কিছুই শেষ হয়নি, আবার উঠে দাঁড়াব: ফখরুল
- আপডেটের সময় : ০৯:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জানুয়ারী ২০১৯
- / ১০১০ টাইম ভিউ
দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্ক: নির্বাচনের রেশ কাটিয়ে নেতা-কর্মীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে লড়াইয়ে ডাকলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ভোটের পর ধর্ষিত নারীকে দেখতে শনিবার নোয়াখালীতে যাওয়ার পর সেখানে এক মতবিনিময় সভায় দলের নেতাকর্মীদের চাঙা করার প্রয়াস চালাতে দেখা যায় বিএনপি মহাসচিবকে।
পাঁচ বছর আগে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ভোট ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েও পারেনি বিএনপি। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এবার নির্বাচনেও এলেও ভরাডুবি হয়েছে তাদের; যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোট ডাকাতি করে তাদের হারানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপির সামর্থ্য নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রশ্ন তোলার মধ্যে নোয়াখালীর সভায় ফখরুল বলেন, “যে কথা আমরা বার বার বলেছি- জেগে উঠুন, আপনাদের অধিকার রক্ষা করুন। আমরা রক্ষা করতে পারিনি। কেন পারিনি আমরা? পারি নাই এজন্য যে আমরা সুশৃঙ্খল নই। আমরা মরার আগেই মরে যাচ্ছি? কেন মরে যাচ্ছি? কেন উঠে দাঁড়াচ্ছি না?”
“ক্ষোভ হয় না? রাগ হয় না? উত্তেজনা হয় না?” নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তাদের আশা দেখিয়ে তিনি বলেন, “একটা সুযোগ আমরা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আন্দোলন তৈরি করে তাদেরকে পরাজিত করতে।
“তাই বলে কি সব শেষ হয়ে গেছে? হয়নি। কিছুই শেষ হয়নি। আমরা আবার রুখে দাঁড়াব, আমরা আবার উঠে দাঁড়াব। শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে। আমার যে বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে, এর প্রতিশোধ নেব, আমার যে ভাইয়ের ঘর পোড়ানো হয়েছে, তার প্রতিশোধ আমরা নেব। শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে সকলে উঠে দাঁড়ান, বিজয় হবে।”
ভোটের দিন ধর্ষণের শিকার নারীকে নোয়াখালীর হাসপাতালে গিয়ে দেখে এবং এই ঘটনার বিচারে সোচ্চার থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মতবিনিময় সভায় যান ফখরুল। নোয়াখালী জেলা শহরে পৌঁছার পর সড়কে দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানান বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
ফখরুল বলেন, “আজকে এখানে তরুণদের মাঝে যে ক্ষোভ দেখলাম, যে উচ্ছ্বাস দেখলাম, এই ক্ষোভকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। এরা (সরকার) চোরাবালির উপর দাঁড়িয়ে আছে। এরা ইতোমধ্যে জনগণের শত্রু হয়ে গেছে।
“সুতরাং তাদেরকে পরাজিত করতে আপনাদের যা প্রয়োজন তা শুধু ঐক্য, ঐক্য, ঐক্য। জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা তাদেরকে পরাজিত করতে পারব।”
ভোটের দিনের ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “একাত্তর সালের ২৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের মানুষের ওপর হায়নারের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর এই বাংলাদেশে একটি সরকার তার সমস্ত প্রশাসনকে নিয়ে ওই বাংলাদেশের মানুষের উপর ঠিক একই কায়দায় হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং আমাদের যে অধিকার সেই অধিকার তারা কেড়ে নিলো। আমরা বাধা দিতে পারিনি।”
ভোটের পর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য উদ্ধৃত করে ফখরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার মিটিং বলেছেন যে, দানবীয় আচরণ করবেন না, দানবে পরিণত হবেন না। আপনি তো দানব হয়ে গেছেন। আমি বলি না, এস কে সিনহা সাহেব (সাবেক প্রধান বিচারপতি) বলেছেন, এটা দানব তৈরি হয়েছে। সেই দানব থেকে মুক্তি পেতে হবে, পাথর বুক থেকে সরাতে হবে।
“রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে একটি জায়গায় ঐক্যফ্রন্টে নিয়ে আসতে হবে, তবেই আমাদের জয় হবে।”
নোয়াখালীসহ সারাদেশে নির্বাচনী সহিংসতায় যারা আহত হয়েছেন, তাদেরকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সহানুভূতি জানান ফখরুল। ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি সহযোগিতা দিতে বিএনপির আইনজীবীদের নির্দেশনা দেন তিনি।
নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে জেলা জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে এই মতবিনিময় সভায় ঢাকা থেকে যাওয়া ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন, জেলা আইনজীবী সমিতির নেতা এ বি এম জাকারিয়া, আবদুর রহিম, আবুল কাশেমও বক্তব্য রাখেন।
বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, হারুনুর রশীদ, রেহানা আখতার রানু, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান খোকাও উপস্থিত ছিলেন।