ঢাকা , বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আপডেট :
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনে বড়লেখার সোয়েব আহমেদের সমর্থনে মতবিনিময় সভা ইতালির ভেনিসে গ্রিন সিলেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর জরুরি সভা অনুষ্ঠিত ইতালির ভেনিসে এনটিভির ইউরোপের ডিরেক্টর সাবরিনা হোসাইন কে সংবর্ধনা দিয়েছে ইউরোপিয়ান বাংলা প্রেসক্লাব পর্তুগালে বেজা আওয়ামীলীগের কর্মি সভা পর্তুগাল এ ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাবের জার্সি উন্মোচন লিসবনে আত্মপ্রকাশ হয় সামাজিক সংগঠন “গোলাপগঞ্জ কমিউনিটি কেয়ারর্স পর্তুগাল “ উচ্ছ্বাস আর আনন্দে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের উদযাপন করেছে পর্তুগাল যথাযথ গাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে পরিবেশে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করেছে ভেনিস প্রবাসীরা ভেনিসে বৃহত্তর সিলেট সমিতির আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত এক অসুস্থ প্রজন্ম কে সাথি করে এগুচ্ছি আমরা

পা দিয়েই বিমান ওড়ান জেসিকা

দেশদিগন্ত নিউজ ডেস্কঃ
  • আপডেটের সময় : ০৯:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০১৯
  • / ৮৭১ টাইম ভিউ

বিমান চালক বা পাইলটরা সাধারণত হাত দিয়েই বিমান চালনা করে থাকেন। কিন্তু জেসিকা কক্সকে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমই বলা যেতে পারে। তিনি সাধারণ মানুষের মত হাত নয়, পা দিয়েই বিমান চালিয়ে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা জেসিকা কক্স স্বাভাবিক মানুষের মত দুটি হাত নিয়ে জন্মগ্রহণ করেননি।  মাতৃগর্ভে কক্সের হাত কেন বিকশিত হয়নি এটা এখনো রহস্যই রয়ে গেছে। তবে হাত না থাকার কারণে জেসিকার উদ্যমে যে ভাটা পড়েনি তা তার বিমান চালনা থেকেই অনুমান করা যেতে পারে।

জেসিকা বলেন, ‘অন্যান্য পাইলটরা যা হাত দিয়ে করে থাকেন, তা আমি পা দিয়েই করে থাকি।’

নিজের হাত না থাকার বিষয়ে জেসিকা জানান, জন্মের পর তাকে দেখে তার বাবা-মা প্রচন্ড ধাক্কা খান। বিশেষ করে তার মা। এরপর ডাক্তার যখন বলেন, তার সন্তানের কোনো হাত নেই। তখন তিনি আরো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন।’

তবে শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা জেসিকাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি সব বাধা অতিক্রম করেই আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছেন। অবশ্য এজন্য তিনি সব কৃতিত্ব নিজের পরিবারকেই দিতে চান। জেসিকার ভাষ্য, তারা আমাকে সাহস জুগিয়েছে এবং আমি যেন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারি সেজন্য সব ধরনের সাহায্যই করেছে আমার পরিবার।

অবশ্য আজকের জেসিকা যিনি পা দিয়েই বিমান চালনা করে মানুষজনকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন, তিনিই শৈশবে একবার বিমানে উঠে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। সেসময় ছোট একটি বিমানে উঠেছিলেন তিনি। পাইলট তাকে বিমানের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যান। তিনি কন্ট্রোল থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে জেসিকাকেই বিমানটি চালাতে বলেন। এই ঘটনাটিই জেসিকার জীবন একদম পাল্টে দেয়।

জেসিকা উল্লেখ করেন, এমনকি কোনো জিনিস যদি আপনার কাছে ভীতিকর মনে হয়, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ হবে সেটার মোকাবিলা করা।

২০০৫ সালে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করার পর জেসিকা পাইলট হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। কিন্তু ব্যাপারটি তার জন্য এতটা সহজ ছিল না। এক্ষেত্রে একজন নিবেদিত বিমান প্রশিক্ষকের প্রয়োজন ছিল জেসিকার। বিমান চালানো শেখার জন্য অনেকের কাছেই তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এরপর নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য তিন বছর তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন।

অবশ্য বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিলেইতো হবে না সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার উপযোগী সঠিক বিমান খুঁজে পাওয়া।  অবশেষে তিনি সেই বিমান খুঁজে পান। এটি ছিল এরকো এরকুপ নামক হাল্কা একটি স্পোর্টস বিমান। নীচু ডানার এই বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রেই তৈরি করা হয়।

২০০৮ সালে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাকে এই এরকুপ বিমান চালানোর জন্য সার্টিফিকেট দেয়। এই ঘটনার পর জেসিকার মনে হয়েছে তার স্বপ্ন যেন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তিনি জানান, অনেক উদ্বেগ ছিল, ছিল অনেক সন্দেহ। আদৌ এটা সম্ভব হবে কি না সে ব্যাপারেও প্রশ্ন ছিল। কিন্তু একাগ্র সাধনার কাছে সব প্রতিবন্ধকতাই হার মানতে বাধ্য হয়।

জেসিকার ধারণা, মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্যই যেন তার জন্ম হয়েছে। তিনি জানান, আর দশজন সুস্থ্য স্বাভাবিক শিশুর মতই তার শৈশব কেটেছে। তিনি স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। পড়াশোনার বাইরেও তিনি অন্যান্য কর্মকাণ্ডেও অংশগ্রহণ করেছেন। নাচ শিখেছেন, মার্শাল আর্ট তায়েকোন্দো থেকে শুরু করে সাঁতারের ক্লাসেও গিয়েছেন এমনকি স্কাউটিংও করেছেন। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তিনি অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। বিষয়টি তার কাছে একদমই অনাকাংখিত ছিল।

তিনি বলেন, ‘আমি একদম স্বাভাবিক মানুষের মত হতে চাইতাম। কিন্তু প্রায়ই আমাকে বলা হতো, তুমি বিকলাঙ্গ তাই এটা করতে পারবে না, ওটা পারবে না। এই বিকলাঙ্গ শব্দটা শুনে আমি খুব বিরক্ত হতাম।’

এমনকি তাকে কৃত্রিম হাত লাগানোর কথা বললেও তিনি সেটা গ্রহণ করেননি। এক্ষেত্রে তিনি কৃত্রিম হাতের বদলে নিজের পা দুটোকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন।

অবশ্য জেসিকা কক্স যে কেবল একজন পাইলট তাই নয়, তিনি সার্টিফিকেট পাওয়া একজন ডুবুরিও। তায়েকোন্দোতেও তিনি ব্ল্যাক বেল্ট পেয়েছেন। এছাড়া অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা হিসেবে ২০টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী এই নারী।

পোস্ট শেয়ার করুন

পা দিয়েই বিমান ওড়ান জেসিকা

আপডেটের সময় : ০৯:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০১৯

বিমান চালক বা পাইলটরা সাধারণত হাত দিয়েই বিমান চালনা করে থাকেন। কিন্তু জেসিকা কক্সকে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমই বলা যেতে পারে। তিনি সাধারণ মানুষের মত হাত নয়, পা দিয়েই বিমান চালিয়ে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা জেসিকা কক্স স্বাভাবিক মানুষের মত দুটি হাত নিয়ে জন্মগ্রহণ করেননি।  মাতৃগর্ভে কক্সের হাত কেন বিকশিত হয়নি এটা এখনো রহস্যই রয়ে গেছে। তবে হাত না থাকার কারণে জেসিকার উদ্যমে যে ভাটা পড়েনি তা তার বিমান চালনা থেকেই অনুমান করা যেতে পারে।

জেসিকা বলেন, ‘অন্যান্য পাইলটরা যা হাত দিয়ে করে থাকেন, তা আমি পা দিয়েই করে থাকি।’

নিজের হাত না থাকার বিষয়ে জেসিকা জানান, জন্মের পর তাকে দেখে তার বাবা-মা প্রচন্ড ধাক্কা খান। বিশেষ করে তার মা। এরপর ডাক্তার যখন বলেন, তার সন্তানের কোনো হাত নেই। তখন তিনি আরো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন।’

তবে শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা জেসিকাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি সব বাধা অতিক্রম করেই আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছেন। অবশ্য এজন্য তিনি সব কৃতিত্ব নিজের পরিবারকেই দিতে চান। জেসিকার ভাষ্য, তারা আমাকে সাহস জুগিয়েছে এবং আমি যেন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারি সেজন্য সব ধরনের সাহায্যই করেছে আমার পরিবার।

অবশ্য আজকের জেসিকা যিনি পা দিয়েই বিমান চালনা করে মানুষজনকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন, তিনিই শৈশবে একবার বিমানে উঠে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। সেসময় ছোট একটি বিমানে উঠেছিলেন তিনি। পাইলট তাকে বিমানের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যান। তিনি কন্ট্রোল থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে জেসিকাকেই বিমানটি চালাতে বলেন। এই ঘটনাটিই জেসিকার জীবন একদম পাল্টে দেয়।

জেসিকা উল্লেখ করেন, এমনকি কোনো জিনিস যদি আপনার কাছে ভীতিকর মনে হয়, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ হবে সেটার মোকাবিলা করা।

২০০৫ সালে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করার পর জেসিকা পাইলট হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। কিন্তু ব্যাপারটি তার জন্য এতটা সহজ ছিল না। এক্ষেত্রে একজন নিবেদিত বিমান প্রশিক্ষকের প্রয়োজন ছিল জেসিকার। বিমান চালানো শেখার জন্য অনেকের কাছেই তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এরপর নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য তিন বছর তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন।

অবশ্য বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিলেইতো হবে না সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার উপযোগী সঠিক বিমান খুঁজে পাওয়া।  অবশেষে তিনি সেই বিমান খুঁজে পান। এটি ছিল এরকো এরকুপ নামক হাল্কা একটি স্পোর্টস বিমান। নীচু ডানার এই বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রেই তৈরি করা হয়।

২০০৮ সালে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন তাকে এই এরকুপ বিমান চালানোর জন্য সার্টিফিকেট দেয়। এই ঘটনার পর জেসিকার মনে হয়েছে তার স্বপ্ন যেন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তিনি জানান, অনেক উদ্বেগ ছিল, ছিল অনেক সন্দেহ। আদৌ এটা সম্ভব হবে কি না সে ব্যাপারেও প্রশ্ন ছিল। কিন্তু একাগ্র সাধনার কাছে সব প্রতিবন্ধকতাই হার মানতে বাধ্য হয়।

জেসিকার ধারণা, মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্যই যেন তার জন্ম হয়েছে। তিনি জানান, আর দশজন সুস্থ্য স্বাভাবিক শিশুর মতই তার শৈশব কেটেছে। তিনি স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। পড়াশোনার বাইরেও তিনি অন্যান্য কর্মকাণ্ডেও অংশগ্রহণ করেছেন। নাচ শিখেছেন, মার্শাল আর্ট তায়েকোন্দো থেকে শুরু করে সাঁতারের ক্লাসেও গিয়েছেন এমনকি স্কাউটিংও করেছেন। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তিনি অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। বিষয়টি তার কাছে একদমই অনাকাংখিত ছিল।

তিনি বলেন, ‘আমি একদম স্বাভাবিক মানুষের মত হতে চাইতাম। কিন্তু প্রায়ই আমাকে বলা হতো, তুমি বিকলাঙ্গ তাই এটা করতে পারবে না, ওটা পারবে না। এই বিকলাঙ্গ শব্দটা শুনে আমি খুব বিরক্ত হতাম।’

এমনকি তাকে কৃত্রিম হাত লাগানোর কথা বললেও তিনি সেটা গ্রহণ করেননি। এক্ষেত্রে তিনি কৃত্রিম হাতের বদলে নিজের পা দুটোকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন।

অবশ্য জেসিকা কক্স যে কেবল একজন পাইলট তাই নয়, তিনি সার্টিফিকেট পাওয়া একজন ডুবুরিও। তায়েকোন্দোতেও তিনি ব্ল্যাক বেল্ট পেয়েছেন। এছাড়া অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা হিসেবে ২০টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী এই নারী।