ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদে পর্তুগালে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা প্রিয়জনদের মানসিক রোগ যদি আপনজন বুঝতে না পারেন আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছে পর্তুগাল আওয়ামীলীগ যেকোনো প্রচেষ্টা এককভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়: দুদক সচিব শ্রীমঙ্গলে দুটি চোরাই মোটরসাইকেল সহ মিল্টন কুমার আটক পর্তুগালের অভিবাসন আইনে ব্যাপক পরিবর্তন পর্তুগাল বিএনপি আহবায়ক কমিটির জুমে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয় এমপি আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার ঘটনায় আটক তিনজন , এতে বাংলাদেশী মানুষ জড়িত:স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ ইরান দুতাবাসে রাইসির শোক বইয়ে মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর

দুই সাবেক মন্ত্রীর সমর্থনে পরিবহন ধর্মঘট

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : ০৮:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০১৯
  • / ৪৪০ টাইম ভিউ

নতুন এক আইনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে পরিবহন শ্রমিকদের একাংশ যে ধর্মঘট শুরু করেছে, তাতে পেছন থেকে সমর্থন যোগাচ্ছেন সরকারেরই দুই সাবেক মন্ত্রী। অন্যদিকে এই আইন স্থগিত রাখার দাবি নাকচ করে দিয়ে সরকারও অনড় অবস্থান নিয়েছে।

নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিরুদ্ধে শেরপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুরসহ ১০টির বেশি জেলায় বাস মালিক শ্রমিকরা কোন আগাম ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ করে রেখেছেন দুইদিন ধরে। তাদের পাশাপাশি এখন পণ্যবাহী ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যান মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদও বুধবার থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে।

ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম বলছিলেন, নতুন আইনে জেল জরিমানা অনেক বেশি হওয়ায় তারা এর বিরোধিতা করছেন।

বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের প্রধান দু’টি সংগঠনের দু’জন শীর্ষ নেতা শাজাহান খান এবং মসিউর রহমান রাঙ্গা। তারা দুজনেই আওয়ামী লীগের জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।

শাজাহান খান এবং মসিউর রহমান রাঙ্গা দুজনেই বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের দু’টি সংগঠনের পক্ষ থেকে ধর্মঘট বা কর্মবিরতির কোন কর্মসূচি নেয়া হয়নি। কিন্তু তারা আবার একইসাথে একথাও জানিয়েছেন যে, শ্রমিকদের দাবিকে তারা সমর্থন করেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান বলেছেন, সরকারের গঠিত কমিটিতে তারা আইনটিতে বিভিন্ন অপরাধের ব্যাপারে জরিমানা কমানোসহ বেশ কিছু সংশোধনী প্রস্তাব করেছিলেন। সেই আলোচনা যখন চলছে তার মধ্যেই আইনটি কার্যকর করা হয়েছে।

“একজন ড্রাইভারকে যদি ৫লাখ টাকা জরিমানা করা হয়, তারপক্ষে সেই টাকা দেয়া সম্ভব নয়। চালককে ৮ম শ্রেণী এবং তার সহকারীকে পঞ্চম শ্রেণী পাস হতে হবে। এখন একজন দীর্ঘদিন সহকারীর কাজ করে তারপর চালক হলে সে ৮ম শ্রেণীর সার্টিফিকেট কোথায় পাবে? এটা শিথিল করার কথা আমরা বলেছি। এগুলোসহ আরও কিছু বিষয়ে সংশোধনীর প্রস্তাব আমরা দিয়েছি।”

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আইনটি সংসদে উত্থাপন করা হয়েছিল এক বছরেরও বেশি সময় আগে।

এতদিন পর তা কার্যকর করা হলে বাস ট্রাকের মালিক শ্রমিকরা যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে কেন সংকট তৈরি করছেন-এমন প্রশ্ন তুলেছে যাত্রীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারি সংগঠনগুলো।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী দেশে ৭০ লাখের মতো বাস ট্রাক চালকের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখের নিবন্ধন বা লাইসেন্স নেই। আর ৬০ শতাংশ বাস,মিনিবাসের ফিটনেস নেই। এসব সমস্যার জন্য নতুন আইনে বড় অংকের জরিমানা গুনতে হবে।

এটি একটি ভীতি তৈরি করেছে এবং মূলত এই কারণেই মালিক শ্রমিকরা বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মনে করছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতা মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন নামের একটি সংগঠনের পরিচালক ফারিহা ফতেহ বলছিলেন, কথায় কথায় যানবাহন বন্ধ না করে মানুষকে দুর্ভোগে না ফেলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত ছিল।

“আপনি আইন ভঙ্গ করবেন, এটার জন্য আপনাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে না, এটাওতো ঠিক না। কোন সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আপত্তি থাকলে আপনারা সরকারের সাথে বসেন, আলোচনা করেন। কিন্তু এভাবে যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে দেশের বিপদ ডেকে আনলাম, মানুষকে দুর্ভোগে ফেললাম-এটা ঠিক নয়।”

তবে বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে স্বার্থ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাজাহান খান।

তিনি বলেছেন, পরিবহন শ্রমিক মালিকরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করেছে না। তারা আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

“মানুষকে জিম্মি করার অভিযোগ সঠিক নয়। শ্রমিকরা তাদের সমস্যা তুলে ধরে। কোন সমাধান না হলে তখন গিয়ে আন্দোলনের প্রশ্ন আসে।”

এদিকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার বিআরটিএ কার্যালয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিকসহ সব পক্ষের সাথে আলোচনায় বলেছেন, কাউকে শাস্তি দেয়ার জন্য এই আইন করা হয়নি। এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে জরিমানার বিষয় এখন সহনীয় পর্যায়ে রেখে অর্থ্যাৎ আপাতত কিছুটা কম জরিমানা করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।-বিবিসি বাংলা

পোস্ট শেয়ার করুন

দুই সাবেক মন্ত্রীর সমর্থনে পরিবহন ধর্মঘট

আপডেটের সময় : ০৮:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০১৯

নতুন এক আইনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে পরিবহন শ্রমিকদের একাংশ যে ধর্মঘট শুরু করেছে, তাতে পেছন থেকে সমর্থন যোগাচ্ছেন সরকারেরই দুই সাবেক মন্ত্রী। অন্যদিকে এই আইন স্থগিত রাখার দাবি নাকচ করে দিয়ে সরকারও অনড় অবস্থান নিয়েছে।

নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিরুদ্ধে শেরপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুরসহ ১০টির বেশি জেলায় বাস মালিক শ্রমিকরা কোন আগাম ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ করে রেখেছেন দুইদিন ধরে। তাদের পাশাপাশি এখন পণ্যবাহী ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যান মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদও বুধবার থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে।

ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব তাজুল ইসলাম বলছিলেন, নতুন আইনে জেল জরিমানা অনেক বেশি হওয়ায় তারা এর বিরোধিতা করছেন।

বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের প্রধান দু’টি সংগঠনের দু’জন শীর্ষ নেতা শাজাহান খান এবং মসিউর রহমান রাঙ্গা। তারা দুজনেই আওয়ামী লীগের জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।

শাজাহান খান এবং মসিউর রহমান রাঙ্গা দুজনেই বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের দু’টি সংগঠনের পক্ষ থেকে ধর্মঘট বা কর্মবিরতির কোন কর্মসূচি নেয়া হয়নি। কিন্তু তারা আবার একইসাথে একথাও জানিয়েছেন যে, শ্রমিকদের দাবিকে তারা সমর্থন করেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান বলেছেন, সরকারের গঠিত কমিটিতে তারা আইনটিতে বিভিন্ন অপরাধের ব্যাপারে জরিমানা কমানোসহ বেশ কিছু সংশোধনী প্রস্তাব করেছিলেন। সেই আলোচনা যখন চলছে তার মধ্যেই আইনটি কার্যকর করা হয়েছে।

“একজন ড্রাইভারকে যদি ৫লাখ টাকা জরিমানা করা হয়, তারপক্ষে সেই টাকা দেয়া সম্ভব নয়। চালককে ৮ম শ্রেণী এবং তার সহকারীকে পঞ্চম শ্রেণী পাস হতে হবে। এখন একজন দীর্ঘদিন সহকারীর কাজ করে তারপর চালক হলে সে ৮ম শ্রেণীর সার্টিফিকেট কোথায় পাবে? এটা শিথিল করার কথা আমরা বলেছি। এগুলোসহ আরও কিছু বিষয়ে সংশোধনীর প্রস্তাব আমরা দিয়েছি।”

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আইনটি সংসদে উত্থাপন করা হয়েছিল এক বছরেরও বেশি সময় আগে।

এতদিন পর তা কার্যকর করা হলে বাস ট্রাকের মালিক শ্রমিকরা যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে কেন সংকট তৈরি করছেন-এমন প্রশ্ন তুলেছে যাত্রীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারি সংগঠনগুলো।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী দেশে ৭০ লাখের মতো বাস ট্রাক চালকের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখের নিবন্ধন বা লাইসেন্স নেই। আর ৬০ শতাংশ বাস,মিনিবাসের ফিটনেস নেই। এসব সমস্যার জন্য নতুন আইনে বড় অংকের জরিমানা গুনতে হবে।

এটি একটি ভীতি তৈরি করেছে এবং মূলত এই কারণেই মালিক শ্রমিকরা বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মনে করছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতা মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন নামের একটি সংগঠনের পরিচালক ফারিহা ফতেহ বলছিলেন, কথায় কথায় যানবাহন বন্ধ না করে মানুষকে দুর্ভোগে না ফেলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত ছিল।

“আপনি আইন ভঙ্গ করবেন, এটার জন্য আপনাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে না, এটাওতো ঠিক না। কোন সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আপত্তি থাকলে আপনারা সরকারের সাথে বসেন, আলোচনা করেন। কিন্তু এভাবে যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে দেশের বিপদ ডেকে আনলাম, মানুষকে দুর্ভোগে ফেললাম-এটা ঠিক নয়।”

তবে বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে স্বার্থ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাজাহান খান।

তিনি বলেছেন, পরিবহন শ্রমিক মালিকরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করেছে না। তারা আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

“মানুষকে জিম্মি করার অভিযোগ সঠিক নয়। শ্রমিকরা তাদের সমস্যা তুলে ধরে। কোন সমাধান না হলে তখন গিয়ে আন্দোলনের প্রশ্ন আসে।”

এদিকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার বিআরটিএ কার্যালয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিকসহ সব পক্ষের সাথে আলোচনায় বলেছেন, কাউকে শাস্তি দেয়ার জন্য এই আইন করা হয়নি। এর বিভিন্ন ক্ষেত্রে জরিমানার বিষয় এখন সহনীয় পর্যায়ে রেখে অর্থ্যাৎ আপাতত কিছুটা কম জরিমানা করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।-বিবিসি বাংলা