আদালতে যাবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা উপলক্ষে নেতাকর্মীদের ঢল নানায় বিমানবন্দর বিশ্বরোড সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। যার ছোঁয়া লাগে রাজধানীর অন্যান্য সড়কেও। দুপুরের পর রাজপথে গণপরিবহনের সংখ্যা কম দেখা যায়। মিরপুর ও বনানী থেকে উত্তরা যাওয়ার পথে পুরো রাস্তায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তারা কোনো গাড়ি পাননি। পরে বাধ্য হয়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। এ সময় নারী ও শিশুদের অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়। জাহিদুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে যানজটের কারণে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হন।

পোস্ট শেয়ার করুন

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া

আপডেটের সময় : ০২:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে তিন মাস পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে এমিরেটাস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীর ঢল নামে। তাকে একনজর দেখতে রাজধানী ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন। খালেদা জিয়া বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর পুরো রাজপথে সৃষ্টি হয় জনস্রোত। নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। গাড়ির ভেতরে তাকে রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে দেখা যায়।
খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে নামার পর গাড়িতে চড়ে সরাসরি গুলশানে তার বাসার উদ্দেশে রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন তার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা আখতার। রাস্তায় অপেক্ষমাণ নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে গুলশানের বাসায় পৌঁছতে তার আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। রাত ঠিক ৮টায় তিনি বাসায় পৌঁছেন। এরপর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দলীয় নেতাকর্মীদের বিদায় জানান। বাসায় পৌঁছার পর সেখানে তার ছোট ভাইয়ের বউ কানিজ ফাতেমা, উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি ভালো আছি দোয়া করো।’

আজ বৃহস্পতিবার জামিনের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এ যাবেন খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এদিকে বিমানবন্দরে আসতে নেতাকর্মীদের পদে পদে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। ১৫ জুলাই চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করেন। তার ফেরা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নানা মন্তব্য করলেও সবকিছু মিথ্যা প্রমাণিত করে চেয়ারপারসন চিকিৎসা শেষে যথাসময়ে দেশে ফিরেছেন বলে জানান বিএনপি নেতারা।
এর আগে নির্ধারিত সময় বিকাল ৫টা ৭ মিনিটে বিমানবন্দরে নামেন খালেদা জিয়া। আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিমানবন্দর থেকে ৫টা ২৫ মিনিটে বাসার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। এর আগে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন খালেদা জিয়া। সেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী তাকে বিদায় জানান। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, দলের ঐক্য বড় বিষয়। দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। মুরব্বিদের সম্মান দিতে হবে। তরুণদের প্রাধান্য দিতে হবে। অবশ্যই সিনিয়রদেরও প্রয়োজন আছে। সিনিয়র নেতাদের বলব, তরুণদের কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন। এখানে যারা ছাত্র আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। রাজনীতি না করলেও দেশে গিয়ে ভোট  দেবেন।
হিথরো বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে আসা যুক্তরাজ্য নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে মিটিং করতে পারিনি। আপ্যায়ন করতে চেয়েছেন, আমি অংশ নিতে পারিনি। আমি এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য। মঙ্গলবারও ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। আপনারা যারা প্রবাসে আছেন, তারা দেশে ভোটার হতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোটার হতে পারবেন।’
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়া আরও বলেন, আল্লায় বাঁচিয়ে রাখলে, ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ আপনাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করব। মিটিং করব। ভালোভাবে যেন  দেশে  পৌঁছাতে পারি, দোয়া করবেন। আপনাদের ভাইয়ার (তারেক রহমান) সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, তার প্রতি খেয়াল রাখবেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তাকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম। ভিআইপি লাউঞ্জে সিনিয়র নেতাদের পুলিশ ঢুকতে না দেয়ায় তারা বিমানবন্দর মসজিদের কাছের সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে খালেদাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল মান্নান, মীর নাছির, খন্দকার মাহবুব হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস কাদের চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, মো. শাহজাহান, আহমেদ আজম খান, রুহুল আলম চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, লুৎফর রহমান খান আজাদ, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিলকিস জাহান শিরিন, সানাউল্লাহ মিয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, সাইফুল আলম নীরব, খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করিম বাদরু, এসএম জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম নয়ন, মাহবুবুল হাসান পিংকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, হেলাল খান, শায়রুল কবির খান, শাহরিয়ার ইসলাম, শামসুদ্দিন দিদার, মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল বাছিত আঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসার প্রমুখ। এছাড়া রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশালের সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন, ঢাকা জেলার সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাহউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, গাজীপুরের নেতা হাসান উদ্দিন সরকার, সিলেটের সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম তাদের সমর্থকদের নিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়ান। তাদের হাতের ব্যানারে খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ অভিহিত করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও অভ্যর্থনা জানান। এদিকে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে পুলিশ। বিমানবন্দরের ভেতরে আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য ছিল, বাইরেও মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। বিমানবন্দরের সামনে দুটি জলকামান, প্রিজন ভ্যানও ছিল। এছাড়া বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ও মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে নামার আগে পুলিশ নেতাকর্মীদের সেখানে প্রবেশে বাধা দেন। এ সময় মৃদু ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তবে খালেদা জিয়া বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নমনীয় দেখা যায়।
বিমানবন্দরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের সড়কের পাশে দাঁড়াতে বাধা দিয়েছে। মওদুদ বলেন, ‘আমাদের নেত্রী দেশে ফিরবেন বলে দলের নেতাকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে। অথচ পুলিশ নানাভাবে তাদের বাধা দিচ্ছে। পুলিশ সড়কে গণপরিবহনও বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে আমাদের কর্মী-সমর্থকরা না আসতে পারে।’ মির্জা আব্বাস বলেন, বাধা সত্ত্বেও মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি প্রমাণ করে বিএনপির চেয়ারপারসনের জনপ্রিয়তার ধারেকাছেও কেউ নেই।
এদিকে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে দুপুরের পর থেকে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নেন দলটির নেতাকর্মীরা। আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। অনেক জায়গায় গণপরিবহনও বন্ধ করে দেয়া হয়। পুলিশের বাধা এড়াতে নানা কৌশলে তারা বিমানবন্দরে আসেন। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পথচারীদের মতো বিমানবন্দরে আসেন। পুরান ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের আশপাশের নেতাকর্মীরা কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে বিমানবন্দর এলাকায় পৌঁছেন। সাড়ে ৪টার দিকে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে রাস্তার পাশে মানবপ্রাচীর তৈরি করেন তারা। বিএনপি চেয়ারপারসনকে একনজর দেখতে সাধারণ জনতাও অংশ নেন বিএনপির এ অভ্যর্থনায়। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিমানবন্দর মোড় ঘোরার পরই নেতাকর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাস্তায় নেমে পড়ে। খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি নেতাকর্মীরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেন। গাড়িবহরের সামনে কয়েকশ’ মোটরসাইকেল নিয়ে স্কর্ট দেন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। গাড়িবহরের সামনে-পেছনে জনতার ঢল নামে। গাড়ির ভেতর থেকে খালেদা জিয়া উপস্থিত নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান। নেতাকর্মীদের বাঁধভাঙা উপস্থিতিতে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। খিলক্ষেতের কাছে পৌঁছার পর গাড়ির ভেতরে তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়। নেতাকর্মীদের হাতে ব্যানারে খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ লেখাসহ নানা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি খালেদা গর্ব মোদের আলাদা’ এ রকম নানা স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। ‘দশ টাকা চাল দে নইলে গদি ছেড়ে দে’ সরকারবিরোধী এরকম বিভিন্ন স্লোগানও দেয়া হয়। ছাত্রদল ঢাকা মহানগর (পশ্চিম) শাখার নেতাকর্মীরা নজর কাড়ে। তাদের সবার পরনে ছিল সাদা রঙের টি-শার্ট। টি-শার্টের পেছনে লেখা ‘দুর্নীতি-দুঃশাসন হবে শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’। খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করতে আগেই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে খিলক্ষেতে অবস্থান নেন। তার পাশেই অবস্থান নেন মহিলা দলের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়াকে তারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদীসহ রাজধানীর আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে পৌঁছেন। গাজীপুর থেকে জেলা  বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সোহরাব হোসেন ট্রাকে করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে বিমানবন্দর গোলচত্ব¡র এলাকায় অবস্থান নেন।
এদিকে রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আজকে বিমানবন্দরের বাইরে লাখ লাখ মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে তাদের প্রাণের অন্তস্তল থেকে সংবর্ধনা জানিয়েছে। এই সংবর্ধনা নজিরবিহীন। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনগণ দেশনেত্রীকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, দেশনেত্রী  খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। আমরা সব সময় প্রত্যাশা করি দেশের মানুষ যেভাবে তাকে ভালোবাসেন, গণতন্ত্রের জন্য তিনি যেভাবে সংগ্রাম করছেন, সেই সংগ্রামকে আমরা যেন অব্যাহত রাখতে পারি এবং বিজয় অর্জন করতে পারি- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করছি, তিনি কাল (বৃহস্পতিবার) আদালতে যাবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা উপলক্ষে নেতাকর্মীদের ঢল নানায় বিমানবন্দর বিশ্বরোড সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। যার ছোঁয়া লাগে রাজধানীর অন্যান্য সড়কেও। দুপুরের পর রাজপথে গণপরিবহনের সংখ্যা কম দেখা যায়। মিরপুর ও বনানী থেকে উত্তরা যাওয়ার পথে পুরো রাস্তায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তারা কোনো গাড়ি পাননি। পরে বাধ্য হয়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। এ সময় নারী ও শিশুদের অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়। জাহিদুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে যানজটের কারণে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হন।