ঐতিহ্যকে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান
- আপডেটের সময় : ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
- / ২১১৭ টাইম ভিউ
ঐতিহ্যকে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সিলেটবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ। গতকাল শনিবার সম্মেলনের শুরুর দিন দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের ইয়র্ক কলেজের মাঠে শনিবার নিউইয়র্কের জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে শুরু হয়েছে জালালাবাদ বিশ্ব সিলেট সম্মেলন। উদ্বোধনী দিনে সম্মেলনের প্রধান বক্তা ছিলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ছিলেন মানুষের মহাকাশ জয়ের প্রথম স্মারক চন্দ্রাভিযানের অন্যতম প্রকৌশলী রফিক উদ্দিন আহমেদ।
সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সিলেটবাসীদের সবার পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছিল ইয়র্ক কলেজ প্রাঙ্গণ। আজ রোববার আলোচনা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন।
সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনের প্রধান বক্তা স্যার ফজলে হাসান আবেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হলেও নানা ক্ষেত্রে সিলেট আজ পিছিয়ে আছে। সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে রয়েছে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা অঞ্চলবাসীর শিকড়ের বন্ধন। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আমাদের পূর্বসূরিরা মহামিলন আর মানবতার জয়গান গেয়েছেন। এ ঐতিহ্যকে ধারণ করেই সিলেটবাসীকে এগিয়ে যেতে হবে।’
সম্মেলনের মঞ্চে প্রথমবারের মতো উপস্থিত হন চন্দ্রাভিযানের অন্যতম প্রকৌশলী রফিক উদ্দিন আহমেদ। সিলেটের গংগা নগরে পাখী মিয়া নামে পরিচিত এ নিভৃতচারীকে গত জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো পাদপ্রদীপে নিয়ে আসে প্রথম আলো। সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানানো হয়। পরে অতিথিদের সামনে তিনি তুলে ধরেন তাঁর দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার কথা।
প্রথম চন্দ্রবিজয়ী নিল আর্মস্ট্রংকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, চাঁদে অবতরণ করে নিল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, ‘একজন মানুষের একটি পদক্ষেপ, মানবজাতির এক বিশাল অভিযাত্রা।’ রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি যে মডিউলে চন্দ্র অভিযাত্রীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছিলাম, সেই মডিউলের সাফল্য ছাড়া অভিযাত্রীদের পক্ষে চাঁদে অবতরণ সম্ভব ছিল না। মানবজাতির ইতিহাসেই এটি অনেক বড় সাফল্য ছিল। আগামী দিনেও মানুষ এ সাফল্যগাথা জয়গান করবে।
প্রথম দিনের উৎসব মঞ্চে ঢাকা, কলকাতা, আসামসহ ইউরোপ-আমেরিকার নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা সিলেটের বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য দেন। এর মধ্যে রয়েছেন সেক্টর কমান্ডার জেনারেল সি আর দত্ত, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, ঢাকা জালালাবাদ সমিতির সভাপতি সি এম তোফায়েল সামি, অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ খলিকুজ্জমান, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. আবদুল মোমেন, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, সাবেক উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী, বেসরকারি সংস্থা সীমান্তিকের প্রধান ড. আহমেদ আল কবীরসহ আরও অনেকে।
উদ্বোধনী দিনেই দেশ ও সিলেট অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে বেশ কয়েকটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এসব সেমিনারে পরিবেশ ও নদী রক্ষা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। পরিবেশ ও নদী সংরক্ষণ নিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা থেকে সম্মেলনে যোগ দেওয়া আবদুল করিম কিম। পরিবেশ আন্দোলনের এ সংগঠক বলেন, পরিবেশদূষণের কারণে সারা দেশের মতো সিলেটের অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশও হুমকির মুখে রয়েছে। এ অবস্থায় পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য তিনি প্রবাসীদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সম্মেলনের প্রথম দিনই ব্যাপক লোকসমাগম হয়। তবে নতুন প্রজন্মের প্রবাসীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। উদ্বোধনী দিনে আলোচনার পাশাপাশি ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। অঞ্চল প্রধান গান নিয়ে সাজানো এ অনুষ্ঠানে শিল্পীরা হাসন রাজা, দুরবিন শাহ ও বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের গান পরিবেশন করেন।
সম্মেলনের প্রথম দিনে সমাপনী বক্তব্য দেন সম্মেলনের আহ্বায়ক ড. জিয়া উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এ সম্মেলন শুধু মিলনমেলাই নয়, এতে বিভিন্ন আলোচনা ও সেমিনারের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সুপারিশমালা তৈরি করা হবে। এ সুপারিশমালার আলোকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সব সিলেটবাসীকে সম্পৃক্ত করে অঞ্চলের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।