ঢাকা , শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদে পর্তুগালে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা প্রিয়জনদের মানসিক রোগ যদি আপনজন বুঝতে না পারেন আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছে পর্তুগাল আওয়ামীলীগ যেকোনো প্রচেষ্টা এককভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়: দুদক সচিব শ্রীমঙ্গলে দুটি চোরাই মোটরসাইকেল সহ মিল্টন কুমার আটক পর্তুগালের অভিবাসন আইনে ব্যাপক পরিবর্তন পর্তুগাল বিএনপি আহবায়ক কমিটির জুমে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয় এমপি আনোয়ারুল আজিমকে হত্যার ঘটনায় আটক তিনজন , এতে বাংলাদেশী মানুষ জড়িত:স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ ইরান দুতাবাসে রাইসির শোক বইয়ে মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর

এক হার না মানা জীবনের প্রতিচ্ছবি

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : ১০:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • / ৬৫৪ টাইম ভিউ

০১.
সাবেক দুইবারের সেনাপ্রধানের স্ত্রী হিসাবে চাইলেই একটা নিরাপদ জীবন বেছে নিতে পারতেন। একজন সেক্টর কমান্ডার, জেড ফোর্সের অধিনায়ক, স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা ও রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হিসাবে সম্মান, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সবই তাঁর ছিল। তিনি তো এই নির্যাতনের নিপীড়নের পথ বেছে না নিলেও পারতেন। তারপরও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেন রাজনীতিতে আসলেন? তা কি শুধুই ক্ষমতার জন্য? প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য? অর্থবিত্তের জন্য? দেশ শাসনের জন্য?

রক্ত আর জীবনের দামে কেনা স্বাধীনতা যখন লুটেরাদের হাতে লুণ্ঠিত হয়, ডাকাতি হয়, ছিনতাই হয়, তখন আপসহীন মানুষের রক্তে আগুন জ্বলে, বিদ্রোহী হয়, জ্বলে উঠে, রাজপথে নামে, মুক্তির মিছিলে আসে, নেতৃত্ব দেয়। পৃথিবীর মুক্তিকামী নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস এমনই।

০২.
দেশ ও জাতির বড়ই দুঃসময়ে এক গৃহবধূকে গৃহকোণ থেকে রাস্তায় নামতে হয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য এখনও লড়েই যাচ্ছেন। দেশের মানুষ গভীর ভালবাসায় যাঁকে আপসহীন দেশনেত্রী নামে ডাকে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি যেভাবে দেশবাসীকে সাতদলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এক কাতারে এনে এরশাদের পতন ঘটিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে তা এক নজিরবিহীন ঘটনা। ঢাকার রাস্তার পাশে ওয়ালে ওয়ালে তখন এমন লেখাই শোভা পেত- BNP: the choice of new generation. কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী তরুণদের ছাত্রদল করা একটি ফ্যাশন বা ট্রেন্ডে পরিণত করেছিলেন তখন বেগম জিয়া।

০৩.
ওয়ান ইলেভেনের আওয়ামী দালাল মইন-ফখরুদ্দিনের সামরিক সরকারও দেশনেত্রীকে তার নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বিন্দু পরিমাণ নাড়াতে পারেনি।

সে সময় তাঁকে দেশ ছাড়ার প্রচণ্ড চাপ দিলে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন-
“এই দেশই আমার প্রথম ও শেষ ঠিকানা, এদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও আমার কোন ঠিকানা নেই, বাঁচতে হয় এখানেই বাঁচবো, মরতে হয় এখানেই মরবো, এই দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না”। এদেশের মানুষের জন্য তিনি যেন রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- “কঠিনেরে ভালবাসলেন”।

স্বামী, সন্তান, বাড়ি- সব হারালেন। আগামী দিনে বাংলাদেশ যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, সেই তারেক রহমানও নির্বাসনে! আর নিজে বাংলাদেশের মানুষকে উজার করে ভালবাসার মাশুল দিচ্ছেন কখনও পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত নির্জন ভুতুড়ে এক কারাগারে রাজবন্দি হিসাবে, কখনও পিজি হাসপাতালে একজন রাজবন্দির চিকিৎসা না পাওয়ার নির্মম সাক্ষী হয়ে! পৃথিবীতে এমন ঘটনা হয়তো আর একটাও নেই যে একটা কারাগারে মাত্র একজন আসামিকেই মানসিক যন্ত্রণায় রাখা হয়েছে!

০৪.
জিয়া পরিবারের রাজনীতির অতীত ইতিহাস শুধুই দেশ ও মানুষের জন্য। এদেশের তিনটি ঐতিহাসিক সংকটে জিয়া পরিবারের তিন প্রজন্ম সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছে ও দিচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে দেশনেত্রীর নির্দেশনায় দেশনায়ক তারেক রহমান।

ভাবা যায়? বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট এর স্ত্রীর, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর, কয়েকবারের বিরোধীদলের নেত্রীর ঢাকা শহরে একটি নিজস্ব বাড়ি পর্যন্ত নেই!! ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়!! এদেশের মানুষকে যেমন তিনি ও তাঁর পরিবার শর্তহীনভাবে ভালবেসেছেন তার প্রতিদানও মানুষ বার বার উজার করেই দিয়েছে। দিচ্ছে। এখনো বাংলাদেশের জনগণ তাঁর সাথেই, বিএনপির সাথেই, জিয়া পরিবারের সাথেই। যদিও জনবিচ্ছিন্ন স্বৈরচারের চোখে তিনি ভয়ংকর আসামি !!

রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য প্রায় ত্রিশ লাখ শিক্ষিত তরুণ তরুণী রাস্তায় নামলো, নিরাপদ সড়কের জন্য এদেশের কিশোর কিশোরীরা সারা বাংলাদেশ অচল করে দিয়ে পৃথিবীতে নজির স্থাপন করেছে! যাদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল- Justice বা ন্যায়বিচার।

যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে সত্য রায় লেখার অপরাধে ফেরারি আসামির মত বিদেশে পালিয়ে বেড়াতে হয় ন্যায়বিচার সেখানে শুধু স্বপ্নই নয়, অকল্পনীয়ও বটে। জনগণের বাংলাদেশের মালিকানা জনগণের হাতে তুলে দিতে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে ন্যায়বিচার কায়েমের জন্যই
কোনও স্বৈরাচারের সাথে আপস করেননি তিনি।

০৫.
যে দেশের জন্য তিনি এত জুলুম নির্যাতন গৃহবন্দিত্ব, কারাগার, মামলা, হামলা ভোগ করছেন সেই দেশের নিষ্ঠুর শাসকরাই হত্যা করেছে তাঁর স্বামী বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টকে। ৯৩ দিন গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় মৃত সন্তানের কফিন জড়িয়ে দেশনেত্রীর কান্না দেখেছে পুরো বিশ্ব, সেই দেশের শাসকরাই নির্বাসনে পাঠিয়েছে তার বেঁচে থাকা একমাত্র সন্তান বাংলাদেশের আগামীদিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানকে, দেশনেত্রীকে করেছে ঘরছাড়া, বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দীর্ঘ তিন যুগের স্মৃতির মিনার ভোল্ডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে! আর আজ তিনি হসপিটাল নামক কারাগারে!! তবুও তিনি আমাদের জন্যই লড়ছেন, গণতন্ত্রের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যে সংগ্রাম পরাজিত হওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে নেই, যে সংগ্রাম হারতে জানে না।

যে বাংলাদেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, মুক্তির জন্য, স্বাধীনভাবে বেঁচে জন্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের অগলিত মানুষ রক্ত ও জীবন দিয়েছে সে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র আজ নেই! আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, যেখানে ভোটহীন নির্বাচনে ক্ষমতার দ্বার উন্মুক্ত থাকবে? গোটা দেশে নির্বাচন এখন আতঙ্কা সন্ত্রাস আর ভয়ের নাম।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নের কথা তার ভিশন-২০৩০ তে ঘোষণা করেছেন। দেশনেত্রীর চলমান সংগ্রাম রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে তুলে দেয়ার জন্য। আওয়ামী লীগের কাছে সব চেয়ে বড় আতঙ্কের নাম বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান আর বিএনপি। সেজন্যই তারেক রহমান নির্বাসনে, বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলে দিনরাত আর বেগম খালেদা জিয়া আজ কারাগারে বন্দি!

পৃথিবীর যে প্রান্তেই আজ মুক্তির সংগ্রাম চলছে সেখানেই বেগম খালেদা জিয়া আজ উচ্চারিত শ্রদ্ধায় ভালবাসায়।

০৬.
সরকার খুব ভাল করেই বুঝতে পেরেছিল বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত রেখে সেই নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়া অসম্ভব। তাঁর নেতৃত্বে বিদ্রোহের দাবানল জ্বলে উঠবে, সেজন্যই নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার রাজনৈতিক কৌশলের প্র্যাকটিক্যাল খেলা শুরু করে স্বৈরাচার সরকার। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বন্দি করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে, কারাগারে
নেয়া হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তি ও গণতন্ত্রকে। যার চূড়ান্ত রুপ দেখেছে বাংলাদেশের জনগণ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বাংলাদেশের জনগণ বলতে গেলে আরেকটি নতুন বিপ্লবেরও জন্ম দিয়েছে। মানুষতো সেদিন ঘরে বসে থাকেনি, বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছে বুক খালি করে!

বেগম খালেদা জিয়া যখন গুলশানের বাসা থেকে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বকশীবাজারের দিকে রওনা হন, তখন পুরো ঢাকা মানুষের দখলে। একবিংশ শতাব্দির জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীদের দখলে। তাঁর গাড়ির চারপাশে অজস্র সন্তানের বেরিকেড! জ্বলে উঠা বিদ্রোহী তারুণ্যের মিছিল।

আর হ্যা, আমি খুব সচেতনভাবেই বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের দিন ঢাকার রাজপথে রাষ্ট্রের অঘোষিত কারফিউ ভেঙে জনগণের জাগরণকে বিপ্লব হিসাবেই আখ্যায়িত করছি। যদিও সে দিনের সেই লড়াইয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যায়নি, যে লড়াই এখনো চলছে।
একটা কথা মনে হয় আমাদের মনে রাখতেই হবে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশে আজকের যে সংগ্রাম চলছে তা কেবলই একটা নির্বাচনে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই নয়, এ লড়াই বাংলাদেশের অস্তিত্বের। নিশ্চিত থাকুন এ লড়াই মুক্তির, গণতন্ত্রের বিজয়ের।

০৭.
রাজনীতি তাঁকে যা দিয়েছে নিয়ে গেছে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। ব্যক্তিজীবন বলতে আজ তাঁর কিছু নেই, সব নির্বাসনে আর কারাগারে! নিজের ঠিকানা তার একটাই- বাংলাদেশ! আপনজন বলতে এদেশের জনগণই! বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা গ্রিক পুরানের মিথ অনুযায়ী ফিনিক্স পাখির মত। যে পাখি আগুনের ধ্বংস স্তুপ থেকে বার বার নতুন রূপে নব শক্তিতে জেগে উঠে।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র মুক্তির এক ফিনিক্স পাখির নাম আজ বেগম খালেদা জিয়া। চাইলেই যাকে ধ্বংস করে দেয়া যায় না। মানুষের ভোটের অধিকার ও রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার যে সংগ্রাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চলছে সেখানেও বিজয় সুনিশ্চিত। রাজপথ কখনই পরাজিত হয় না, হতে পারে না। কো…..নো……দি…..ন….. না।

বাংলাদেশের মুক্তির জন্য বেগম খালেদা জিয়ার লড়াই তরুণ প্রজন্মের কাছে গণতন্ত্রের রোল মডেল, মুক্তির আইকনে পরিণত।

মো: নিজাম উদ্দিন
লেখক: সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সহ-সম্পাদক ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ, এমফিল গবেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পোস্ট শেয়ার করুন

এক হার না মানা জীবনের প্রতিচ্ছবি

আপডেটের সময় : ১০:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

০১.
সাবেক দুইবারের সেনাপ্রধানের স্ত্রী হিসাবে চাইলেই একটা নিরাপদ জীবন বেছে নিতে পারতেন। একজন সেক্টর কমান্ডার, জেড ফোর্সের অধিনায়ক, স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা ও রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হিসাবে সম্মান, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সবই তাঁর ছিল। তিনি তো এই নির্যাতনের নিপীড়নের পথ বেছে না নিলেও পারতেন। তারপরও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেন রাজনীতিতে আসলেন? তা কি শুধুই ক্ষমতার জন্য? প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য? অর্থবিত্তের জন্য? দেশ শাসনের জন্য?

রক্ত আর জীবনের দামে কেনা স্বাধীনতা যখন লুটেরাদের হাতে লুণ্ঠিত হয়, ডাকাতি হয়, ছিনতাই হয়, তখন আপসহীন মানুষের রক্তে আগুন জ্বলে, বিদ্রোহী হয়, জ্বলে উঠে, রাজপথে নামে, মুক্তির মিছিলে আসে, নেতৃত্ব দেয়। পৃথিবীর মুক্তিকামী নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস এমনই।

০২.
দেশ ও জাতির বড়ই দুঃসময়ে এক গৃহবধূকে গৃহকোণ থেকে রাস্তায় নামতে হয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য এখনও লড়েই যাচ্ছেন। দেশের মানুষ গভীর ভালবাসায় যাঁকে আপসহীন দেশনেত্রী নামে ডাকে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি যেভাবে দেশবাসীকে সাতদলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এক কাতারে এনে এরশাদের পতন ঘটিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে তা এক নজিরবিহীন ঘটনা। ঢাকার রাস্তার পাশে ওয়ালে ওয়ালে তখন এমন লেখাই শোভা পেত- BNP: the choice of new generation. কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী তরুণদের ছাত্রদল করা একটি ফ্যাশন বা ট্রেন্ডে পরিণত করেছিলেন তখন বেগম জিয়া।

০৩.
ওয়ান ইলেভেনের আওয়ামী দালাল মইন-ফখরুদ্দিনের সামরিক সরকারও দেশনেত্রীকে তার নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বিন্দু পরিমাণ নাড়াতে পারেনি।

সে সময় তাঁকে দেশ ছাড়ার প্রচণ্ড চাপ দিলে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন-
“এই দেশই আমার প্রথম ও শেষ ঠিকানা, এদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও আমার কোন ঠিকানা নেই, বাঁচতে হয় এখানেই বাঁচবো, মরতে হয় এখানেই মরবো, এই দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না”। এদেশের মানুষের জন্য তিনি যেন রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- “কঠিনেরে ভালবাসলেন”।

স্বামী, সন্তান, বাড়ি- সব হারালেন। আগামী দিনে বাংলাদেশ যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, সেই তারেক রহমানও নির্বাসনে! আর নিজে বাংলাদেশের মানুষকে উজার করে ভালবাসার মাশুল দিচ্ছেন কখনও পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত নির্জন ভুতুড়ে এক কারাগারে রাজবন্দি হিসাবে, কখনও পিজি হাসপাতালে একজন রাজবন্দির চিকিৎসা না পাওয়ার নির্মম সাক্ষী হয়ে! পৃথিবীতে এমন ঘটনা হয়তো আর একটাও নেই যে একটা কারাগারে মাত্র একজন আসামিকেই মানসিক যন্ত্রণায় রাখা হয়েছে!

০৪.
জিয়া পরিবারের রাজনীতির অতীত ইতিহাস শুধুই দেশ ও মানুষের জন্য। এদেশের তিনটি ঐতিহাসিক সংকটে জিয়া পরিবারের তিন প্রজন্ম সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছে ও দিচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে দেশনেত্রীর নির্দেশনায় দেশনায়ক তারেক রহমান।

ভাবা যায়? বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট এর স্ত্রীর, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর, কয়েকবারের বিরোধীদলের নেত্রীর ঢাকা শহরে একটি নিজস্ব বাড়ি পর্যন্ত নেই!! ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়!! এদেশের মানুষকে যেমন তিনি ও তাঁর পরিবার শর্তহীনভাবে ভালবেসেছেন তার প্রতিদানও মানুষ বার বার উজার করেই দিয়েছে। দিচ্ছে। এখনো বাংলাদেশের জনগণ তাঁর সাথেই, বিএনপির সাথেই, জিয়া পরিবারের সাথেই। যদিও জনবিচ্ছিন্ন স্বৈরচারের চোখে তিনি ভয়ংকর আসামি !!

রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য প্রায় ত্রিশ লাখ শিক্ষিত তরুণ তরুণী রাস্তায় নামলো, নিরাপদ সড়কের জন্য এদেশের কিশোর কিশোরীরা সারা বাংলাদেশ অচল করে দিয়ে পৃথিবীতে নজির স্থাপন করেছে! যাদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল- Justice বা ন্যায়বিচার।

যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে সত্য রায় লেখার অপরাধে ফেরারি আসামির মত বিদেশে পালিয়ে বেড়াতে হয় ন্যায়বিচার সেখানে শুধু স্বপ্নই নয়, অকল্পনীয়ও বটে। জনগণের বাংলাদেশের মালিকানা জনগণের হাতে তুলে দিতে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে ন্যায়বিচার কায়েমের জন্যই
কোনও স্বৈরাচারের সাথে আপস করেননি তিনি।

০৫.
যে দেশের জন্য তিনি এত জুলুম নির্যাতন গৃহবন্দিত্ব, কারাগার, মামলা, হামলা ভোগ করছেন সেই দেশের নিষ্ঠুর শাসকরাই হত্যা করেছে তাঁর স্বামী বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টকে। ৯৩ দিন গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় মৃত সন্তানের কফিন জড়িয়ে দেশনেত্রীর কান্না দেখেছে পুরো বিশ্ব, সেই দেশের শাসকরাই নির্বাসনে পাঠিয়েছে তার বেঁচে থাকা একমাত্র সন্তান বাংলাদেশের আগামীদিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানকে, দেশনেত্রীকে করেছে ঘরছাড়া, বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দীর্ঘ তিন যুগের স্মৃতির মিনার ভোল্ডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে! আর আজ তিনি হসপিটাল নামক কারাগারে!! তবুও তিনি আমাদের জন্যই লড়ছেন, গণতন্ত্রের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যে সংগ্রাম পরাজিত হওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে নেই, যে সংগ্রাম হারতে জানে না।

যে বাংলাদেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, মুক্তির জন্য, স্বাধীনভাবে বেঁচে জন্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের অগলিত মানুষ রক্ত ও জীবন দিয়েছে সে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র আজ নেই! আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, যেখানে ভোটহীন নির্বাচনে ক্ষমতার দ্বার উন্মুক্ত থাকবে? গোটা দেশে নির্বাচন এখন আতঙ্কা সন্ত্রাস আর ভয়ের নাম।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নের কথা তার ভিশন-২০৩০ তে ঘোষণা করেছেন। দেশনেত্রীর চলমান সংগ্রাম রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে তুলে দেয়ার জন্য। আওয়ামী লীগের কাছে সব চেয়ে বড় আতঙ্কের নাম বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান আর বিএনপি। সেজন্যই তারেক রহমান নির্বাসনে, বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলে দিনরাত আর বেগম খালেদা জিয়া আজ কারাগারে বন্দি!

পৃথিবীর যে প্রান্তেই আজ মুক্তির সংগ্রাম চলছে সেখানেই বেগম খালেদা জিয়া আজ উচ্চারিত শ্রদ্ধায় ভালবাসায়।

০৬.
সরকার খুব ভাল করেই বুঝতে পেরেছিল বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত রেখে সেই নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়া অসম্ভব। তাঁর নেতৃত্বে বিদ্রোহের দাবানল জ্বলে উঠবে, সেজন্যই নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার রাজনৈতিক কৌশলের প্র্যাকটিক্যাল খেলা শুরু করে স্বৈরাচার সরকার। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বন্দি করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে, কারাগারে
নেয়া হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তি ও গণতন্ত্রকে। যার চূড়ান্ত রুপ দেখেছে বাংলাদেশের জনগণ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বাংলাদেশের জনগণ বলতে গেলে আরেকটি নতুন বিপ্লবেরও জন্ম দিয়েছে। মানুষতো সেদিন ঘরে বসে থাকেনি, বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছে বুক খালি করে!

বেগম খালেদা জিয়া যখন গুলশানের বাসা থেকে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বকশীবাজারের দিকে রওনা হন, তখন পুরো ঢাকা মানুষের দখলে। একবিংশ শতাব্দির জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীদের দখলে। তাঁর গাড়ির চারপাশে অজস্র সন্তানের বেরিকেড! জ্বলে উঠা বিদ্রোহী তারুণ্যের মিছিল।

আর হ্যা, আমি খুব সচেতনভাবেই বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের দিন ঢাকার রাজপথে রাষ্ট্রের অঘোষিত কারফিউ ভেঙে জনগণের জাগরণকে বিপ্লব হিসাবেই আখ্যায়িত করছি। যদিও সে দিনের সেই লড়াইয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যায়নি, যে লড়াই এখনো চলছে।
একটা কথা মনে হয় আমাদের মনে রাখতেই হবে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশে আজকের যে সংগ্রাম চলছে তা কেবলই একটা নির্বাচনে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই নয়, এ লড়াই বাংলাদেশের অস্তিত্বের। নিশ্চিত থাকুন এ লড়াই মুক্তির, গণতন্ত্রের বিজয়ের।

০৭.
রাজনীতি তাঁকে যা দিয়েছে নিয়ে গেছে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। ব্যক্তিজীবন বলতে আজ তাঁর কিছু নেই, সব নির্বাসনে আর কারাগারে! নিজের ঠিকানা তার একটাই- বাংলাদেশ! আপনজন বলতে এদেশের জনগণই! বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা গ্রিক পুরানের মিথ অনুযায়ী ফিনিক্স পাখির মত। যে পাখি আগুনের ধ্বংস স্তুপ থেকে বার বার নতুন রূপে নব শক্তিতে জেগে উঠে।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র মুক্তির এক ফিনিক্স পাখির নাম আজ বেগম খালেদা জিয়া। চাইলেই যাকে ধ্বংস করে দেয়া যায় না। মানুষের ভোটের অধিকার ও রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার যে সংগ্রাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চলছে সেখানেও বিজয় সুনিশ্চিত। রাজপথ কখনই পরাজিত হয় না, হতে পারে না। কো…..নো……দি…..ন….. না।

বাংলাদেশের মুক্তির জন্য বেগম খালেদা জিয়ার লড়াই তরুণ প্রজন্মের কাছে গণতন্ত্রের রোল মডেল, মুক্তির আইকনে পরিণত।

মো: নিজাম উদ্দিন
লেখক: সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সহ-সম্পাদক ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ, এমফিল গবেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়