ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদে পর্তুগালে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা প্রিয়জনদের মানসিক রোগ যদি আপনজন বুঝতে না পারেন আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছে পর্তুগাল আওয়ামীলীগ যেকোনো প্রচেষ্টা এককভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়: দুদক সচিব শ্রীমঙ্গলে দুটি চোরাই মোটরসাইকেল সহ মিল্টন কুমার আটক পর্তুগালের অভিবাসন আইনে ব্যাপক পরিবর্তন পর্তুগাল বিএনপি আহবায়ক কমিটির জুমে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয় এমপি আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার ঘটনায় আটক তিনজন , এতে বাংলাদেশী মানুষ জড়িত:স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ ইরান দুতাবাসে রাইসির শোক বইয়ে মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর

কুরবানির জন্তু; শরয়ী বিধি-বিধান | দেশদিগন্ত

মাহদী হাসান
  • আপডেটের সময় : ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩
  • / ২৯৪ টাইম ভিউ

পবিত্র ঈদুল আযহায় কুরবানি দেওয়া প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। কুরবানি যেহেতু মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুটি অর্জনের লক্ষ্যে দেবেন, সে কারণে ইসলামি শরীয়া’হর আলােকে কুরবানি-সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল জেনে আমাদের প্রত্যেকের জন্য কুরবানি দেওয়া আবশ্যক। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকেই ইসলামি বিধি-বিধান না জানার কারণে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের এই পবিত্র কুরবানি সঠিক হচ্ছে না। কুরবানি-দাতার জন্য আবশ্যক হলো কুরবানি সম্পর্কিত ইসলামি বিধানাবলি ভালোভাবে জেনে নেওয়া, যাতে আমাদের ত্যাগ ও কুরবানি একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলার জন্যই সমর্পিত হয়।

কুরবানির জন্তু কেমন হবে:

বকরি, খাসি, দুম্বা, ভেঁড়া, ষাঁড়, বলদ, মহিষ, উট, উটনী প্রভৃতি কুরবানির জন্য নির্ধারিত জন্তু। উল্লেখিত জন্তু ছাড়া অন্যান্য পশু দ্বারা কুরবানি দেওয়া শরিয়তসিদ্ধ নয়।
উদাহরণত হরিণ, নীলগাই, জংলি গরু, হাঁস, মোরগ,পাতিহাঁস, রাজহাঁস প্রভৃতি কুরবানির জন্তু নয়। কুরবানির দিন এইরূপ প্রাণী জবাই করে কেউ যদি বলে, ‘আমি হাঁস দিয়ে কুরবানি দিয়েছি’ বা এরকম কিছু, তাহলে তা ইসলামি শরীয়া’হর সাথে চরম ঠাট্টার ও বেয়াদবির সমতূল্য। [আল-হেদায়া, পৃ.৪৪৭, খণ্ড ০৪, মা. আশরাফিয়া।
হিন্দিয়া, পৃ. ৩৪৩ খণ্ড ৫, মাক. আশরাফিয়া]

কোন জন্তুতে কয়টি কুরবানি দেওয়া যাবে:

বকরি, দুম্বা, ভেঁড়া, খাসি নর বা মাদি কেবলমাত্র একজনই এক নামে কুরবানি দিতে পারবে। গাভী, ষাঁড়, বলদ, মহিষ, উট বা উটনীর ক্ষেত্রে এক থেকে সাতজন লোক মিলে শরীক হয়ে কুরবানি দেওয়া যাবে।[আল-হেদায়া,পৃ. ৪৪৭, খণ্ড ০৪, মাক,আশরাফিয়া। ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া, পৃ. ৩৮৬, মা. ইত্তেহাদ]

কুরবানির জন্তুর বয়স কেমন হওয়া উচিত:

ছাগল, দুম্বা, ভেড়া নর বা মাদি কুরবানির ক্ষেত্রে একবছর পূর্ণ হওয়া শর্ত। ছাগলের ক্ষেত্রে এক বছরের একদিন কম হলেও কুরবানি দেওয়া বৈধ হবে না। কিন্ত ৬ মাসের দুম্বা, ভেড়া যদি এতটুকু তর-তাজা হয়, দেখতে এক বছর বয়সী লাগে, তাহলে এরূপ দুম্বা, ভেড়া দিয়ে কুরবানি করা যেতে পারে। এতদ্ভিন্ন জায়েয হবে না।

হাদীস শরীফে ‘মুসিন্নাহ’ কুরবানির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফুকাহায়ে কেরাম বলেন: ‘মুসিন্নাহ’ শব্দ দ্বারা এক বছরের বকরি কুরবানি করা উদ্দেশ্য। সুতরাং বকরির ক্ষেত্রে বছর পূর্ণ করা জরুরী।
[মিশকাত পৃ. ১২৭, মা. ইস,। কিতাবুন নাওয়াযিল পৃ. ৬৫৩, খণ্ড ১৪, মা. যাকারিয়া]

গরু, মহিষ, বলদ নর বা মাদি দু’বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত। উট বা উটনীর কুরবানির ক্ষেত্রে পাঁচবছর পূর্ণ হওয়া শর্ত। এ সময়সীমা থেকে ন্যূনতম কম হলে কুরবানি শুদ্ধ হবে না। [ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া, পৃ. ৩৮৫, মা. ইত্তেহাদ]

যে জন্তুটি কুরবানির বয়সে পৌঁছেছে, কিন্তু এখনও দাঁত উঠে নি, কিন্তু ঘাস-খাদ্য গ্রহণ করতে পারে, এমতাবস্থায় কুরবানি শুদ্ধ হবে। আর যদি স্বাভাবিক খাবার গ্রহণে অক্ষম হয়, তাহলে এগুলো দ্বারা কুরবানি বৈধ হবে না। [কিতাবুন নাওয়াযিল,পৃ. ৬৫২, খণ্ড ১৪, মা. যাকারিয়া]

আর গৃহপালিত পশুপালক বা পশু বিক্রেতা যদি জন্তুর বয়সের কথা বলে আর ক্রেতার নিকট তা সত্য বলে বিবেচিত হয়, তাহলে তাদের কথার উপর নির্ভর করা জায়িয। জন্ম-ইতিহাস তালাশের প্রয়ােজন নেই।
[কিতাবুন নাওয়াযিল, পৃ. ৬৪৫, খণ্ড ১৪, মা. ইসলামিয়া]

কুরবানির অযোগ্য জন্তুসমূহ:

কুরবানির পশু মোটাতাজা এবং সর্বপ্রকার দোষত্রুটি-মুক্ত হওয়া উত্তম। যে জন্তু এত দূর্বল যে, কুরবানির স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে না, তার দ্বারা কুরবানি দেওয়া নাজায়িয।
[ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, পৃ. ৩৯৭, খণ্ড ০৫,
মা. ইস,]

খোড়া বা লেংড়া জন্তু যদি কেবল তিন পা দ্বারা চলে, চতুর্থ পা মাটিতেই রাখতে পারে না অথবা পা মাটিতে রাখতে পারে তবে সে পা দ্বারা কুরবানির স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে সক্ষম নয়, তাহলে সেই জন্তু দ্বারা কুরবানি করা সহিহ হবে না।
[সুনানু আবি দাউদ, পৃ. ৩৮৭, মাক, ইস,।
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ,পৃ. ৩৪৪, খণ্ড ০৫, মা.আশরাফিয়া]

জন্তু যদি এত জীর্ণশির্ণ হয় যে হাড়ে মোটেই মগজ নেই, তাহলে সে জন্তু দ্বারা কুরবানি করা নাজায়েয। তবে যদি অধিক জীর্ণ-শীর্ণ না হয়, বরং স্বাভাবিক একটু পাতলা হয়, তাহলে তা দিয়ে কুরবানি বৈধ হবে। তবে হৃষ্টপুষ্ট জন্তু দিয়ে কুরবানি করা সর্বক্ষেত্রে উত্তম। [বেহেশতি জেওর, পৃ.৪০, খণ্ড ০৩, মাক, এদারায়ে থানভি]

যে জন্তুর জন্মসূত্রে কোন কান নেই , তা দ্বারা কুরবানি করা জায়িয নয়, কিন্তু যদি জন্মসূত্রে কান একেবারে ছোট হয়, তাহলে তা দ্বারা কুরবানি জায়েয। কিন্তু যদি কানের এক তৃতীয়াংশ বা তারচে’ বেশি কর্তিত হয়, তাহলে তা দ্বারা কুরবানি করা নাজায়েয। [আল-হেদায়া,পৃ. ৪৪৭, খণ্ড ০৪ মা. ইসলামিয়া।
হিন্দিয়া,পৃ.৩৪৪ খণ্ড.৫ মাক,আশরাফিয়া]

যে পশুর জন্মসূত্রে শিং নেই, কিংবা শিং ছিলো কিন্তু পরবর্তিতে তা ভেঙ্গে গেছে, তা দ্বারা কুরবানি জায়েয। কিন্তু শিং যদি একেবারে মূল থেকে ভেঙ্গে যায়, তাহলে তা দ্বারা কুরবানি নাজায়েয। [আল-হেদায়া, পৃ. ৪৪৭, খণ্ড ০৪, মা. ইস,]

যে জন্তুর মোটেই দাঁত নেই, তা দ্বারা কুরবানি সহি হবে না। কিন্তু দাঁত যদি ভেঙ্গে যায়, আর যতটুকু ভেঙ্গে গেছে তারচে’ বেশি অবশিষ্ট থাকে, এবং খাদ্য গ্রহণ করতে পারে,তাহলে তা দ্বারা কুরবানি করা জায়েয। [আল-হেদায়া, পৃ. ৪৪৭, খণ্ড ০৪, মাক,আশরাফিয়া।
হিন্দিয়া,পৃ.৩৪৪ মাক,আশরাফিয়া]

যে জন্তু পুরো অন্ধ, বা একটি চোখের তিন ভাগের একভাগ বা তারচেয়েও বেশি চলে গেছে, তা দ্বারা কুরবানি করা নাজায়েয। [সুনানু আবি দাউদ, পৃ.৩৮৭, মা. ইসলামিয়া। বেহেশতি জেওর, পৃ. ৪০, মা. এদারায়ে থানভি]

কুরবানির জন্তু খরিদ করার পর যদি এমন দোষ পাওয়া যায়, যা দ্বারা কুরবানি শুদ্ধ হয় না তাহলে ধনি ব্যক্তি হলে এর স্থলে অন্য একটি জন্তু খরিদ করে কুরবানি করবে, আর দরিদ্র হলে তা দিয়েই কুরবানি করবে। [বেহেশতি জেওর, পৃ. ৪০, খণ্ড ৪, মা. ইসলামিয়া।

যে জন্তুর কোন অংগের এক তৃতীয়াংশ বা তার’চে বেশি নষ্ট হয়ে গেছে, সে জন্তু দ্বারা কুরবানি করা নাজায়েয। [আল-হেদায়া, পৃ. ৪৪৭, খণ্ড ৪, মা. আশরাফিয়া।

লেখক: মুফতি আহমদ রাফি জাকির 
মুফতি ও মুহাদ্দিস,
জামেয়া আবুহুরায়রা রা. আল-ইসলামিয়া এয়ারপোর্ট,সিলেট।

পোস্ট শেয়ার করুন

কুরবানির জন্তু; শরয়ী বিধি-বিধান | দেশদিগন্ত

আপডেটের সময় : ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩

পবিত্র ঈদুল আযহায় কুরবানি দেওয়া প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। কুরবানি যেহেতু মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুটি অর্জনের লক্ষ্যে দেবেন, সে কারণে ইসলামি শরীয়া’হর আলােকে কুরবানি-সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল জেনে আমাদের প্রত্যেকের জন্য কুরবানি দেওয়া আবশ্যক। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকেই ইসলামি বিধি-বিধান না জানার কারণে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের এই পবিত্র কুরবানি সঠিক হচ্ছে না। কুরবানি-দাতার জন্য আবশ্যক হলো কুরবানি সম্পর্কিত ইসলামি বিধানাবলি ভালোভাবে জেনে নেওয়া, যাতে আমাদের ত্যাগ ও কুরবানি একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলার জন্যই সমর্পিত হয়।

কুরবানির জন্তু কেমন হবে:

বকরি, খাসি, দুম্বা, ভেঁড়া, ষাঁড়, বলদ, মহিষ, উট, উটনী প্রভৃতি কুরবানির জন্য নির্ধারিত জন্তু। উল্লেখিত জন্তু ছাড়া অন্যান্য পশু দ্বারা কুরবানি দেওয়া শরিয়তসিদ্ধ নয়।
উদাহরণত হরিণ, নীলগাই, জংলি গরু, হাঁস, মোরগ,পাতিহাঁস, রাজহাঁস প্রভৃতি কুরবানির জন্তু নয়। কুরবানির দিন এইরূপ প্রাণী জবাই করে কেউ যদি বলে, ‘আমি হাঁস দিয়ে কুরবানি দিয়েছি’ বা এরকম কিছু, তাহলে তা ইসলামি শরীয়া’হর সাথে চরম ঠাট্টার ও বেয়াদবির সমতূল্য। [আল-হেদায়া, পৃ.৪৪৭, খণ্ড ০৪, মা. আশরাফিয়া।
হিন্দিয়া, পৃ. ৩৪৩ খণ্ড ৫, মাক. আশরাফিয়া]

কোন জন্তুতে কয়টি কুরবানি দেওয়া যাবে:

বকরি, দুম্বা, ভেঁড়া, খাসি নর বা মাদি কেবলমাত্র একজনই এক নামে কুরবানি দিতে পারবে। গাভী, ষাঁড়, বলদ, মহিষ, উট বা উটনীর ক্ষেত্রে এক থেকে সাতজন লোক মিলে শরীক হয়ে কুরবানি দেওয়া যাবে।[আল-হেদায়া,পৃ. ৪৪৭, খণ্ড ০৪, মাক,আশরাফিয়া। ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া, পৃ. ৩৮৬, মা. ইত্তেহাদ]

কুরবানির জন্তুর বয়স কেমন হওয়া উচিত:

ছাগল, দুম্বা, ভেড়া নর বা মাদি কুরবানির ক্ষেত্রে একবছর পূর্ণ হওয়া শর্ত। ছাগলের ক্ষেত্রে এক বছরের একদিন কম হলেও কুরবানি দেওয়া বৈধ হবে না। কিন্ত ৬ মাসের দুম্বা, ভেড়া যদি এতটুকু তর-তাজা হয়, দেখতে এক বছর বয়সী লাগে, তাহলে এরূপ দুম্বা, ভেড়া দিয়ে কুরবানি করা যেতে পারে। এতদ্ভিন্ন জায়েয হবে না।

হাদীস শরীফে ‘মুসিন্নাহ’ কুরবানির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফুকাহায়ে কেরাম বলেন: ‘মুসিন্নাহ’ শব্দ দ্বারা এক বছরের বকরি কুরবানি করা উদ্দেশ্য। সুতরাং বকরির ক্ষেত্রে বছর পূর্ণ করা জরুরী।
[মিশকাত পৃ. ১২৭, মা. ইস,। কিতাবুন নাওয়াযিল পৃ. ৬৫৩, খণ্ড ১৪, মা. যাকারিয়া]

গরু, মহিষ, বলদ নর বা মাদি দু’বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত। উট বা উটনীর কুরবানির ক্ষেত্রে পাঁচবছর পূর্ণ হওয়া শর্ত। এ সময়সীমা থেকে ন্যূনতম কম হলে কুরবানি শুদ্ধ হবে না। [ফাতাওয়ায়ে সিরাজিয়া, পৃ. ৩৮৫, মা. ইত্তেহাদ]

যে জন্তুটি কুরবানির বয়সে পৌঁছেছে, কিন্তু এখনও দাঁত উঠে নি, কিন্তু ঘাস-খাদ্য গ্রহণ করতে পারে, এমতাবস্থায় কুরবানি শুদ্ধ হবে। আর যদি স্বাভাবিক খাবার গ্রহণে অক্ষম হয়, তাহলে এগুলো দ্বারা কুরবানি বৈধ হবে না। [কিতাবুন নাওয়াযিল,পৃ. ৬৫২, খণ্ড ১৪, মা. যাকারিয়া]

আর গৃহপালিত পশুপালক বা পশু বিক্রেতা যদি জন্তুর বয়সের কথা বলে আর ক্রেতার নিকট তা সত্য বলে বিবেচিত হয়, তাহলে তাদের কথার উপর নির্ভর করা জায়িয। জন্ম-ইতিহাস তালাশের প্রয়ােজন নেই।
[কিতাবুন নাওয়াযিল, পৃ. ৬৪৫, খণ্ড ১৪, মা. ইসলামিয়া]

কুরবানির অযোগ্য জন্তুসমূহ:

কুরবানির পশু মোটাতাজা এবং সর্বপ্রকার দোষত্রুটি-মুক্ত হওয়া উত্তম। যে জন্তু এত দূর্বল যে, কুরবানির স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে না, তার দ্বারা কুরবানি দেওয়া নাজায়িয।
[ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, পৃ. ৩৯৭, খণ্ড ০৫,
মা. ইস,]

খোড়া বা লেংড়া জন্তু যদি কেবল তিন পা দ্বারা চলে, চতুর্থ পা মাটিতেই রাখতে পারে না অথবা পা মাটিতে রাখতে পারে তবে সে পা দ্বারা কুরবানির স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে সক্ষম নয়, তাহলে সেই জন্তু দ্বারা কুরবানি করা সহিহ হবে না।
[সুনানু আবি দাউদ, পৃ. ৩৮৭, মাক, ইস,।
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ,পৃ. ৩৪৪, খণ্ড ০৫, মা.আশরাফিয়া]

জন্তু যদি এত জীর্ণশির্ণ হয় যে হাড়ে মোটেই মগজ নেই, তাহলে সে জন্তু দ্বারা কুরবানি করা নাজায়েয। তবে যদি অধিক জীর্ণ-শীর্ণ না হয়, বরং স্বাভাবিক একটু পাতলা হয়, তাহলে তা দিয়ে কুরবানি বৈধ হবে। তবে হৃষ্টপুষ্ট জন্তু দিয়ে কুরবানি করা সর্বক্ষেত্রে উত্তম। [বেহেশতি জেওর, পৃ.৪০, খণ্ড ০৩, মাক, এদারায়ে থানভি]

যে জন্তুর জন্মসূত্রে কোন কান নেই , তা দ্বারা কুরবানি করা জায়িয নয়, কিন্তু যদি জন্মসূত্রে কান একেবারে ছোট হয়, তাহলে তা দ্বারা কুরবানি জায়েয। কিন্তু যদি কানের এক তৃতীয়াংশ বা তারচে’ বেশি কর্তিত হয়, তাহলে তা দ্বারা কুরবানি করা নাজায়েয। [আল-হেদায়া,পৃ. ৪৪৭, খণ্ড ০৪ মা. ইসলামিয়া।
হিন্দিয়া,পৃ.৩৪৪ খণ্ড.৫ মাক,আশরাফিয়া]

যে পশুর জন্মসূত্রে শিং নেই, কিংবা শিং ছিলো কিন্তু পরবর্তিতে তা ভেঙ্গে গেছে, তা দ্বারা কুরবানি জায়েয। কিন্তু শিং যদি একেবারে মূল থেকে ভেঙ্গে যায়, তাহলে তা দ্বারা কুরবানি নাজায়েয। [আল-হেদায়া, পৃ. ৪৪৭, খণ্ড ০৪, মা. ইস,]

যে জন্তুর মোটেই দাঁত নেই, তা দ্বারা কুরবানি সহি হবে না। কিন্তু দাঁত যদি ভেঙ্গে যায়, আর যতটুকু ভেঙ্গে গেছে তারচে’ বেশি অবশিষ্ট থাকে, এবং খাদ্য গ্রহণ করতে পারে,তাহলে তা দ্বারা কুরবানি করা জায়েয। [আল-হেদায়া, পৃ. ৪৪৭, খণ্ড ০৪, মাক,আশরাফিয়া।
হিন্দিয়া,পৃ.৩৪৪ মাক,আশরাফিয়া]

যে জন্তু পুরো অন্ধ, বা একটি চোখের তিন ভাগের একভাগ বা তারচেয়েও বেশি চলে গেছে, তা দ্বারা কুরবানি করা নাজায়েয। [সুনানু আবি দাউদ, পৃ.৩৮৭, মা. ইসলামিয়া। বেহেশতি জেওর, পৃ. ৪০, মা. এদারায়ে থানভি]

কুরবানির জন্তু খরিদ করার পর যদি এমন দোষ পাওয়া যায়, যা দ্বারা কুরবানি শুদ্ধ হয় না তাহলে ধনি ব্যক্তি হলে এর স্থলে অন্য একটি জন্তু খরিদ করে কুরবানি করবে, আর দরিদ্র হলে তা দিয়েই কুরবানি করবে। [বেহেশতি জেওর, পৃ. ৪০, খণ্ড ৪, মা. ইসলামিয়া।

যে জন্তুর কোন অংগের এক তৃতীয়াংশ বা তার’চে বেশি নষ্ট হয়ে গেছে, সে জন্তু দ্বারা কুরবানি করা নাজায়েয। [আল-হেদায়া, পৃ. ৪৪৭, খণ্ড ৪, মা. আশরাফিয়া।

লেখক: মুফতি আহমদ রাফি জাকির 
মুফতি ও মুহাদ্দিস,
জামেয়া আবুহুরায়রা রা. আল-ইসলামিয়া এয়ারপোর্ট,সিলেট।