ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতেবিভিন্ন চক্রান্তে লিপ্ত আ’লীগ গ্রিন সিলেট ট্রাভেলসের আয়োজনে বাংলাদেশে পর্তুগাল দূতাবাস/কনসুলেট চেয়ে খোলা চিঠি স্বৈরাচার সরকার পতনের পর যুক্তরাজ্যে ফিরছেন সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি পর্তুগাল শাখার উদ্যোগে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত! বন্যার্ত মানুষের ত্রান তহবিলের জন্যে ৬ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘোষণা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বেজা শাখার কর্মি সম্মেলন অনুষ্ঠিত বিমানের নতুন চেয়ারম্যান কুলাউড়ার আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও ২৪ কোটা আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা দোয়া মাহফিল পর্তুগালে রাজনগর প্রবাসী ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আত্মপ্রকাশ পর্তুগাল বিএনপি’র আয়োজনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বরণে দোয়া ও মাহফিল সম্পন্ন বিমূর্ত সব মুর্হুতরা, আমার মা’য়ের সাথের শেষ শনিবার – শাহারুল কিবরিয়া

একদিন করোনার আঁধার কেটে যাবে-সাঈদুর

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : ০৪:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মে ২০২০
  • / ৪৪৮ টাইম ভিউ

কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্টট (ল্যাবরোটরি) সাঈদুর রহমান চৌধুরী এখন পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করে চলেছেন কোভিড-১৯ নামক করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে। এ পর্যন্ত তিনি ২২৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করতে সক্ষম হযেছেন। আর এ জন্য প্রায় ২ মাস যাবত মা, বাবা, স্ত্রী এবং আদরের সন্তানদের ছেড়ে আলাদা বাসায় থাকতে হচ্ছে করোনা যোদ্ধা সাঈদুরকে।

সাঈদুর রহমান জানান, আমার বাবা ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমি তো সেই মুক্তিযোদ্ধা বাবারি সন্তান। এখন ২০২০ সালে এসে আমারও সুযোগ হয়েছে করোনা যুদ্ধে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার। কোনো ভয় নাই। জয়ী আমরাই হব ইনশাল্লাহ। এই যোদ্ধে ইতিমধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এটা আশা জাগাচ্ছে যে, একদিন করোনার আঁধার কেটে যাবে।
সাঈদুর রহমান ১৯৮০ সালের ১৪ই জুন হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পুরানগাও গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান এবং আছিয়া খাতুন দম্পতীর কোল আলোকরে জন্মগ্রহন করেন। ২য় শ্রেণী পর্যন্ত তদানিন্তন শিবগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এ অধ্যয়ন করে পিতার চাকুরীর সুবাধে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় শহীদ আরবের রহমান কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আবারো ২য় শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং সফলতার সহিত ৬ষ্ট শ্রেণী পর্যন্ত উত্তির্ণ হন। তারপর বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় ভৈরব হতে নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর পিতার বদলি জনিত কারনে ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে কুলাউড়াতে পিতার সাথে চলে আসেন। সেই ছাত্র জীবন হতে এখন পর্যন্ত মোট ২৪ বছর যাবৎ কুলাউড়া অবস্থান করছেন মা-বাবা, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে। অন্যদিকে ঢাকায় রাষ্ট্রিয় চিকিৎসা অনুষদ এর অধীন ডিপ্লোমা হেলথ টেকনোলোজি কোর্স শেষ করে ২০০৮ এর সেপ্টেম্বর এর ১৮ তারিখ হইতে অদ্যাবধি কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ল্যাব হিসেবে কর্মরত আছেন। মাঝে ২০১৩- ২০১৫ পর্যন্ত রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ল্যাব ইনচার্জ এর দ্বায়ীত্বও তিনি পালন করেন।করোনার সংক্রমণ শুরু হলে সাঈদুরের ওপর নমুনা সংগ্রহের ভার পড়ে। এর পর থেকে করোনার বিরুদ্ধে যোদ্ধ শুরু করেন। নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে স্ত্রী সন্তানদের ছেড়ে আলাদা ভাবে একা একটি বাসায় থাকতে শুরু করেন। তবে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজে একতরফা উৎসাহ ও বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুল হক এবং উপজেলার স্যানিটারি পরিদর্শক জসিম উদ্দিন। সাঈদুর রহমান জানান, এই পর্যন্ত তথ্য মতে মার্চ মাস থেকে অদ্য পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ২২৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৯৪ জনের ফলাফল পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ২য় দফা পরীক্ষায় তাঁদের ৫ জনের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। অন্যদের পরীক্ষার ফলাফল এখনো পর্যন্ত আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুল হক এব্যাপারে বলেন, নমুনা সংগ্রহে সাঈদুরই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা। করোনা মোকাবিলায় আমাদের মতো স্বজনদের সঙ্গ ছেড়ে তিনিও নিরলসভাবে লড়ছেন করোনার বিরুদ্ধে, আমি তার সু-সাস্থ্য ও সফলতা কামনা করি।
সাঈদুর রহমানের বাবা মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান চৌধুরী কুলাউড়া জংশন রেলওয়ে হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে অবসর নেন। মা মিডওয়াইফ আছিয়া খাতুন,
তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তার কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা। তিনি ৩ ছেলের জনক।
সাঈদুর আরো বলেন সরকারের পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি ২০১৪ সালের পহেলা মার্চ নিজ উদ্দোগে কুলাউড়ায় জীবনের প্রথম বন্ধু শিবু দাস রায়কে সাথে নিয়ে গড়ে তুলি নিরাপদ স্বাস্থ্য রক্ষা আন্দোলন নামক সামাজিক সংগঠন।
যে সংগঠনের মাধ্যমে আজ পর্যন্ত ছোট বড় ক্যাম্প মিলিয়ে প্রায় ৫০ এর উপর ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং নির্ণয় ক্যাম্প পরিচালিত হয়।

পোস্ট শেয়ার করুন

একদিন করোনার আঁধার কেটে যাবে-সাঈদুর

আপডেটের সময় : ০৪:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মে ২০২০

কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্টট (ল্যাবরোটরি) সাঈদুর রহমান চৌধুরী এখন পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করে চলেছেন কোভিড-১৯ নামক করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে। এ পর্যন্ত তিনি ২২৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করতে সক্ষম হযেছেন। আর এ জন্য প্রায় ২ মাস যাবত মা, বাবা, স্ত্রী এবং আদরের সন্তানদের ছেড়ে আলাদা বাসায় থাকতে হচ্ছে করোনা যোদ্ধা সাঈদুরকে।

সাঈদুর রহমান জানান, আমার বাবা ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমি তো সেই মুক্তিযোদ্ধা বাবারি সন্তান। এখন ২০২০ সালে এসে আমারও সুযোগ হয়েছে করোনা যুদ্ধে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার। কোনো ভয় নাই। জয়ী আমরাই হব ইনশাল্লাহ। এই যোদ্ধে ইতিমধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এটা আশা জাগাচ্ছে যে, একদিন করোনার আঁধার কেটে যাবে।
সাঈদুর রহমান ১৯৮০ সালের ১৪ই জুন হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পুরানগাও গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান এবং আছিয়া খাতুন দম্পতীর কোল আলোকরে জন্মগ্রহন করেন। ২য় শ্রেণী পর্যন্ত তদানিন্তন শিবগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এ অধ্যয়ন করে পিতার চাকুরীর সুবাধে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় শহীদ আরবের রহমান কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আবারো ২য় শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং সফলতার সহিত ৬ষ্ট শ্রেণী পর্যন্ত উত্তির্ণ হন। তারপর বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় ভৈরব হতে নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর পিতার বদলি জনিত কারনে ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে কুলাউড়াতে পিতার সাথে চলে আসেন। সেই ছাত্র জীবন হতে এখন পর্যন্ত মোট ২৪ বছর যাবৎ কুলাউড়া অবস্থান করছেন মা-বাবা, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে। অন্যদিকে ঢাকায় রাষ্ট্রিয় চিকিৎসা অনুষদ এর অধীন ডিপ্লোমা হেলথ টেকনোলোজি কোর্স শেষ করে ২০০৮ এর সেপ্টেম্বর এর ১৮ তারিখ হইতে অদ্যাবধি কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ল্যাব হিসেবে কর্মরত আছেন। মাঝে ২০১৩- ২০১৫ পর্যন্ত রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ল্যাব ইনচার্জ এর দ্বায়ীত্বও তিনি পালন করেন।করোনার সংক্রমণ শুরু হলে সাঈদুরের ওপর নমুনা সংগ্রহের ভার পড়ে। এর পর থেকে করোনার বিরুদ্ধে যোদ্ধ শুরু করেন। নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে স্ত্রী সন্তানদের ছেড়ে আলাদা ভাবে একা একটি বাসায় থাকতে শুরু করেন। তবে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজে একতরফা উৎসাহ ও বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুল হক এবং উপজেলার স্যানিটারি পরিদর্শক জসিম উদ্দিন। সাঈদুর রহমান জানান, এই পর্যন্ত তথ্য মতে মার্চ মাস থেকে অদ্য পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ২২৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৯৪ জনের ফলাফল পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ২য় দফা পরীক্ষায় তাঁদের ৫ জনের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। অন্যদের পরীক্ষার ফলাফল এখনো পর্যন্ত আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুল হক এব্যাপারে বলেন, নমুনা সংগ্রহে সাঈদুরই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা। করোনা মোকাবিলায় আমাদের মতো স্বজনদের সঙ্গ ছেড়ে তিনিও নিরলসভাবে লড়ছেন করোনার বিরুদ্ধে, আমি তার সু-সাস্থ্য ও সফলতা কামনা করি।
সাঈদুর রহমানের বাবা মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান চৌধুরী কুলাউড়া জংশন রেলওয়ে হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে অবসর নেন। মা মিডওয়াইফ আছিয়া খাতুন,
তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তার কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা। তিনি ৩ ছেলের জনক।
সাঈদুর আরো বলেন সরকারের পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি ২০১৪ সালের পহেলা মার্চ নিজ উদ্দোগে কুলাউড়ায় জীবনের প্রথম বন্ধু শিবু দাস রায়কে সাথে নিয়ে গড়ে তুলি নিরাপদ স্বাস্থ্য রক্ষা আন্দোলন নামক সামাজিক সংগঠন।
যে সংগঠনের মাধ্যমে আজ পর্যন্ত ছোট বড় ক্যাম্প মিলিয়ে প্রায় ৫০ এর উপর ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং নির্ণয় ক্যাম্প পরিচালিত হয়।