রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে বড় আসর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় প্রযুক্তিপ্রেমী শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার দর্শনার্থীদের ভিড়ে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড প্রাঙ্গণ রূপ নেয় মিলনমেলায়।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রদর্শনীতে বাড়তে থাকে ভিড়। তারা দলবেঁধে প্রবেশ করেন। আগতদের প্রত্যেকেই ব্যস্ত ছিলেন এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে দেখতে।
প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া সরকারি মন্ত্রণালয়গুলো তথ্য প্রযুক্তিতে ব্যবহার করে জনগণের কী কী সেবা দিচ্ছে তা জেনেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবন ও সেবা সম্পর্কে ধারণা নিতে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ভিড় করছেন প্রযুক্তপ্রেমীরা।
আগতদের মধ্যে অনেকেই অংশ নিয়েছেন প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনারে।এসব সেমিনারে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সেবা সম্পর্কে আলোচনা করেন দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞরা।
বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের একদল তরুণ শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন তথ্যপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় এই উৎসবে। তাদের মধ্যে একজন মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে যারা আগ্রহী, তাদের এই প্রদর্শনীতে আসা উচিত। এখানে আসলে জানা যাবে, প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ কতটা এগিয়ে যাচ্ছে।
মনিরুল আরও বলেন, প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল ঘুরে দেখবো। এছাড়াও আউটসোর্সিং অব ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সার্ভিস’ নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে অংশগ্রহণ করবো।
বিআইসিসি’র আঙ্গিনায় দর্শনার্থীদের জন্য বড় এক ডিসপ্লেতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার হচ্ছে। এখানে মেলার লাইভ ভিডিও দেখার সুযোগ আছে।
এখানে এলে সরকারি মন্ত্রণালয়গুলো তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের কি কি সেবা দিচ্ছে তা জানতে পারবেন অনায়াসেই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ পুলিশের স্টল। যেখানে সকল অপরাধের তথ্য পুলিশকে জানাতে কী ধরনের প্রযুক্তির ব্যবস্থা আছে তা জানা যাবে। পুলিশের সেবায় জরুরি সাহায্যে ৯৯৯ কীভাবে কল করবেন। কীভাবে তথ্য যথাযথ গোপনীয়তা বজায় রাখা হয় জানতে হলে আসতেই হবে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে।
তৃতীয় দিনের আয়োজনে আজ শুক্রবার আয়োজন করা হয় ১২টি সেমিনার ও কর্মশালা। এগুলো হলো, চিল্ড্রেন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড, আউটসোর্সিং অব ফিন্যান্সিয়াল অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সার্ভিস, ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান, সাইবার সিকিউরিটি ফর পাবলিক সার্ভিস, ডিজরাপটিভ টেকনোলজি ভিসি, এস আর ইনিভেস্টিং ইন, ডেভলপারস কনফারেন্স, ৫ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট, কমবেটিং সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড প্রোপাগান্ডা, সিকিউরিটি-ইনফরমেশন সিকিউরিটি কনফারেন্স, ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন অ্যান্ড অপরচুনিটি অব ইন্টারনেট অব থিংস, ওয়ার্কশপ অন ব্লকচেইন ডিজিটাল আইডেন্টিটি, ডিজিটাল লিটারিসি অ্যান্ড ইন্টারনেট সেভ গার্ড, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (আইপিআর) ডিজিটাল বাংলাদেশ।
চিল্ড্রেন’স ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের তৃতীয় দিনে অনুষ্ঠিত চিলড্রেন’স ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড শীর্ষক সেমিনারে অংশ নেন লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শিশুদের সময় নষ্ট করছে। এ মাধ্যম শিক্ষার্থীদের সময় আটকে রাখছে। এসময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে কিন্তু টেকনোলজিকে আমাদের ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না।
জাফর ইকবাল বলেন, বাবা-মাকে খুশি রেখে বই পড়তে হবে। লুকিয়ে হলেও বই পড়তে হবে। মা-বাবা যদি বই পড়তে না দেন তাহলে রাতে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে বা বাথরুমে গিয়ে হলেও বই পড়তে হবে। পাশাপাশি কোডিংয়ের কাজ করা যেতে পারে। বাবা-মা চান ভালো রেজাল্ট করুক । এইটা কোনো ব্যাপার না। একটু ভালো করে পড়লেই ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব। বড় সকলকে বই পড়ার প্রতি গুরত্বারোপ করে তিনি বলেন, লুকিয়ে হলেও সকলকে বই পড়তে হবে আমাদেরকে।
ই–গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান
প্রাথমিক ভাবে ১০ টি পৌরসভাকে ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচন, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলা প্রাঙ্গণ, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের উইন্ডি টাউন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত অন সিওং ডু এবং সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার সরকার।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন ‘জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট সার্ভে ২০১৬ এ প্রকাশিত হয়েছে যে, ইউকে নং ১ এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্র ৩ নম্বর। রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৩ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৪ তম স্থানে অবস্থান করছে। যদিও মনে হয় বাংলাদেশের খুব ভাল অবস্থানে নেই তবে আমি মনে করি আমরা এই সেক্টরে উন্নীত করছি।
সাইবার সিকিউরিটি ফর পাবলিক সার্ভিস
বর্তমান সময়ে সাইবার ঝুঁকির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ভিত্তিক আইটি প্রতিষ্ঠান ‘হোস্টন’ এর সিনিয়র আইটি এক্সিকিউটিভ আজাদুল হক বলেন, অতি সম্প্রতি আমরা উবারে হ্যাকারদের হামলা দেখেছি। উবার হ্যাকারদের এক লাখ মার্কিন ডলার দেয় শুধু এই কারণে যে তাদের হ্যাকিংয়ের ঘটনা যেন গণমাধ্যমে না আসে। এছাড়াও ইয়াহুর দুই লাখ একাউন্ট হ্যাক হয় সম্প্রতি। আসলে কারা হ্যাকিংয়ের শিকার হয়নি। অনেক বড় সাইবার জায়ান্টই হ্যাকিংয়ের কবলে পরেন।
‘ফায়ার আই সাইবার থ্রেট ম্যাপ’ এর মাধ্যমে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও টেক জায়ান্টগুলো হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে-তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহু দুই বিলিয়ন খরচ করেছে অন্যদিকে উবার তাদের সাইট হ্যাক হওয়া ঠেকাতে এক লাখ ডলার ব্যয় করেছে। আমরা সাধারণত যে ফিশিং, ম্যালওয়ারগুলো দেখতে পাই, তা মাত্র তিন শতাংশ। বাকি ৯৭ শতাংশ হল ডার্কওয়েভ। এই ডার্কওয়েভ নিয়ে যত কাজ।
deshdiganto.com © 2019 কপিরাইট এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত
design and development by : http://webnewsdesign.com