তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা থাকছে না
- আপডেটের সময় : ০১:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০১৯
- / ৫৭০ টাইম ভিউ
দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্কঃ প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে কোনো ধরনের পরীক্ষা থাকছে না। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই তিন শ্রেণিতে সব ধরনের পরীক্ষা তুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (২০ মার্চ) দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন উবায়দুল্লাহ বাদল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি, স্কুল থেকে দেয়া ডায়েরির রিপোর্টই মূল্যায়নের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। পরীক্ষার চাপ যেন শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধা হতে না পারে, সেজন্যই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করারও চিন্তা-ভাবনা চলছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কিন্ডার গার্টেনের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ৪ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়মুখী করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে কোনো ধরনের পরীক্ষা নেয়া হয় না। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব পরীক্ষা তুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
১৩ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুকে পড়াশোনার জন্য অতিরিক্ত চাপ না দিতে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমি এটুকুই বলব, কোনোমতেই যেন কোমলমতি শিশুকে কোনো অতিরিক্ত চাপ না দেয়া হয়। তা হলেই দেখবেন তারা ভেতরে একটা আলাদা শক্তি পাবে।
আর তাদের শিক্ষার ভিতটা শক্তভাবে তৈরি হবে। কোমলমতি বয়সে লেখাপড়ার কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করাকে তিনি ‘একধরনের মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করে বলেন, শিশু প্রথমে স্কুলে যাবে এবং হাসি-খেলার মধ্য দিয়ে লেখাপড়া করবে। তারা তো আগে থেকেই পড়ে আসবে না, পড়ালেখা শিখতেই তো সে স্কুলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শিশুর পাঠদান সম্পর্কে নিজস্ব অভিব্যক্তি সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে গিয়ে আরও বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই ৭ বছরের আগে শিশুকে স্কুলে পাঠায় না।
আমাদের দেশে অনেক ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা স্কুলে যায়। কিন্তু তারা যেন হাসতে, খেলতে, মজা করতে করতে পড়াশোনাটাকে নিজের মতো করে করতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাই করা উচিত। সেখানে অনবরত ‘পড়’, ‘পড়’, ‘পড়’ বলাটা বা ধমক দেয়াটা বা আরও বেশি চাপ দিলে শিক্ষার ওপর তাদের আগ্রহ কমে যাবে, একটি ভীতির সৃষ্টি হবে। শিক্ষার প্রতি সেই ভীতিটা যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমি আমাদের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অনুরোধ করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় আমরা দেখি প্রতিযোগিতাটা শিশুর মধ্যে না হলেও বাবা-মায়ের মধ্যে একটু বেশি হয়ে যায়। এটাকেও আমি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে মনে করি। তিনি বলেন, সব শিক্ষার্থীর সমান মেধা থাকবে না এবং সবাই সবকিছু এক রকম করায়াত্ত করতে পারবে না। যার যেটি যেভাবে সহজাতভাবে আসবে, তাকে সেটি গ্রহণ করার সুযোগ দেয়া, যেন শিক্ষাকে সে আপন করে নিয়ে শিখতে পারে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওই অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণশিক্ষা সচিবকে আগামী বছর থেকে প্রাথমিক স্তরের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব পরীক্ষা তুলে দেয়ার নির্দেশ দেন।
ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওইসব দেশে বাচ্চাদের কোনো পরীক্ষা নেই। তারা কীভাবে শিশুর মেধার মূল্যায়ন করে, সেসব বিষয় খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনে কমিটি গঠন করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। ক্লাসের পরীক্ষা যেন শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য কোনো ধরনের বাধা হতে না পারে, সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন তিনি।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সারা দেশে চালু হওয়া প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শিশু এরই মধ্যে সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, তাদের পাসের হারও ভালো।
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে যেখানে তাদের পাসের হার ছিল ৯৫.১৮ শতাংশ, সেখানে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে তা দাঁড়িয়েছে ৯৭.৫৯ শতাংশে। প্রায় আড়াই শতাংশ বেড়েছে। কমেছে ড্রপ আউটের হারও। এই সফলতা ধরে রাখতে প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করা হচ্ছে।
এজন্য চলতি বছর ১৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেবে সরকার। পাশাপাশি আগামী ৫ বছরে আরও প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৪ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে স্কুলে আনতে এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পলিসি পেপার তৈরি করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার পিটিআইতে এ সংক্রান্ত কর্মশালা হবে। কর্মশালার বক্তাদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করা হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করার কথা বলা হয়েছে।