এমপিওভুক্তির সুখবর পাচ্ছেন শিক্ষকরা
- আপডেটের সময় : ০২:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০১৯
- / ৯৫৩ টাইম ভিউ
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে ৭৫ হাজার নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের। আগামী নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটে এমপিওভুক্তির সুখবর পাচ্ছেন তারা।
এমপিওভুক্তির ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘এমপিওভুক্তির কাজ চলছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা তাই একটু সময় লাগলেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না।’
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, আগামী নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এমপিওভুক্তির সুখবর পেতে। এক সঙ্গে যোগ্য সব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি না করে এটি কয়েক ধাপে করতে পারে সরকার।
সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘দেশের অনেক স্থানে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দান করা জমিতে গড়ে উঠেছে স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা। স্থানীয় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শিক্ষক হিসেবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে সামান্য টাকা বেতন হিসেবে আদায় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে চালানো হয় প্রতিষ্ঠানের আনুষঙ্গিক ব্যয়ভার। কিন্তু শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আর হয় না। কোথাও যদিও-বা হয়, তার পরিমাণ নিতান্তই যৎসামান্য। তবু তারা শিক্ষাদান চালিয়ে যান এই ভরসায়-কোনো একদিন প্রতিষ্ঠানটি সরকার এমপিওভুক্ত করবে। তাদের বেতন-ভাতার অনিশ্চয়তা দূর হবে।’
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন সরকার গঠনের পরও চূড়ান্ত হয়নি এমপিওভুক্তি। ফলে অপেক্ষার প্রহর সহসাই শেষ হচ্ছে না ৭৫ হাজার নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দফায় দফায় আন্দোলনের পর গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চার মাস আগে আগস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করে। এ জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবেদন জমা নেওয়া হয়।
তখন প্রায় সাড়ে ৯ হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা আবেদন করেছিল। এর পর প্রাথমিক যাচাইয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ২ হাজার যোগ্য তালিকাভুক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বয়স, শিক্ষার্থীসংক্রান্ত তথ্য, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার, অবকাঠামো ইত্যাদি বিবেচনায় নম্বর পায় প্রতিষ্ঠানগুলো। সব মিলিয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে গ্রেডিং করা হয়। কিন্তু পরে আবেদন সরেজমিন যাচাই-বাছাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই প্রক্রিয়ায় ঝুলে যায় এমপিওভুক্তি কার্যক্রম। এর পর নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে নতুন সরকার গঠন হয়েছে।
কিন্তু অগ্রগতি হয়নি এমপিওভুক্তির। তা হলে কি শুধু ভোটের জন্য তড়িঘড়ি করেছিল সরকার-এমন প্রশ্ন ৭৫ হাজার নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, এমপিওভুক্তির জন্য নিম্ন-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৯ হাজার ৪৯৮টি আবেদন পড়ে অনলাইনে। এর পর সফটওয়্যারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগ্য তালিকা করা হয়। এ তালিকায় প্রায় দুই হাজার প্রতিষ্ঠান আছে। এখন অর্থের সংস্থান হলে এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পেলে যে কোনো সময়ে এমপিওভুক্তির আদেশ জারি করা সম্ভব।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২৬ হাজার ১৮০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত আছে। এ খাতে ব্যয় বরাদ্দ আছে বছরে ১৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা, যা মন্ত্রণালয়ের বাজেটের ৬৩ শতাংশের বেশি। যে সাড়ে ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে, সেগুলোকে এমপিও দিলে বছরে অন্তত আরও ৩ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক হিসাবমতে, প্রতিটি ডিগ্রি কলেজ এমপিওভুক্ত করতে বছরে প্রয়োজন ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা; উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩৩ লাখ ৮০ হাজার, আর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন পর্যায়ের মাদ্রাসাগুলোয়ও ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় অভিন্ন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্তি খাতে বরাদ্দ আছে মাত্র ৪৩২ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগে এর পরিমাণ আরও অনেক কম। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পেলে এমপিওভুক্ত করা অসম্ভব।
প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সারাদেশে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা কমপক্ষে ৭ বছর ধরে এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর সঙ্গে ঝুলে আছে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৭৫ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার ভাগ্য। এমনও আছে, এমপিওভুক্তির আশায় থাকতে থাকতে অনেক শিক্ষক ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন।