কুলাউড়ার তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয় এক যুগ পর ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন করার নির্দেশ ইউএনও’র
- আপডেটের সময় : ০২:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২০
- / ৪২৪ টাইম ভিউ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড, অনিয়ম দুর্নীতি, শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আলোচিত কুলাউড়া উপজেলার তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ ও শিক্ষার মান উন্নয়ন ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী।
ইউএনও ও বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী এলাকার অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে গত ২১ অক্টোবর সোমবার এক জরুরি সভায় এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১২ বছর পর বিদ্যালয়ের নির্বাচন নিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে ওই এলাকায়।
তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নোমান আহমেদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গত ৪ মাস ধরে স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে বিগত ১২ বছর ধরে এ বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের ভোটে নির্বাচিত কোনো পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তাই কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রধান শিক্ষক স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সহায়তা নিয়েও নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। থানায় দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আবার নিম্ন আদালত থেকে জামিন লাভ করে প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ এতসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন অনেক ছাত্রীও।
সামাজিক নিরাপত্তার কারণে ভয়ে ও লজ্জায় কোনো ছাত্রী অভিযোগও করেনি। ফলে গত কয়েক বছরে এ এলাকার অনেক ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয় ত্যাগ করে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। তাছাড়া অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ একাধারে তেলিবিল উচ্চবিদ্যালয়ের এমপিওভুক্তির সরকারি বেতন ভাতা গ্রহণ করছেন আবার সরকারি ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার হিসেবেও সরকারি অর্থ গ্রহণ করছেন। তার বাড়িতে রয়েছে সাব পোস্ট অফিস।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি নিয়মে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের এক অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্যের মেয়ের। শিক্ষিকা ১৪ ফেব্রুয়ারি তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছিলেন। এপ্রিল মাসে তিনি এমপিওভুক্ত হয়েছিলেন। গত ৬ জুলাই বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা করেছিলেন শিক্ষিকা।
একই সঙ্গে কুলাউড়া উপজেলা ও মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তিনি। ফলে প্রধান শিক্ষকের অনুসারীদের হুমকি ধামকিতে ভীত হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় এই শিক্ষিকা গত তিন মাস ধরে তেলিবিল উচ্চবিদ্যালয়ে আসতে পারছেন না। এই সুযোগে প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ নিজ এলাকার আতিক হাসান নামে একজনকে এই শিক্ষিকার স্থলে খন্ডকালীন নিয়োগ দিয়েছিলেন। তবে এজন্য এডহক কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কোনো অনুমতি নেননি প্রধান শিক্ষক।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ জানান, তাঁর ওপর আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। এডহক কমিটির সভায় দ্রুত পরিচালনা কমিটির নির্বাচন করার জন্য ইউএনও মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন। সেই লক্ষে ভোটার তালিকার খসড়া তৈরির কাজ শুরু করেছি।
বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকার কাজ শুরু করতে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।
অভিযোগকারী শিক্ষিকার বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ায় পূর্ণ নিরাপত্তা দানেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও তদন্ত কার্যক্রম যেভাবে চলছে তা অব্যাহত থাকবে।