ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
স্বৈরাচার সরকার পতনের পর যুক্তরাজ্যে ফিরছেন সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি পর্তুগাল শাখার উদ্যোগে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত! বন্যার্ত মানুষের ত্রান তহবিলের জন্যে ৬ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘোষণা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বেজা শাখার কর্মি সম্মেলন অনুষ্ঠিত বিমানের নতুন চেয়ারম্যান কুলাউড়ার আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও ২৪ কোটা আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা দোয়া মাহফিল পর্তুগালে রাজনগর প্রবাসী ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আত্মপ্রকাশ পর্তুগাল বিএনপি’র আয়োজনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বরণে দোয়া ও মাহফিল সম্পন্ন বিমূর্ত সব মুর্হুতরা, আমার মা’য়ের সাথের শেষ শনিবার – শাহারুল কিবরিয়া বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদে পর্তুগালে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা প্রিয়জনদের মানসিক রোগ যদি আপনজন বুঝতে না পারেন

দেশের সবচেয়ে বড় ১০৮ কক্ষের মাটির বাড়ি নওগাঁয়

দেশদিগন্ত নিউজ ডেক্সঃ
  • আপডেটের সময় : ০৮:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৯
  • / ১২৯৭ টাইম ভিউ

দেশদিগন্ত নিউজ ডেক্সঃ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মাটির বাড়ি। গ্রামের মানুষের কাছে গরিবের এসি হিসেবে খ্যাত। মাটির বাড়ি শীত ও গরমের সময় বেশ আরামদায়ক। এক সময় গ্রামের বিত্তশালীরাও অনেক অর্থ ব্যয় করে মাটির দোতলা বাড়ি তৈরি করতেন। তবে ইট, বালি ও সিমেন্টের আধুনিকতায় মাটির বাড়ি এখন প্রায় বিলীনের পথে। এমন এক গল্প রয়েছে নওগাঁর মহাদেবপুরের আলিপুর গ্রামে।

আলিপুর গ্রামে ১৯৮৬ সালে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় ১০৮ কক্ষের একটি বাড়ি। এর ৯৬টি বড় ১২টি ছোট কক্ষ। বাড়িটি ৩ বিঘা জমির উপর নির্মিত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ ফিট, প্রস্থ ১০০ ফিট।

বাড়িটিতে ছাউনির জন্য টিন লেগেছে ২০০ বান্ডেল। মাটির এই বাড়িটি দেখতে অনেকটা রাজ প্রাসাদের মতো। প্রায় ৩২ বছর আগে বিশাল এই দোতলা বাড়িটি নির্মাণ করেছেন দুই সহোদর সমশের আলী মণ্ডল ও তাহের আলী মণ্ডল।

আলিপুর গ্রামের ৬০ বছরের বৃদ্ধ আসমত আলী বলেন, মাটি খড় ও পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। কারণ একসঙ্গে বেশি উঁচু করে মাটির দেয়াল তৈরি করা যায় না। প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার উপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরি করা হয়। এভাবে দোতলা বাড়িটির ২০-২২ ফুট উঁচু করে নির্মিত হয়েছে।

গ্রামের বৃদ্ধ লয়খত আলী বলেন, বাড়িটির সৌন্দর্য বাড়াতে চুন ও আলকাতরার প্রলেপ দেয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে মাটির দোতলা বাড়ি নির্মাণ করতে ৯ মাস সময় লাগে। তবে এই বাড়িটি সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর। বাড়িসহ আশপাশের মোট ২১ বিঘা জমি রয়েছে। আর এ বাড়িটি তৈরি করতে একটি বিশাল পুকুর খনন করতে হয়েছে। সে সময় একই দোকান থেকে ২০০ বান্ডেল টিন কিনে বাড়িতে ব্যবহার করা হয়। আর এজন্য দোকানদার বাড়িওয়ালাকে একটি চায়না ফোনিক্স বাইসাইকেল উপহার দেন। আর টিন সংগ্রহ করতে দোকানী সময় নিয়েছিল সাত দিন।

সমশের আলী মণ্ডলের স্ত্রী ফাতেমা বেওয়া বলেন, পায়ে হেঁটে একবার বাড়ির চার ধার চক্কর দিতে সময় লাগে ৬-৮ মিনিট। ১০৮ কক্ষের এই বিশাল বাড়িতে প্রবেশের দরজা ৭টি। তবে প্রতিটি ঘরে রয়েছে একাধিক দরজা। দোতলায় ওঠার সিঁড়ি রয়েছে ১৮টি। তবে যেকোনো একটি দরজা দিয়েই যাওয়া যাবে ১০৮ কক্ষে। বিশাল আকারের বাড়িটিতে ছোট-বড় সবাই মিলে ৩৬ জন লোক বসবাস করে।

বাড়িটি তৈরি করতে সে সময় বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক কারিগর লেগেছিল। আর বাড়িটি তৈরি করতে যে পরিমাণ মাটি লেগেছিল তা বাড়ির পেছন থেকে নেয়া হয়। বর্তমানে সেখানে একটি বিশাল আকারের পুকুর তৈরি করা হয়েছে।

তাহের আলী মণ্ডলের ছেলে মাসুদ রানা বলেন, ১০ বছর আগে বড় চাচা সমশের আলী ও ৪ বছর আগে তার বাবা তাহের আলী মারা গেছেন। এই বাড়িটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বহন করে আছে।

মহাদেবপুরের চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিবনাথ মিশ্র বলেন, এটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। তার জানা মতে সমগ্র বাংলাদেশে আর কোথাও ১০৮ কক্ষের মাটির বাড়ি নেই। মাসুদ রানার বাবা ও তার চাচা শখের বসে বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ১০৮ কক্ষের বিশাল এই বাড়িটি দেখার জন্য প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে।

পোস্ট শেয়ার করুন

দেশের সবচেয়ে বড় ১০৮ কক্ষের মাটির বাড়ি নওগাঁয়

আপডেটের সময় : ০৮:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০১৯

দেশদিগন্ত নিউজ ডেক্সঃ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য মাটির বাড়ি। গ্রামের মানুষের কাছে গরিবের এসি হিসেবে খ্যাত। মাটির বাড়ি শীত ও গরমের সময় বেশ আরামদায়ক। এক সময় গ্রামের বিত্তশালীরাও অনেক অর্থ ব্যয় করে মাটির দোতলা বাড়ি তৈরি করতেন। তবে ইট, বালি ও সিমেন্টের আধুনিকতায় মাটির বাড়ি এখন প্রায় বিলীনের পথে। এমন এক গল্প রয়েছে নওগাঁর মহাদেবপুরের আলিপুর গ্রামে।

আলিপুর গ্রামে ১৯৮৬ সালে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় ১০৮ কক্ষের একটি বাড়ি। এর ৯৬টি বড় ১২টি ছোট কক্ষ। বাড়িটি ৩ বিঘা জমির উপর নির্মিত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ ফিট, প্রস্থ ১০০ ফিট।

বাড়িটিতে ছাউনির জন্য টিন লেগেছে ২০০ বান্ডেল। মাটির এই বাড়িটি দেখতে অনেকটা রাজ প্রাসাদের মতো। প্রায় ৩২ বছর আগে বিশাল এই দোতলা বাড়িটি নির্মাণ করেছেন দুই সহোদর সমশের আলী মণ্ডল ও তাহের আলী মণ্ডল।

আলিপুর গ্রামের ৬০ বছরের বৃদ্ধ আসমত আলী বলেন, মাটি খড় ও পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। কারণ একসঙ্গে বেশি উঁচু করে মাটির দেয়াল তৈরি করা যায় না। প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার উপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরি করা হয়। এভাবে দোতলা বাড়িটির ২০-২২ ফুট উঁচু করে নির্মিত হয়েছে।

গ্রামের বৃদ্ধ লয়খত আলী বলেন, বাড়িটির সৌন্দর্য বাড়াতে চুন ও আলকাতরার প্রলেপ দেয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে মাটির দোতলা বাড়ি নির্মাণ করতে ৯ মাস সময় লাগে। তবে এই বাড়িটি সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর। বাড়িসহ আশপাশের মোট ২১ বিঘা জমি রয়েছে। আর এ বাড়িটি তৈরি করতে একটি বিশাল পুকুর খনন করতে হয়েছে। সে সময় একই দোকান থেকে ২০০ বান্ডেল টিন কিনে বাড়িতে ব্যবহার করা হয়। আর এজন্য দোকানদার বাড়িওয়ালাকে একটি চায়না ফোনিক্স বাইসাইকেল উপহার দেন। আর টিন সংগ্রহ করতে দোকানী সময় নিয়েছিল সাত দিন।

সমশের আলী মণ্ডলের স্ত্রী ফাতেমা বেওয়া বলেন, পায়ে হেঁটে একবার বাড়ির চার ধার চক্কর দিতে সময় লাগে ৬-৮ মিনিট। ১০৮ কক্ষের এই বিশাল বাড়িতে প্রবেশের দরজা ৭টি। তবে প্রতিটি ঘরে রয়েছে একাধিক দরজা। দোতলায় ওঠার সিঁড়ি রয়েছে ১৮টি। তবে যেকোনো একটি দরজা দিয়েই যাওয়া যাবে ১০৮ কক্ষে। বিশাল আকারের বাড়িটিতে ছোট-বড় সবাই মিলে ৩৬ জন লোক বসবাস করে।

বাড়িটি তৈরি করতে সে সময় বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক কারিগর লেগেছিল। আর বাড়িটি তৈরি করতে যে পরিমাণ মাটি লেগেছিল তা বাড়ির পেছন থেকে নেয়া হয়। বর্তমানে সেখানে একটি বিশাল আকারের পুকুর তৈরি করা হয়েছে।

তাহের আলী মণ্ডলের ছেলে মাসুদ রানা বলেন, ১০ বছর আগে বড় চাচা সমশের আলী ও ৪ বছর আগে তার বাবা তাহের আলী মারা গেছেন। এই বাড়িটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বহন করে আছে।

মহাদেবপুরের চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিবনাথ মিশ্র বলেন, এটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। তার জানা মতে সমগ্র বাংলাদেশে আর কোথাও ১০৮ কক্ষের মাটির বাড়ি নেই। মাসুদ রানার বাবা ও তার চাচা শখের বসে বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ১০৮ কক্ষের বিশাল এই বাড়িটি দেখার জন্য প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে।