গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুস সাকিব জানান, এই দাবি পূরণে স্থানীয় প্রশাসন একা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ইসিএ ব্যবস্থাপনা কার্যকর আছে। জাফলং ইসিএ ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে, এ কমিটির সর্বশেষ সভার সিদ্ধান্ত হিসেবে বালু-পাথর তোলা বন্ধ আছে।#
জাফলংয়ে বালু-পাথর তোলার দাবি মানববন্ধন
- আপডেটের সময় : ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
- / ৫৩০ টাইম ভিউ
পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষিত সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলং সেতুর নিচ থেকে বালু তুলতে মানববন্ধন হয়েছে। বালু ও পাথর উত্তোলনে নিয়োজিত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের একটি অংশ সেই জাফলং সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে এই মানববন্ধন করে।
সম্প্রতি জাফলং সেতুর নিচ দিয়ে অবৈধভাবে বালু-পাথর তোলা হচ্ছিল। ইসিএর নির্দেশনা অনুযায়ী সংকটাপন্ন স্থানে কোনো বালু বা পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হলে প্রশাসন ইসিএর বৈঠক করে অবৈধ এই তৎপরতা বন্ধ করে।
প্রায় এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলার দাবিতে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত মানববন্ধনটি ‘জাফলংবাসী’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয়। এতে একাত্ম হন গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি সামসুল আলম।
এর আগে ৭ জুলাই জাফলং সেতু রক্ষায় মানববন্ধন করে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রাণের দাবি, পাথর কোয়ারি খোলা চাই। ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে চাই। কাজ চাই, ভাত চাই, জাফলং পাথর কোয়ারি সচল চাই।’ এ রকম স্লোগানের প্লাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মিনহাজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাবেক সভাপতি শাহজাহান সিরাজের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সিলেট জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন, তামাবিল চুনাপাথর, পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন, জাফলং ইউনিয়ন আ.লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল ইসলাম, জাফলং যুবলীগের আহ্বায়ক আফাজ উদ্দিন সরকার, জাফলং বল্লাঘাট পাথর উত্তোলন ও সরবরাহকারী শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান, জাফলং ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বিল্লাল হোসেন, জাফলং বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহিন আহমদ, মুখতলা বালু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রউফ, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, বাউরভাগ হাওর-বাংলা বাজার ইঞ্জিন নৌকাচালক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘদিন থেকে জাফলংয়ের শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। এখন আবার ধাপে ধাপে বন্যা। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। তাই এই এলাকার শ্রমিকেরা যাতে দুই বেলা দুমুঠো খেয়ে-পরে বাঁচতে পারেন, সেদিক বিবেচনা করে বালু-পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়ার জোর দাবি তাদের।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পিয়াইন ও ডাউকীর মিলনমোহনায় জাফলংয়ের অবস্থান। পাহাড়-নদীর একটি প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে জাফলংয়ের মূল পরিচিতি। জাফলংয়ে ৩৯১ দশমিক ৯৮ একর জায়গায় পাথর কোয়ারি থাকায় যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি করে বালু-পাথর উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো এলাকা। ২০১৫ সালে জাফলংকে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে পাথর ও বালু আহরণে ইজারা ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়।
জাফলংকে ‘প্রকৃতিকন্যা সিলেট’ পর্যটন–ব্রান্ডিং করার উদ্যোগে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে জাফলং সেতু নির্মাণ হয়। ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল জাফলং সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এই সেতু হওয়ায় জাফলং থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে যাতায়াতে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যায়। জাফলং থেকে যাতায়াত শুরু হয় পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দি, পান্তুমাই ও রাতারগুল এলাকায়। সড়ক যোগাযোগের সুবিধার কারণে এবারের বর্ষায় জাফলং সেতুর নিচে ডাউকী নদীর মোহনা থেকে অবধৈভাবে বালু ও পাথর তোলা শুরু হয়েছিল।