আপডেট

x


ঢাকার আকাশে শুধু কান্নার আওয়াজ

বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | ৭:৩৯ অপরাহ্ণ | 627 বার

ঢাকার আকাশে শুধু কান্নার আওয়াজ

চকবাজারের চুরিহাট্টা মসজিদের পাশের ওয়াহেদ ম্যানশন নামের পাঁচতলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে অর্ধশতাধিক। স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।এদিকে ঢাকা মেডিকেলে নিহতদের লাশ সনাক্ত করতে স্বজনদের ভিড় লেগে গেছে। একইভাবে আগুন লাগার স্থানে নিখোঁজ প্রিয়জনকে খুঁজতে হন্য হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আত্মীয়রা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বজনদের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে।দুর্ঘটনার শিকার এমনি এমনি একটি পরিবারের খোঁজ মিলে। জানা যায়, সোনিয়া (৩২) ও ছেলে সাহিরকে (৩) নিয়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন লালবাগের ডুরি আঙ্গুল লেন এলাকার বাসিন্দা মো. মিঠু (৪০)। বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে স্বজনরা খবর পান, চুড়িহাট্টায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন মিঠু। সেই থেকে এখন পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি তাদের। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান মিঠুর ভায়রা ভাই বাবুল। সারা রাত হাসপাতাল, চকবাজার থানা ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদেরকে জানিয়েও কোনও হদিস মেলেনি পরিবারটির।বৃহস্পতিবার সকালে বাবুল বলেন, কালকে রাতে খবর পাই আমার শ্যালিকার পরিবার নিখোঁজ। ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ইমার্জেন্সি (জরুরি বিভাগ) ও বার্ন ইউনিটে আমরা বার বার খোঁজ নিয়েছি। মিটফোর্ডসহ আশেপাশের অন্য সব হাসপাতালেও লোক পাঠিয়েছি। তাদেরকে পাওয়া যাচ্ছে না।চকবাজারে পারিবারিক ওষুধের ব্যবসা ছিল মঞ্জুর। চুড়িহাট্টা জামে মসজিদের পাশে ওয়াহেদ ম্যানশনের উল্টো দিকে ছিল তার ওষুধের দোকান ‘হায়দার মেডিকো’। চকবাজারেই ইমিটেশন গহনার ব্যবসা ছিল বন্ধু হীরার, আনোয়ারের ছিল ব্যাগের আর নাসিরের ছিল প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবসা।প্রতিদিন কাজ শেষে হায়দার মেডিকোতে এসে বসতেন তারা। একসঙ্গে কিছু সময় গল্প-গুজব করে নিজ নিজ বাসায় ফিরে যেতেন। কিন্তু বুধবার রাতে আর নিজ ঘরে ফেলা হলো না নোয়াখালীর চার বন্ধুর। একসঙ্গেই তারা পরপারে পাড়ি দেন।চকবাজারের ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের সব গল্প আর স্বপ্ন। চিহ্ন হিসেবে রেখে গেছে পোড়া চারটি মাথার খুলি।মঞ্জুর ভাই লিটন জানান, বিকেলেই ভাইয়ের সঙ্গে শেষ দেখা হয়। প্রতি রাতে চার বন্ধু মিলে ফার্মাসিতে আড্ডা দিত। বুধবারও তারা আড্ডায় মিলিত হয়। আগুন লাগার পর তাদের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাত তিনটার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে হায়দার মেডিকোর ভেতরে পাওয়া যায় পোড়া চারটি মাথার খুলি। যেহেতু তারা প্রতি রাতে এখানে আড্ডা দিত, সেহেতু চারটি খুলিই বলে দিচ্ছে, এটা তাদের।রাসেল কবীর নামের এক ব্যক্তি দুই ভাতিজাকে খুঁজছেন। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট, জরুরি বিভাগসহ মেডিকেলে প্রতিটি জায়গায় খুঁজেন কিন্তু আহত বা দগ্ধদের ভিড়ে দুই ভাতিজা রাজু (৩০) আর মাসুদ রানাকে (৩৫) পাননি। পরে সকাল সাতটায় মেডিকেলে আসা লাশের স্তুপে খুঁজে পান তাদের।রাসেল কবির , ওয়াহেদ ম্যানসনের রানা টেলিকম সার্ভিসের দোকানের ভেতরেই ছিল তারা দুজন। কান্নায় ভেঙে পড়া রাসেল কবীর জানান, দিন পনের আগেই বিয়ে করেন চাঁদনীঘাটের বাসিন্দা রানা। আগুন লাগার সময় দুই ভাই দোকানের ভেতরে ছিলেন।তিনি বলেন, এখন কি বলব নতুন বউটারে, দুই ছেলেই আগুনে পুড়ে মরল, কি বলব আমার ভাই-ভাবীকে।সুমাইয়া-রাসেলের মতো এমন অনেক স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ ও এর আশপাশ। মর্গের উৎকট গন্ধ, পোড়া লাশের বিভৎসতা-কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই প্রিয়জনদের খুঁজছেন স্বজনরা।

লাশের সারি এখন মর্গের ভেতর ছাপিয়ে বারান্দায় চলে এসছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে স্বজনদের ভিড় । কেউ খুঁজছে বন্ধুকে, কেউ ভাইকে, কেউ স্ত্রীকে । কেউ আবার স্তব্ধ হয়ে বসে আছে মর্গের সামনে।রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে নটা পর্যন্ত ৭০টি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আনা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি লাশ নারীর, চার শিশু এবং বাকি ৫৮টি পুরুষের।



মন্তব্য করতে পারেন...

comments

deshdiganto.com © 2019 কপিরাইট এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত

design and development by : http://webnewsdesign.com