ঢাকা , শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
বিএনপি পর্তুগাল শাখার উদ্যোগে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত! বন্যার্ত মানুষের ত্রান তহবিলের জন্যে ৬ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘোষণা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বেজা শাখার কর্মি সম্মেলন অনুষ্ঠিত বিমানের নতুন চেয়ারম্যান কুলাউড়ার আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও ২৪ কোটা আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা দোয়া মাহফিল পর্তুগালে রাজনগর প্রবাসী ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আত্মপ্রকাশ পর্তুগাল বিএনপি’র আয়োজনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বরণে দোয়া ও মাহফিল সম্পন্ন বিমূর্ত সব মুর্হুতরা, আমার মা’য়ের সাথের শেষ শনিবার – শাহারুল কিবরিয়া বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদে পর্তুগালে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা প্রিয়জনদের মানসিক রোগ যদি আপনজন বুঝতে না পারেন আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে

জীবনের শেষ সময়ে ভাষা সৈনিক শেখ বদরুজ্জামান চান রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ছয়ফুল আলম সাইফুল, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
  • আপডেটের সময় : ০২:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ২৩৬০ টাইম ভিউ

ছয়ফুল আলম সাইফুল, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ  নিভৃতচারী এক ভাষাসৈনিক শেখ বদরুজ্জামান এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বয়সের ভারে ন্যজ্যু হয়ে পড়ে চলাচলের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। জীবনের শেষ সময়টা এখন তার কাটছে বদ্ধ ঘরে। বিছানায় শুয়ে শুয়েই কেটে যায় দিন রাতের পুরো সময়। প্রাণচ্ছল ভঙ্গিতে নাতি-নাতিদের সাথে তিনি আর সময় কাটাতে পাড়েন না। বিছানাই যেন তার একমাত্র সঙ্গী। ভাষা সৈনিক হিসেবে কয়েক বছর আগে তাকে সম্মাননা জানায় মৌলভীবাজারের একটি সংগঠন। জীবনের শেষ সময়ে এসেও এখনো জুটেনি রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি। ভাষা সৈনিক বদরুজ্জামানের বড় ছেলে হাজী নোমান আহমদ জানিয়েছেন, বাবা ভাষা সৈনিক, এটা তাদের গর্বের বিষয়। বাবার শেষ ইচ্ছা ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া। মৌলভীবাজারের মেধাবী মুখ বদরুজ্জামান ১৯২২ সালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পঞ্চভাষা মৌলভী ইলিয়াছ হোসাইন ও নুরজাহান বিবির একমাত্র সন্তান। ১৯৪৯ সালে মেট্রিকোলেশন (এসএসসি) পরীক্ষায় প্রথম উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের জন্য লেখা পড়ার কিছুটা ক্ষতি হয়, এরপরও জনাব জামান এইচএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৩ সালে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে চাকুরী গ্রহণ করেন। চাকুরীর সুবাধে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যাওয়া ও দেখার সুযোগ হয়। ১৯৮৬ সালে জেলা কৃষি কর্মকর্তার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনে যখন ঢাকার রাজপথ উত্তপ্ত তখন তিনি জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। মিছিলে মিছিলে শ্লোগানে তারও কণ্ঠে ধ্বনি প্রতিধ্বনি হতো রাষ্ট ভাষা বাংলা চাই। তখন তিনি নিয়মিত মিছিল, মিটিং এ অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা কার্জন হল থেকে শুরু হওয়া মিছিলে পুলিশ যখন বৃষ্টির মতো গুলী চালাতে ছিল তখন তিনি ছিলেন মিছিলের অগ্রভাগে। পুলিশের গুলীতে ভাষা শহীদরা গুলীবিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়ার সে মিছিলেও তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। তার চোখের সামনেই গুলীবিদ্ধ হন সহপাঠীরা। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে যান। পরদিন ২২শে ফেব্রুয়ারি মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় গায়েবানা জানাযায় তিনি অংশগ্রহণ করেন। বয়সের ভারে নুয্য বদরুজ্জামান সে সময়ের সহগামী, সতীর্থদের নাম স্মরণে আনতে না পারলেও স্মৃতিপটে ভাসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির সেই দিনটির কথা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর তিনি নিজেকে দীর্ঘ ৬০ বছর লুকিয়ে রেখেছিলেন। কখনই বলেননি তিনি একজন ভাষাসৈনিক। ২০১৩ সালে প্রথম জাতীয় পত্রিকাসহ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয় ভাষা সৈনিক শেখ বদরুজ্জামানের নাম। এরপর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় তাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করে। দাবি ওঠে তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে এসে এখনো জুটেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এলাকায় ফিরে আন্দোলনের সহযোদ্ধা শাহ এসএএম কিবরিয়ার ভাতিজিকে উঁনার হাতে তোলে দেন। শাহ নূরুন নাহারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ভাষা সৈনিক বড় ছেলে হাজী নোমান আহমদ আবেগজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার বাবা বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে। তিনি একজন ভাষা সৈনিক। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর মূল্যয়ন করবে। ভাষা সৈনিক হিসেবে তার বাবার নাম সংযোজিত হবে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সমৃদ্ধি হবে।

পোস্ট শেয়ার করুন

জীবনের শেষ সময়ে ভাষা সৈনিক শেখ বদরুজ্জামান চান রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

আপডেটের সময় : ০২:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

ছয়ফুল আলম সাইফুল, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ  নিভৃতচারী এক ভাষাসৈনিক শেখ বদরুজ্জামান এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বয়সের ভারে ন্যজ্যু হয়ে পড়ে চলাচলের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। জীবনের শেষ সময়টা এখন তার কাটছে বদ্ধ ঘরে। বিছানায় শুয়ে শুয়েই কেটে যায় দিন রাতের পুরো সময়। প্রাণচ্ছল ভঙ্গিতে নাতি-নাতিদের সাথে তিনি আর সময় কাটাতে পাড়েন না। বিছানাই যেন তার একমাত্র সঙ্গী। ভাষা সৈনিক হিসেবে কয়েক বছর আগে তাকে সম্মাননা জানায় মৌলভীবাজারের একটি সংগঠন। জীবনের শেষ সময়ে এসেও এখনো জুটেনি রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি। ভাষা সৈনিক বদরুজ্জামানের বড় ছেলে হাজী নোমান আহমদ জানিয়েছেন, বাবা ভাষা সৈনিক, এটা তাদের গর্বের বিষয়। বাবার শেষ ইচ্ছা ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া। মৌলভীবাজারের মেধাবী মুখ বদরুজ্জামান ১৯২২ সালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পঞ্চভাষা মৌলভী ইলিয়াছ হোসাইন ও নুরজাহান বিবির একমাত্র সন্তান। ১৯৪৯ সালে মেট্রিকোলেশন (এসএসসি) পরীক্ষায় প্রথম উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের জন্য লেখা পড়ার কিছুটা ক্ষতি হয়, এরপরও জনাব জামান এইচএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৩ সালে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে চাকুরী গ্রহণ করেন। চাকুরীর সুবাধে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যাওয়া ও দেখার সুযোগ হয়। ১৯৮৬ সালে জেলা কৃষি কর্মকর্তার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনে যখন ঢাকার রাজপথ উত্তপ্ত তখন তিনি জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। মিছিলে মিছিলে শ্লোগানে তারও কণ্ঠে ধ্বনি প্রতিধ্বনি হতো রাষ্ট ভাষা বাংলা চাই। তখন তিনি নিয়মিত মিছিল, মিটিং এ অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা কার্জন হল থেকে শুরু হওয়া মিছিলে পুলিশ যখন বৃষ্টির মতো গুলী চালাতে ছিল তখন তিনি ছিলেন মিছিলের অগ্রভাগে। পুলিশের গুলীতে ভাষা শহীদরা গুলীবিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়ার সে মিছিলেও তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। তার চোখের সামনেই গুলীবিদ্ধ হন সহপাঠীরা। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে যান। পরদিন ২২শে ফেব্রুয়ারি মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় গায়েবানা জানাযায় তিনি অংশগ্রহণ করেন। বয়সের ভারে নুয্য বদরুজ্জামান সে সময়ের সহগামী, সতীর্থদের নাম স্মরণে আনতে না পারলেও স্মৃতিপটে ভাসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির সেই দিনটির কথা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর তিনি নিজেকে দীর্ঘ ৬০ বছর লুকিয়ে রেখেছিলেন। কখনই বলেননি তিনি একজন ভাষাসৈনিক। ২০১৩ সালে প্রথম জাতীয় পত্রিকাসহ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয় ভাষা সৈনিক শেখ বদরুজ্জামানের নাম। এরপর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় তাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করে। দাবি ওঠে তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে এসে এখনো জুটেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এলাকায় ফিরে আন্দোলনের সহযোদ্ধা শাহ এসএএম কিবরিয়ার ভাতিজিকে উঁনার হাতে তোলে দেন। শাহ নূরুন নাহারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ভাষা সৈনিক বড় ছেলে হাজী নোমান আহমদ আবেগজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার বাবা বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে। তিনি একজন ভাষা সৈনিক। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর মূল্যয়ন করবে। ভাষা সৈনিক হিসেবে তার বাবার নাম সংযোজিত হবে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সমৃদ্ধি হবে।