তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদের ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য-১
- আপডেটের সময় : ০১:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯
- / ২২৫৯ টাইম ভিউ
দেশদিগন্ত নিউজঃ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক নিজ স্কুলের সহকারী শিক্ষিকাকে যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত এবং মামলার পলাতক আসামী তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ (৫৬) এর বিষয়ে এবার ভয়াবহ দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্ভর যোগ্য সূত্রে জানা যায়, যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ (৫৬) এর শুধু চারিত্রিক স্খলন জনিত সমস্যা আছে তা নয়, দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের সুবাদে নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার স্বার্থানেষী,অসাধু কিছু লোককে সাথে নিয়ে অত্র বিদ্যালয়কে রীতিমতো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। বিগত বার (১২) বছর ধরে তিনি সরকারি নিয়ম ‘নির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটি’র বিধানকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে কোন প্রকার নির্বাচন না দিয়েই নিজের সুবিধামত ভূয়া কমিটি দেখিয়ে টাকার জোরে উপর মহলকে ম্যানেজ করে নিজের রাজত্ব কায়েম রেখেছেন। এই ক’বছরে তার দাপট ও একাধিপত্যের কাছে হার মেনে অন্তত হাফ ডজন সহকারী শিক্ষক (স্থানীয়) অপদস্থ হয়ে স্কুল ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আর যে ক’জন ঠিকে আছেন তারা নিতান্তই তার অনৈতিক দাপটের নিকট অসহায় ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উনার চাচা, মামা, চাচাতো- মামাতো ভাই এদের সমন্বয়ে বরাবরই নিজেই ‘ভূয়া ম্যানেজিং কমিটি’ গঠন করে সামান্য হাত-খরচার বিনিময়ে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে অফিসিয়াল কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন । যেমন- পূর্বের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন তার আপন চাচা সাদাতুর রহমান আর বর্তমান কমিটির সভাপতি তার আপন মামা মুটুক আহমদ । তার আপন ছোট ভাইয়ের বউকে স্কুলের অফিস সহকারী হিসাবে নিজেই নিয়োগ দিয়েছেন যাতে স্কুলের যাবতীয় গোপন তথ্য তিনি ছাড়া আর কেউ জানতে না পারে । বলা যায় সম্পূর্ণ স্কুলটাই তার পারিবারিক সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে যেখানে এলাকার অন্যান্য সবাই দর্শকের ভূমিকায় আছেন মাত্র। ফলে তিন দিকে ভারতের ত্রিপুরা দ্বারা বেষ্টিত অঞ্চল ন’মৌজার (৯টি গ্রাম) প্রায় ৫০ হাজার জনগোষ্ঠীর একমাত্র ভরসা এই মাধ্যমিক বিদ্যালয় টি একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। বছরের পর বছর মাত্র ১৫০০ টাকা বেতনের খন্ড কালীন শিক্ষক দিয়ে ক্লাশ পরিচালনা করা হচ্ছে যার ফলে বিদ্যালয়ের এসএসসি’র রেজাল্ট খুবই খারাপ ।
বর্তমানে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা (পঞ্চম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত) প্রায় ৯২৭ জন ।ষষ্ঠ শ্রেণীতে ২৫০ জন, মাসিক বেতন-১৫০ টাকা/ সপ্তম শ্রেণীতে ২৫০ জন, মাসিক বেতন-১৫০ টাকা/ অষ্টম শ্রেণীতে ১৫০ জন, মাসিক বেতন-১৫০ টাকা/ নবম শ্রেণীতে ২৩২ জন, মাসিক বেতন-২০০ টাকা/ দশম শ্রেণীতে ৭৫ জন, মাসিক বেতন-২০০ টাকা। উপরন্তু বছরে প্রত্যেক ছাত্রের তিনটি (৩) পরীক্ষা ফি বাবদ ৬০০ টাকা, ভর্তি ফি বাবদ ৮০০ টাকা, টিউটরিয়াল ফি ২০০ টাকা যা বাধ্যতা মূলক ভাবে আদায় করা হয়। যারা সরকারি উপবৃত্তি পায় তাদের কাছ থেকেও বেতন আদায় করা হয়। এভাবে দেখা যায়- মাসিক বেতন, ভর্তি ফি, পরীক্ষা ফি, সার্টিফিকেট ফি ইত্যাদি ধরে বছরে গড়ে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় । এসব হিসাবের বাহিরে আছে সরকারি উপবৃত্তির টাকা (সেখানেও ভূয়া ছাত্র-ছাত্রী দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে), এমপিও ভুক্ত শিক্ষক দের সরকারি বেতনের অংশ, এক-কালীন সরকারি অনুদান, স্থানীয় সরকারের দান-অনুদান, উন্নয়ন খরচ ইত্যাদি।
অন্যদিকে খরচের খাতে আছে- ৫ জন অনারারী শিক্ষক, মাসিক বেতন-২,৫০০ টাকা প্রতিজন, ২ জন অরডিনারী শিক্ষক, মাসিক বেতন ১০০০ টাকা প্রতিজন, ৩ জন নতুন নিয়োগকৃত শিক্ষক মাসিক বেতন নাই, ১ জন জুনিয়র টিচার মাসিক বেতন ৩০০০ টাকা, প্রধান শিক্ষক মাসিক বেতন ৫,০০০ টাকা, ২ জন সহকারী শিক্ষক মাসিক বেতন ২,০০০ টাকা । দারোয়ান, মেনটেনেনস,বিদূৎ, পানি এবং অন্যান্য সর্বমোট মাসিক ব্যয় মিলিয়ে ৪১,৫০০ টাকা হিসাবে বাৎসরিক ব্যয় ৪৯৮,০০০ টাকা । সুতরাং সব মিলিয়ে বাৎসরিক ২২ লক্ষ টাকার আয় এবং বাৎসরিক ৫ লক্ষ টাকার খরচের হিসাব পাওয়া যায়। ফলে বাৎসরিক আয় থেকে বাৎসরিক ব্যয় বাদ দিলে বাৎসরিক উধৃত থাকার কথা ১৭ লক্ষ টাকা। সেই হিসাবে বিগত বার (১২) বছরের উধৃত থাকার কথা ২ কোটি টাকার ও উপরে । কিন্তু মজার বিষয়- স্কুলের নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট আছে ( একাউন্ট নং ০০০০ অগ্রণী ব্যাংক লিঃ, কটারকোনা শাখা) অথচ সেখানে ব্যালেন্স প্রায় শূন্য।
তার মানে এই মহান শিক্ষক ! নিজস্ব পারিবারিক সিন্ডিকেট এবং দুর্নীতি-গ্রস্থ প্রশাসনের উপর ভর করে জনগনের কাছ থেকে আদায় কৃত টাকা অর্ধেক নিজের পকেটে আর অর্ধেক উপর-নীচ, ডানে-বায়ে ছিটিয়ে এতটি বছর নিজ সিংহাসন দখলে রেখে সমাজ সেবার নামে লাগামহীন বাণিজ্যে করে যাচ্ছেন। আর সরকারি বিধি-বিধান, নিয়ম-কানুন কে পাত্তা না দেবার মূল কারন এখানেই ।
উপরোক্ত বিষয়ে এলাকা বাসির দাবী- সরকারি কতৃপক্ষের সঠিক নজরদারি না থাকার কারনে এই জালিয়াত চক্র গড়ে উঠেছে । তবে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন অথবা সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে বাধ্য। চলবে।